সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : বাম জোট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২১ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সরকার দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বাম জোটের নেতারা। জনগণের মুক্তির জন্য নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, এই সরকারকে আর সুযোগ দেয়া যায় না। আর কত রক্ত চান? আর কত জীবন চান? অত্যাচারের সীমা আছে। আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি জাহান্নামের চেয়েও খারাপ। গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় রব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি স্যুটকেসে কাপড়-চোপড় আর ওষুধ নিয়ে এসেছি। আপনারা দেখতে চাইলে দেখে যান, আমার গাড়িতে রাখা আছে। জেলখানায় নিয়ে যাবেন? ফখরুলকে নিয়ে গেছেন, আব্বাসকে নিয়ে গেছেন। হাজারো নেতাকর্মীকে জেলখানায় নিয়েছেন।’
আজ শুক্রবার রাজধানীর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার পর সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের। তবে শেষ পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা এ রাজনৈতিক জোটটি।
সংবাদ সম্মেলনে আ স ম আব্দুর রব তার বক্তব্যে নয়াপল্টনে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কী এমন ঘটেছিল যে নয়াপল্টনে বিএনপির পার্টি অফিসের সামনে গুলি করে মানুষ হত্যা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, হাত ভেঙে দেবে। আগুন লাগিয়ে দিবে৷ এটা কী? কোনো ধরনের আচরণ? কোনো ধরনের মন্তব্য? বিএনপি পার্টি অফিস নয় শুধু, একটা রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে যে কোনো অফিস ভেঙে ফেলা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি করে নাগরিক হত্যা করা তো দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকেই ঠেলে দেয়া। আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আমি কোনো কথা শুনি নাই। শুনব না। অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম কোনোদিন সহ্য করি নাই। বাধা দিলে বাধবে লড়াই। জনগণকে জিততে হবে, আমাদের জিততে হবে। জনগণ কোনোদিন পরাজিত হয় না।’
পুলিশ সরকারি দলের নির্দেশে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে আইন ভঙ্গ করার জন্য। সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। তারা অন্য কাউকে ক্ষমতায় আসতে দেবে না। তারা নির্বাচনে বিশ্বাস করে না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি মহাভুল করছেন। আপনার পিতা যে ভুল করেছিলেন তার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আপনিও সেই পথে হাঁটছেন। সংলাপ না করে সংঘাতে যাচ্ছেন। এটা বহুদলীয় গণতন্ত্র হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। রাজনৈতিক দল কী বক্তব্য দেবে সেটা আপনি ঠিক করে দেবেন? কোথায় মিটিং করবে আপনি ঠিক করে দেবেন? এটাকে বহুদলীয় গণতন্ত্র বলে না। আপনি কক্সবাজার থেকে শুরু করে যে কোনো জায়গায় বক্তৃতা দিতে পারবেন। সমাবেশ করবেন। অথচ বিরোধী দল মিটিং করতে পারবে না। কায়দা করে বাকশালের দিকে যাবেন না। শেখ মুজিবের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ভুল থেকে শেখেন। ভুল বাড়াবেন না। বিএনপির ওপর যে অত্যাচার হয়েছে সেটা দেখতে আমরা যাব। আমিও নয়াপল্টনে যাব। আমাদের অধিকার ক্ষুণœ করার কোনো অধিকার আপনার নেই। আপনাকে বাঁচাতে চাই বলে এটা করতে চাই। তা না হলে আপনার আত্মরক্ষা হবে না। পৃথিবীর ইতিহাস দেখলে দেখবেন ফ্যাসিস্টরা কখনো বাঁচেনি। ভুল পথ থেকে সরে না এলে আপনার বিপদ আছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে দাবি করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা যে ভাষায় কথা বলেছেন এটাকে আমি বেয়াদবি বলব। সারাদেশে আগুন জ্বালাবার কথা যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন সে আগুন নেভাবেন কবে? এটা একটা পুলিশ স্টেট। পুলিশ সিটি। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিও তোলেন তিনি। মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে আমাদের ভিন্ন কর্মসূচি ছিল। আমরা প্রেস রিলিজ দিয়েছিলাম। বিএনপি অফিস যেভাবে ক্রাইম জোন ঘোষণা করে আটকে দিয়েছে, সবাই একসাথে বিএনপি অফিসে দেখতে যেতে চেয়েছি। রাত ৩টায় যে ঘটনা ঘটেছে (ফখরুল-আব্বাসকে ডিবি পুলিশের তুলে নেয়া) এর চেয়ে নিন্দাজনক আর কিছু নেই।’