আওয়ামী লীগের অপরাজনীতি থেকে বিদেশীরাও নিরাপদ নয় : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২০ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আটক নেতা-কর্মীদের সাথে কারাগারে ‘অমানবিক’ আচরণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘কারাবন্দি দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্য়ায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হচ্ছে। নিশিরাতের সরকারের সাজানো মিথ্যা মামলায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ সাবেক মন্ত্রী ও এমপিরা কারাগারে ডিভিশন পাওয়ার কথা থাকলেও শুরুতে তাদের ডিভিশন দেয়া হয়নি। এমনকি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদ অত্যন্ত অসুস্থ। তাকেও ডিভিশন দেয়া হয় নাই। বীরমুক্তিযোদ্ধা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে দেয়া হয়নি ডিভিশন।”
‘‘শীর্ষ নেতাদের আটকের পর চব্বিশ ঘণ্টার বেশি সময় তাদের লক-আপে রাখা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃত অধিকাংশ নেতাকর্মী হৃদরোগ, ডায়াবেটিকসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত থাকলেও তাদের ওষুধপত্র পর্যন্ত কারাগারে দিতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের প্রয়োজনীয় কাপড় চোপরও কারাগারে তাদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কারাবন্দিদের পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কারাফটকে নিয়ে গেলে কারা কর্তৃপক্ষ তা ফিরিয়ে দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, ‘‘আটককৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা মিথ্যা সাজানো মামলায় রাজবন্দী হলেও তাদের সঙ্গে আচরণ করা হচ্ছে চিহ্নিত খুনি ও দুদর্ষ আসামির মতো। যা কারাবিধি ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন। আমরা কারাবন্দি দলের শীর্ষ নেতাসহ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এমন ঘৃন্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদেরকে কারাবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য চিকিতসার সুযোগসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
১০ ডিসেম্বরের ঢাকা সমাবেশকে ঘিরে গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সাথে নেতা-কর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪‘শ নেতাকর্মী গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে গভীর রাতে আটক করা হয়।
‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হেনস্তার ঘটনার নিন্দা’
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ‘নিরাপত্তা’ বিঘ্নিত হওয়া ঘটনা নিন্দা জানিয়ে এজন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
গতকাল বুধবার সকালে তেজাগাঁওয়ের শাহিনবাগে ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ও ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির বাসায় গিয়ে আরেকটি সংগঠনে নেতাদের তোপের মুখে পড়েন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
প্রিন্স বলেন, ‘‘এটা খুবই দূঃখজনক ঘটনা। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের যে অপরাজনীতি সেই অপরাজনীতি থেকে বাংলাদেশের কেউ তো নয়ই, বিদেশীরা আজকে নিরাপদ নয়। এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।”
‘‘এই ঘটনার পরপরই গতকালকে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী যেভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রমাণ করে এই ঘটনার সাথে তারা জড়িত। তারা উস্কানি দিয়ে সেখানে লোক পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী গাড়ির ওপরে তারা আঘাত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যিনি প্রতিনিধি অ্যাম্বেসেডর বা রাষ্ট্রদূত তাকে সেখানে হেনস্তা করা হয়েছে। এর আগেও একবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের পতাকাবাহী গাড়িতে এই সরকারের নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছিলো- এই কথা কেউ ভুলে যায়নি।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, এই ঘটনার মধ্য দিযে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হবে।বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই, এখানে যে একটা অপশাসন চলছে সেটাই আরো ফুটে উঠবে।”
‘নিখোঁজ আবদুর রহিমের সন্ধান দাবি’
প্রিন্স বলেন, ‘‘ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিমকে সরকার বহুবার তুলে নিয়েছিলো, তার ওপর নির্মম অত্যাচার করেছিলো, গ্রেফতার করেছিলো, তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মিথ্যা মামলা সরকার দিয়েছিলো। সেই আবদুর রহিমকে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে আনুমানিক রাত ৮টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
‘‘এই সংবাদ সম্মেলনে আবদুল রহিমের পিতা, মাতাসহ পরিবারের সদস্যরা আছেন। তারা গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তারা একবার থানায় দৌড়াচ্ছেন, একবার ডিবি অফিসে যাচ্ছেন, আরেকবার জেলখানায় যাচ্ছেন কোথাও কেউ আবদুর রহিম খোঁজ তাদেরকে দিচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে আবদুর রহিমকে জনসমক্ষে হাজির এবং তাকে তার পরিবারের কাছে নিঃশর্তভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘‘গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ইশরাক হোসেনের বাসায় যখন পুলিশ ও সাদা পোষাকে সদস্যরা তল্লাশি করে সেই সময়ে পুলিশের গাড়িতে স্থানীয় লোকজন আবদুর রহিমকে দেখতে পেয়েছে তাদের কাছ থেকে আমো এই তথ্যটি পেয়েছি।আবদুর রহিমের মাতা আবেদা খানম গত ১২ ডিসেম্বর ওয়ারি থানায় সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন যে, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার ফোন খোলা থাকলেও তার ফোন রিসিভ কেউ করেন নাই এবং ১৩ ডিসেম্বর থেকে ফোনটি বন্ধ আছে।।”
‘‘ডিবি অফিস থেকে যারা ছাড়া পেয়েছে তারা আবদুর রহিমের পিতাকে জানিয়েছে যে, আবদুল রহিম ডিবি অফিসে আছে। কিন্তু ডিবি অফিসে এটা স্বীকার করছেন না। তার ওপরে নির্মম অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে আবদুল রহিমের পিতা-মাতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আবদুল রহিম রয়েছে।”
এছাড়া গত ছয়দিন ধরে নিখোঁজ নেত্রকোনা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আতাউর রহমানের সন্ধান দাবি করেন প্রিন্স।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক তা আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী আবুল বাশার, তাইফুল ইসলাম টিপু, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আমিরুজ্জামান শিমুল, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, কামরুজ্জামান দুলাল ‘নিখোঁজ’ ছাত্র দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিমের পিতা আবদুল হাই ভুঁইয়া, মা আবেদা খানম, ভাই আবদুল হামিদ, আবদুর রহমান, আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, আশিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।