সরকার হটাতে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামবে গণতন্ত্র মঞ্চ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫২ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৬ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সরকার হটাতে ‘দুই-একদিনের মধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামবে’ গণতন্ত্র মঞ্চ।
আজ বুধবার দুপুরে বিএনপি বৈঠকের পর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এক সংবাদ ব্রিফিঙে একথা জানান।
তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর করে নেবো এবং একে অগ্রসর করবার জন্য যে দুইটা ভিত্তি যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলবার জন্য আরো ব্যাপকভাবে এই ইস্যুর ওপরে ঐক্যবদ্ধ থাকবার জন্যে আরো আলোচনা চালিয়ে যাবো। আন্দোলনের ফিজিক্যাল যে অংশ অর্থাৎ শারীরিকভাবে সেই আন্দোলনকে গড়ে তুলবার জন্য আমরা একটা লিয়াজোঁ কমিটি করব। আমরা আশা করি, ১০ তারিখের আগেই এই লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে এবং লিয়াজোঁ আরো বেশি ঘন ঘন নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তা বলে আমাদের যুগপৎ ধারার আন্দোলনকে জোরদার করার চেষ্টা করবে। আগামীতে আমরা আশা করি মাঠে আমাদেরকে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনে পাবেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজকে আমরা একমত হয়েছি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করার জন্য এবং যুগপৎ আন্দোলন করার জন্য। ১০ ডিসেম্বরের আগেই আমরা এই লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করবো। আমাদের এই ঐকমত্য অটুট থাকবে।
তিনি বলেন, এই আলোচনায় আন্দোলনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবারের আন্দোলনে আমরা সফলকাম হতে পারলে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব। যাতে কেউ ক্ষমতায় গিয়ে এরকম স্বৈরাচার না হতে পারে। শাসনতন্ত্রের কথা বলে নির্বাচন না করে যাতে স্বৈরাচারের জন্ম না হয় সে ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। আমরা সেইরকম পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবে। সকাল সাড়ে ১১টায় তোপখানা রোডে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবনে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির নেতাদের বৈঠক শুরু হয় চলে দেড়টা পর্যন্ত। বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। প্রতিনিধি অন্য সদস্যরা হলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মান্না ছাড়া অন্যরা হলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাইফুল হক, বহ্নি শিখা জামালী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, হাবিবুর রহমান রিজু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, ইমরান ইমন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারি, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান এবং নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার। ১০ ডিসেম্বর প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ১০ তারিখকে কেন্দ্র করে সরকার ঢাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আজকে এই সভায় আমরা সরকারের এই আগ্রাসী আক্রমনাত্মক সহিংস তৎপরতা তার আমরা নিন্দা জানিয়েছি এবং সরকার ধারাবাহিকভাবে যে উসকানী তৈরি করছে অর্থাৎ সরকারের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এটা তারা গণ আতঙ্ক তৈরি করে ১০ তারিখে যাতে জনসমাগম কম হয় তার জন্য যা যা তাদের অপতৎপরতা সব কিছু অব্যাহত রেখেছে। আমরা এটার নিন্দা জানিয়েছি। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ১০ তারিখে যে কর্মসূচি তাকে রাজনৈতিকভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ সমর্থন দিয়েছে। বাস্তবতা হলো তারা মাঠে আছেন, গণতন্ত্র মঞ্চ মাঠে আছে। সুনির্দিষ্টভাবে কিভাবে এই যুগপৎ ধারা যৌথভাবে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারকে বিদায় নেয়ার ক্ষেত্রে আন্দোলনটাকে জোরদার করব। ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশে যদি কোনো সহিংসতা সৃষ্টি হয় তার জন্য সরকার, সরকারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ঢাকার মিটিংকে নিয়ে তারা (সরকার) এতো ভয় পেয়েছে যে, নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঘোষণা দিচ্ছে যে, তারা আমরা আসার আগে পুলিশ দিয়ে দখল করে নেবে। তো পুলিশ দিয়ে দখল করে তো কেউ টিকতে পারে না। আইয়ুব খানও টেকে নাই, ইয়াহিয়া খানও টেকে নাই, এরশাদও টেকে নাই। জনগণের কাছে পুলিশ-টুলিশ কিছু না। আমরা ইনশাল্লাহ নয়া পল্টনে মিটিং করবো ১০ তারিখ। জনগণই সেটা দখল করে রাখবে। সেখানে পুলিশ থাকবে, জনগণই থাকবে-এটা আমাদের প্রত্যাশা, আমরা বিশ্বাস করি এটাই হবে।
এদিকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সমমনা সকল রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে জাতীয় ঐক্যের রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। এর আগে আজ-কালের মধ্যেই সব রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করবে দলটি।
সূত্র জানিয়েছে, রূপরেখা ঘোষণার জন্য ৭ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলোকে, ২০ দলীয় জোটের শরিক দল এবং সমমনা অন্যান্য দলগুলোকে গুলশান কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে এ রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত, বিএনপির দেয়া জাতীয় ঐক্যের ২৭ দফা রূপরেখা ও সরকার পতন আন্দোলনের ১০ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন, সরকারও শাসনব্যবস্থা বদলের ১৪ দফা দাবি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের এই চৌদ্দ দফার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলও একমত পোষণ করেন।