যুগপৎ গণআন্দোলনের ১০ দফা দিতে পারে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০২ এএম, ১০ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:০৫ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আজ শনিবার ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ গণআন্দোলনের ১০ দফা ঘোষণা দিতে পারে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। যুগপৎ আন্দোলনে আগ্রহী সমমনা দলগুলোকে এই দাবিগুলোতে ঐকমত্য পোষণ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাতে পারে দলটি। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে প্যাকেজ কর্মসূচি ও সরকারকে আলটিমেটাম দেবে তারা। পর্যায়ক্রমে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে রাজপথের কঠোর ও চূড়ান্ত আন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। এরই সাথে চলতি মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, মহান বিজয় দিবসসহ কিছু কর্মসূচিও পালন করবে দলটি।
গতকাল শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সমাবেশ থেকে গণআন্দোলনের ১০ দফা ঘোষণা করা হবে। এ দফাগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে পৃথক মঞ্চ থেকে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান তাঁরা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণসমাবেশ বিএনপির দলীয় কর্মসূচি। সমাবেশের মঞ্চে তাদের আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গণআন্দোলনের ১০ দফাগুলো হচ্ছে- সংসদ বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজতি ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; বর্তমান কমিশন বিলুপ্ত করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন; খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের সাজা বাতিল এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ ও সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করা; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবার খাতগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; বিগত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কমিশন গঠন; গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতি ঘটনার দ্রুত বিচারসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথে দুর্বার গণআন্দোলনে বিভিন্ন দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে নিজ নিজ ব্যানারে দাবি আদায়ের আন্দোলনের কর্মসূচিও পালন করছেন তাঁরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ ১০ দফা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দফাগুলোর ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন করবেন তাঁরা।
দলীয় সূত্র জানায়, ১০ দফা চূড়ান্ত করতে গতকাল শুক্রবারও গণতন্ত্র মঞ্চ ও ২০-দলীয় জোটের সিনিয়র নেতারা একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে বিএনপির দেওয়া গণআন্দোলনের দফাগুলো নিয়ে চূড়ান্ত চুলচেরা আলোচনা হয়েছে। আজকের সমাবেশ থেকে দফাগুলো ঘোষণার ব্যাপারে তাঁদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সবার মতামতের ভিত্তিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গণআন্দোলনের ১০ দফা চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে দাবিনামাগুলো চূড়ান্তভাবে প্রণয়ন করা হয়। একই সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়া প্রস্তাবনা দেখিয়ে তা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছেন, চলমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সামনে রেখে 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' গড়ার উদ্যোগের পর যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক মাস ধরে সংলাপ হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা এবং দল সমর্থিত আইনজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। মতবিনিময়কালে বিশিষ্টজনের কাছ থেকে দেশের সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ নেন তাঁরা। বিশেষ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের কৌশল ও দাবিগুলোর বিষয়ে মতামত নেয় দলটি।