বাধা ডিঙিয়ে ঢাকার সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:০৭ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সরকার হটানোর ‘যুগপৎ আন্দোলনে’ ১০ দফা ঘোষণা করে এই দাবিতে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আজ শনিবার (১০ ডিসেম্বর) গোলাপবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে আড়াই মাসের কর্মসূচি শেষ করে নতুন কর্মসূচি দিলো বিএনপি। সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়, শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়।
এই সমাবেশ ঠেকাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দেশ্যব্যাপী গায়েবি ও মিথ্যা মামলা গ্রেফতারের হিড়িক চলে। গতকাল গণপরিবহন বন্ধ করে রাখা, লঞ্চ ও নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা, পথে পথে পুলিশি তল্লাশির নামে হয়রানি, ক্ষমতাসীন দলের নেতকর্মীদের সশস্ত্র পাহারা ও ভয়ভীতি ডিঙিয়ে সমাবেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামে। মাঠ ছাড়িয়ে সায়েদাবাদ থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এর আগে গোলাপবাগে সমাবেশের ঘোষণা হলে মিছিলের পর মিছিল এই সমাবেশ আসতে থাকে শুক্রবার রাত থেকেই।
সমাবেশ সফল করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি অভিনন্দন জানান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দুপুরে দলের সিনিয়র নেতারা সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত হলে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোলাপবাগ মাঠ। ‘ফয়সালা হবে কোন পথে, রাজপথে রাজপথে’, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এই গণসমাবেশকে ঘিরে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থায় মোতায়েন ছিলো। সাঁজোয়া যান, জল কামান, প্রিজন ভ্যানসহ বিভিন্ন যান রাখা ছিলো বিভিন্ন সড়ক মোড়ে।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই ১০ দফা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দফা। এই দাবি জনগণের দাবি, এটা মানুষের দাবি। এই দাবি আদায়ে আমরা প্রথম কর্মসূচি আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সকল মহানগর ও জেলা সদরে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও কর্মী হত্যার প্রতিবাদে আগামী ১৩ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সকল মহানগরী ও বিভাগীয় সদরে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি। আমরা এদেশের সকল জনগণকে এই ১০ দফা দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আগামী ২৪ ডিসেম্বরে গণমিছিলের কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এই ১০ দফা উপস্থাপন করার কথা জানিয়ে এই দফাগুলো নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত ও সম্মতি নেয়া হয়েছে বলে বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি। একইসঙ্গে সমমনা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এই ১০ দফার প্রতি একাত্মতা ঘোষণার আহবান জানান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আমরা আশা করি, এই দফার সাথে তারাও একাত্মতা ঘোষণা করবেন। তারা আগামী দিনে এই ১০ দফা আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি আন্দোলন কর্মসূচি আমরা যুগপৎভাবে পালন করব। এই সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য ধৈর্য সহকারে আপনারা আমাদের এই আন্দোলন-কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
১০ দফা : ১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. বেগম খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ সরকারের দমন-পীড়ন ও গণবিরোধী কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, অতীতে ৯টি সমাবেশ করেছি সেগুলোতেও সরকার বাধার সৃষ্টি করেছে। ওই সমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা যাতে সমাবেশে উপস্থিত না হতে পারে তার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সরকারের এতো বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও মানুষ নদী সাতরিয়ে, ভেলাতে পার হয়ে, সাইকেলে, হেঁটে তারা ওইসব সমাবেশ সফল করেছে। আজকেও সরকার এই সমাবেশকে বাধা দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ঢাকা বিভাগের সাধারণ মানুষ এই সমাবেশে অংশ নিয়ে সরকারের রক্তচক্ষুর জবাব দিয়েছে। জনগণের বার্তা যারা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, তাদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, যারা অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তাদের নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়, সেজন্য সারা দেশের জনগণ বার্তা দিয়েছে, এদেশের জনগণ এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অনতিবিলম্বে এই সরকারের বিদায় দেখতে চায়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ভোট হতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আজকের সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে। এজন্য আমি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই। এবং তার সাথে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। আপনারা জানেন আজকে যিনি এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাকে আটক করা হয়েছে গভীর রাতে। উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনারা প্রমাণ করেছেন নেতার জন্য নয় আপনারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন। এই সমাবেশ বানচাল করার জন্য প্রশাসন ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমাদের এক নেতা পুলিশের গুলিতে নিহত ও আরো শত শত আহত করেছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সকল সম্পদ পুলিশ নিয়ে গেছে। পুরো কার্যালয় তছনছ করে গেছে। মোশাররফ হোসেন, এই সরকার এখন জনতার য়ে ভীত। এজন্য আমাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সভা সমাবেশ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেখানেও বাধা। কারণ আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের কথা বলছি। নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা জানি এই বাংলাদেশের মানুষ আর সরকারকে ভয় পায় না। মানুষ এখন শেখ হাসিনার বিদায় চায়। খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছে। এতে মানুষ কি বার্তা দিচ্ছে। মানুষ এখন সরকারকে সরে যেতে বলছে। মানুষ হাসিনা সরকারকে আর দেখতে চাচ্ছে না। মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র নেতৃত্ব চাচ্ছে। এই সরকারকে এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না।
মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক দিক থেকে খাদের কিনারায় পড়ে গেছে। দেশ থেকে ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে গেছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। যার কারণে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাননি। অন্যায়ভাবে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। আজকের সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার উদাহরণ পুলিশ আমাদের পার্টি অফিসে যা করেছে। হাসিনার পক্ষে আর দেশ চালানো সম্ভব নয়। আজকে দেশের জনগণ শুধু গরীব হচ্ছে। ২০ ভাগ গরীব এখন ৪০ ভাগে গিয়েছে। এই সরকারের এখন বিদায় চায় মানুষ। এই সরকারকে এখনি পদত্যাগ করতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা ও তার সরকার এই সমাবেশ বানচাল করতে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। যানবাহন বন্ধ করেছে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। আর তারা (সরকার) কি বলে নয়াপল্টনের সড়কে যদি বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয় তাহলে নাকি জনদুর্ভোগ হবে। অথচ পাঁচদিন যাবত পল্টনের রাস্তা দিয়ে মানুষ যেতে দেয় না, গাড়ি চলে না, দোকান পাট, বিপনী বিতান, মার্কেট বন্ধ। এই দুর্ভোগ কে সৃষ্টি করলো? শেখ হাসিনা, আমরা আগেও বলেছি, আমরা কোনো কাজ রাতে করি না, দিনে করি, আমরা কোনো কাজ গোপনে করি না, প্রকাশ্যে করি। আমরা বলেছি ১০ তারিখে সমাবেশ সেখান থেকে বলবো-আপনারা কোন পথে যাবেন, আর যদি না যান আপনাকে তাড়ানোর জন্য, বিদায় দেয়ার জন্য আমরা সক্রিয়-সচেষ্ট হবো।
ভোট চোর আওয়ামী লীগ সরকার নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে খিচুড়ি চুরি করেছে বলে মন্তব্য করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তারা বলছেন, নয়াপল্টন থেকে তারা চাল-ডাল খিচুড়িসহ অনেক কিছু উদ্ধার করেছেন। আসলে তারা নয়াপল্টন থেকে খিচুড়ি চুরি করেছেন। গণতন্ত্র বন্দি, জনগণ বন্দি, বেগম খালেদা জিয়াও বন্দি- এমন মন্তব্য করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তারেক রহমান আজ সশরীরে না থাকলেও তার ভয়ে কাঁপছে সরকার। সময় হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন।
গয়েশ্বর বলেন, সংসদ থেকে যে সাতজন এমপি পদত্যাগ করেছেন তারা আমাদের এক একটি বোমা। সংসদে নিক্ষেপ করা এগুলোই আমাদের তাজা বোমা। বিভাগীয় সমাবেশকে খেলা হিসেবে উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, আমরা আগে নয়টি খেলায় জয়লাভ করেছি। আজকের খেলায়ও জয় পেয়েছি। কারণ আমাদের এ সমাবেশ ঠেকাতে সরকার মামলা হামলা খুনসহ সবকিছুই করেছে। আজ ঢাকায় সবকিছু বন্ধ কেন- এর জন্য সরকারই দায়ী। রাতে নয়, আমরা সব কাজ দিনেই করি। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তির জন্য আমরা অস্ত্র হাতে লড়তেও জানি।
সিইসিকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর বলেন, এখনও সময় আছে আপনি মানে মানে কেটে পড়েন। রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নতুন একটি নির্বাচন দিন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমি বলেছিলাম ১০ তারিখের গণসমাবেশ থেকে সরকারকে বলে দেয়া হবে আপনারা কোন পথে যাবেন। যদি না যান তবে আপনাদের বিদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ভয় পায় না। তারা যুদ্ধ করতে জানে। তারা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ আবার যুদ্ধ শুরু করেছে। বাংলাদেশের মানুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছে। আর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারাগারে গিয়েছিলেন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ তিনি গণতন্ত্রের জন্য বন্দি। আর সেই বন্দি গণতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভাপতির বক্তব্যের ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফল করে আপনারা আজকে সরকারকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন। এজন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই, সালাম জানাই। একই সঙ্গে বলতে চাই, স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানাতে চাই, এই সমাবেশ শেষ হওয়ার পর আপনারা যার যার বাড়িতে চলে যাবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় এই গণসমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন, উকিল আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম, জাহিদুর রহমান, জিএম সিরাজ, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি নেতা বেনজীর আহমেদ টিটু, দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, ডা. রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, নজরুল ইসলাম আজাদ, কাজী আবুল বাশার, আশরাফ উদ্দিন বকুল, হুমায়ুন কবির খান, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ওমর ফারুক শাফিন, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাইয়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের কাজী মনিরুজ্জামান, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, উলামা দলের মাওলানা আবুল হোসেন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, ঢাকা জেলা সাধরাণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আব্দুল কুদ্দুস, লুতফর রহমান আজাদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, ভিপি জয়নাল আবেদীন, তাজমেরী এস ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, এস এম ফজলুল হক, শাহজাদা মিয়া, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, আজিজুল বারী হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, শফিকুল ইসলাম মিলন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রুকন, মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, নিলুফার চৌধুরী মনি, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ডা. মাজহারুল আলম, মঞ্জুর এলাহি, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, ড. মো. মফিদুল আলম, মাহমুদুল বারী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আফরোজা খানম নাসরীনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের লাখ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিএফইজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রুকন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি বাছির জামাল, রাশেদুল হক, সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজীসহ সাংবাদিক নেতারা সমাবেশে যোগ দেন।
জনসভায় এসে খুশি মুন্নী : ৬ বছরের মুন্নী বাবার সাথে সমাবেশে এসেছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড় ডিঙ্গিয়ে গোলাপবাগ মাঠে যেতে পারেনি। হাতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছবি। তার সাথে ৪ বছরের বোন সুমিরও হাতে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি। মুন্নী তার বাবা মনিরুছ সালেহীনকে বলছে, ‘এখানে বাবা এতো মানুষ কেনো? আমি বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবো। বাবার ভাষ্য, সকাল থেকে মেয়েরা সমাবেশে আসতে কান্না করছিলো। সেজন্য ওদের নিয়ে এসেছি। এতো ভিড় ডিঙ্গিয়ে যেতে পারিনি। সেজন্য ওদেরকে কিছুটা ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বাসায়। মুনিরুছ সালেহীনের বাসা শাহজাহানপুরে। পুরো পথই হেঁটে আসতে হয়েছে। মিছিলের পর মিছিল ডিঙ্গিয়ে এই আসার মধ্যে ওরা আন্দন খুঁজে পেয়েছে। সবুজবাগে থাকে ভ্যান চালক সবুজ মিয়া। মেয়ে তামান্নাকে কাঁধে চড়িয়ে সমাবেশস্থলে এসেছে। সবুজ মিয়া বলেন, চালের দাম বেড়ে গেছে। বাচ্চাদের ঠিক মতো খাওয়ার দিতে পারি নাই। এই সমাবেশ চাল-ডালের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ শুইনা আইছি প্রতিবাদ জানাতে। আর সংসার চালাতে পারি না। মুন্সিগঞ্জ থেকে গতকাল দুপুরে এসেছে সোহরাব আলি।
তিনি বলেন, বিকাল বেলা মাঠে এসেছি। রাতে এখানে চাটাইতে ঘুমাইছি। খিচুরি খাইয়া রাত গেছে, সকালের নাস্তাও করেছি। কিন্তু দেখবেন, এই এলাকার সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিছে। আমি এক মাইল হেঁটেও একটা হোটেল খোলা পাইনি। এইভাবে কি সমাবেশে লোক কমানো যায় ভাই। এতো কষ্ট করে কেনো সমাবেশে আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আমার বিরুদ্ধে ২৫টি মিথ্যা মামলা, আমার ছেলের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা, আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা, আমার বৃদ্ধ মায়ের বিরুদ্ধে ২টি মামলা। এভাবে আর দিন চলে না। সেজন্য সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। এতো কষ্ট করে আসছি কিন্তু সব কষ্ট ভুলে গেছি যে, এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষজন দেখে। এসব হাজার হাজার মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন এমন কোনো লোক নাই যার বিরুদ্ধে মামলা নাই। এতো মানুষ দেখে আমার মন আনন্দে ভরে গেছে, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করে- আমরা মরি নাই, আমরা বেঁচে আছি (আবেগপ্রবণ কন্ঠে)। কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন জোনায়েদ রাব্বানী।
তিনি বলেন, এই শীতের মধ্যে আমরা ঢাকায় এসেছি। পথে পথে পথে কত বাধা, কত চেকিং। কিন্তু পারেনি আমাদেরকে। সুন্দর শান্তিপূর্ণ এই সমাবেশ সরকার করতে দিতে চায়নি। দেখেন আমরা যুবদল বলে লাল টুপি পড়েছি। দলের একজন টুপি দিয়েছে। খুব ভালো লাগছে। দেশে গিয়ে বলব, আমরা করেছি জয়, আমরা জিতবোই। নারায়ণগঞ্জ থেকে ভ্যানে এসেছেন ৫ জন মহিলা। মহিলা দলের সদস্য তারা। তাদের একজন সুফিয়া খাতুন বলেন, একটা ভ্যান ভাড়া করে এসেছি। ভ্যান চালক করিম মিয়াও বিএনপি করে। খুব কম ভাড়ায় এখানে আসছি। ভালো লাগছে খুবই। দেখেন ভাই আমরা কত দুঃখের মধ্যে আছি। তারপর মানুষজন মিছিলের পর মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসছে, সবার কন্ঠে সেøাগান, সবার মনে আনন্দ। কারণ একটাই- আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে সরকারের মুখে ছাই ছুড়ে দিয়েছি। ওরা মিথ্যা কথা বলেছে যে, আমরা নাকি সমাবেশের নামে সন্ত্রাস করবো। এভাবে খাড়া মিথ্যা কথা বলে সরকার মানুষের সঙ্গে দিনেরাতে প্রতারণা করছে। সমাবেশ উপলক্ষে পুরো মাঠ জুড়ে রঙের ছড়াছড়ি। কেউ নীল গেঞ্জি, কেউ সাদা গঞ্জি, লাল গেঞ্জি, সবুজ গেঞ্জি পরিহিত নেতা-কর্মীদের কিছুক্ষণ পর পর করতালি ও মুহুর্মুহু সেøাগানে মুখরিত ছিলো। নেতা-কর্মীরা অনেকের হাতে মোবাইল ফটো তোলার দৃশ্য সকলের মুখে আনন্দ ফুটে উঠেছে। নেতা-নেত্রীর সাথে একটা সেলফি তাদের সবকষ্টকে নাই করে দিয়েছে। রাজশাহী থেকে আসা বাস শ্রমিক আরিফুর রহমান তমাল বলেন, গত কয়েকটি দিন কি কষ্টই না করছি। হোটেল বন্ধ, রাস্তা-ঘাটে সাদা পোশাকে পুলিশ ওত পেতে আছে গ্রেফতার করতে। মাঠে আজকে খন্দকার মোশাররফ স্যার, এমপি রুমিন ফারহানা আর লিডার মিজানুর রহমান মিনু ভাইয়ের সাথে সেলফি তুলেছি- সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে আমার। রাতে বাসে রাজশাহী রওনা হবে বলে জানান তমাল।