বিদেশি মিডিয়ার চোখে বিএনপির সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫০ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৪ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধাক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে শনিবার ঢাকায় বিরোধী দল বিএনপির বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এমন খবর দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিদেশি মিডিয়া। এর মধ্যে ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস, বার্তা সংস্থা এএফপি, স্ট্রেইটস টাইমস, এনডিটিভি, বিবিসি বাংলা, সিএনএন প্রভৃতি।
হিন্দুস্তান টাইমসের শিরোনাম- ‘‘বাংলাদেশ অপোজিশন মাউন্টস হিউজ প্রটেস্ট ইন ঢাকা : ‘শেখ হাসিনা ভোট থিফ’। এনডিটিভির শিরোনাম- ‘ম্যাসিভ প্রটেস্ট ইন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল এগেইনস্ট শেখ হাসিনাজ গভর্নমেন্ট’। এএফপির শিরোনাম- ‘বাংলাদেশ অপোজিশন মাউন্টস হিউজ প্রটেস্ট ইন ক্যাপিটাল’। হিন্দুস্তান টাইমস তার প্রতিবেদনে লিখেছে, নতুন নির্বাচন দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় সমবেত হন। বিবিসি বাংলার শিরোনাম : ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের নানা ধরনের বাধা পেরিয়ে অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে বিএনপির ঢাকা সমাবেশ, সিএনএনের শিরোনাম : নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করতে সংসদ ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ঢাকার রাস্তায় নেমেছে।
শনিবার রাজধানী ঢাকায় উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীরা আগের নির্বাচনে ‘ভোট চুরি’ নিয়ে স্লোগান দেন। সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে বিরোধী দলের শীর্ষ দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দল দেশজুড়ে যখন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে বিক্ষোভ করছে, তখন তাদের র্যালি থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহে এরই মধ্যে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিবিসি বাংলা : ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের নানা ধরনের বাধা পেরিয়ে অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে বিএনপির ঢাকা সমাবেশ। এই সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকায় জড়ো হয়েছেন। তবে সমাবেশের আগেরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস গ্রেফতার হওয়ার পর কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল সন্দেহ। এই সমাবেশে সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিসহ ১০ দফা ঘোষণা দেয় বিএনপি নেতারা।
সিএনএন : নতুন নির্বাচনের পথ তৈরি করতে সংসদ ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ঢাকার রাস্তায় নেমেছে। রাজধানীতে গণবিক্ষোভটি বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল, যা ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দাম এবং জীবনযাত্রার ব্যয় মোকাবিলায় হাসিনাকে ব্যর্থতার জন্য অভিযুক্ত করে। শনিবারের এই প্রতিবাদ বাংলাদেশে বিক্ষোভের ঝড়ের মধ্যেই আসে, যেখানে হাসিনাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয় এবং নতুন নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। শুক্রবার দলের মহাসচিব মির্জা আলমগীরসহ বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষ আরও তথ্য না দিয়ে জানিয়েছে, আলমগীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। বুধবার রাজধানীতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় অন্তত একজনের মৃত্যু হয়।
বিএনপির একজন কর্মকর্তা শনিবার দাবি করেছেন, এদিনের র্যালিতে যোগ দিতে সকালের মধ্যে সমাবেশস্থলে যোগ দেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে মিডিয়া সেলের আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহিরুদ্দিন স্বপন বলেছেন, আমাদের প্রধান দাবি হলো- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মূলত বার্তা সংস্থা এএফপির রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে খবর পরিবেশন করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
এএফপি আরও বলেছে, এদিন শহরের প্রবেশপথগুলোতে চেকপয়েন্ট বসায় পুলিশ। বিস্তৃত মেট্রোপলিটন শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকার রাস্তাঘাট স্বাভাবিক সময়ে যানজটে আটকে থাকে। সেই রাস্তাগুলোতে এদিন হাতেগোনা সাইকেল, রিকশা ও কার চলাচল করতে দেখা গেছে। বিরোধী বিএনপির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, সরকার অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে, যাতে মানুষজন সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন। স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা।
এনডিটিভি লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, নতুন নির্বাচন দাবিতে শনিবার ঢাকায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মিটিংয়ে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় এক লাখ সমর্থক। গোলাপবাগ মাঠে আয়োজিত এই র্যালি আশপাশের সব সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভেই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সাত জন এমপি। পার্লামেন্টে এই দলটির আসনই আছে সাতটি। ফলে পার্লামেন্ট পরিণত হবে ব্যাপকভাবে রাবার স্ট্যাম্পে। এখানে এমনিতেই শেখ হাসিনার দলের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা সরকারগুলো। দেশীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। ফলে খাদ্য আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। খাদ্য ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে র্যালিতে যোগ দিয়েছিলেন অটোরিকশাচালক রাসেল মিয়া। তিনি বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির ফলে তার পরিবারের দিনে তিনবারের খাবার সরবরাহে লড়াই করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিষ্পেষণের শিকার আমি। যেসব মানুষ আমার এই পরিণতির জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমি এখানে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশে আছে অর্ধডজন বেসরকারি টেলিভিশন। তাদের কেউই এই ইভেন্ট সরাসরি সম্প্রচার করেনি। এতে সংশয় বেড়েছে যে, কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সম্প্রচার না করতে চাপ দিয়েছে।