দেশ পরিচালনায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ : পেশাজীবিদের সভায় বক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৫ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৭ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ বিনাভোটের সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊধর্বগতি প্রতিরোধ, সরকার ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের সীমাহীন দুর্নীতি-অনাচার-লুটপাটের অবসানসহ ১০ দফা দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি গণমিছিলের আয়োজন করেছে। বিএনপির এ গণমিছিল সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) সভাপতি কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জি কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব জাকির হোসেন, জিয়া পরিষদের আব্দুল্লাহিল মাসুদ, সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাব ঢাকা উত্তরের সভাপতি ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গোলাম হাফিজ কেনেডি, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, ইঞ্জিনিয়ার এবিএম রুহুল আমিন আকন্দ, ইঞ্জিনিয়ার সাখাএয়াত হোসেন, মির্জা মোশাররফ হোসেন লিটন, জিয়াউল হায়দার পলাশসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমান উল্লাহ আমান বলেন, দশ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল সর্বাত্মকভাবে সফল করতে হবে। সেদিন রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমাগম ঘটাতে হবে। কারণ আজকের সংকট শুধু বিএনপির সংকট নয়। এই সংকট সমগ্র জাতির সংকট। বর্তমান স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারকে হটাতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপির গণজোয়ার ঠেকাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আমদের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সহ অনেক নেতাকর্মীকে তারা অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে।
আমান বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদেরকে রুখতে পারবেনা। আসুন আমরা এই সরকারের হাত থেকে দেশ ও সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য ৩০ ডিসেম্বরের যুগপৎ কর্মসুচি সফল করি।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল সফল করতে জনগণের সাথে পেশাজীবিদের সম্পৃক্ততা তৈরি করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এসরকারের আমলে পেশাজীবিরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত। ভিন্নমতের হাজার হাজার পেশাজীবীকে চাকরিচ্যূত করা হয়েছে। বহু পেশাজীবিকে গুম ও খুন করে হয়েছে।মামলা দিয়ে পেশাজীবিদের ঘর ছাড়া, বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। তাই আগামী ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলে পেশাজীবিদের ঐক্যবদ্ধভাবে শামিল হতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মীকে ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে।’
ডাক্তার জাহিদ বলেন, এই নিশি রাতের সরকার ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সকল অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে। জনগণ আজ ভোট দিতে পারে না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনীতি আজ বিপর্যস্ত সেই সাথে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সেই সাথে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত এবং হত্যা, গুম প্রতিবাদে ৩০ ডিসেম্বরের এই কর্মসূচি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিশ্চিত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ। পেশাজীবিদেরও জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হতে হবে। পেশাজীবি জনতা একতা গটে তুলে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় দিতে হবে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশে চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়েছে। মানুষের জান মাল ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। দেশ মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একদিকে মানুষ না খেয়ে মরছে অন্য দিকে সরকারের লোকেরা দুর্নীতি ও লুটের টাকা দিয়ে বিদেশে সেকেন্ড হোম কিনছে। এমনি পরিস্থিতিতে দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। এখন আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্ন। গণতন্ত্র নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। ন্যায় বিচার নেই। আদালত চলছে সরকারের ইশারায়। প্রতি পদে পদে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এটা করে। এটা তাদের গুণ। তারা ভয় দেখিয়ে শাসন করে।
তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে আমাদের গণমিছিল সফল করতে হবে। মামলা-হামলা গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। পেশাজীবীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন বেগবান করতে হবে। অতীতেও পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এখন শুধু তারেক রহমান বা বিএনপির অস্তিত্বের প্রশ্ন নয়, আজকে গোটা জাতির জন্য অস্তিত্বের লড়াই। যদি গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ফিরে পেতে চাই, তাহলে যেকোনো মূল্যে ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিল সফল করতে হবে।