১০ ডিসেম্বর থেকে মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৮ পিএম, ৬ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
পুলিশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ‘হবেই’ উল্লেখ করে এ ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে না থাকার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে রাউন্ড টেবিল আলোচনায় তিনি এই আহবান জানান। বিএনপির উদ্যোগে গুলশানে হোটেল লেক শোরে ‘ভায়োলেন্স এন্ড পলিটিক্স অব ব্লেমিং’ শীর্ষক এই গোল টেবিল আলোচনা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে সন্ত্রাসের বিভিন্ন ঘটনার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ ডিসেম্বর নিয়ে কোনো দ্বিধা রাখবেন মনে। ১০ ডিসেম্বর অবশ্যই ঢাকায় সমাবেশ হবেই। এই সমাবেশ থেকে নতুন স্বপ্ন দেখবে মানুষ, এই সমাবেশ থেকে মানুষ নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আরো তীব্রভাবে নামবে এবং ভয়াবহ যে আমাদের ওপর দানব যারা চেপে বসে আছে তাকে পরাজিত করে জনগণের সরকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সেই কাজ তারা করবে।
তিনি বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা এই সরকারের পতন চাই, আমরা সংসদ বিলুপ্ত চাই, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর চাই, আমরা নতুন একটি নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সকলে গ্রহণ করবে সেই নির্বাচন আমরা চাই। আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি আগেই বলেছেন, আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব যে জাতীয় সরকার আমাদের রাষ্ট্রকে নতুন করে সমস্যা চিহ্নিত করে সাজাবে। আমরা আজকে সফলতার আশা নিয়ে শেষ করতে চাই।
‘সরকার হীন চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের দাবি নিয়ে মাঠে নামছে তাকে বন্ধ করার জন্য সরকার হীন চক্রান্ত আবার শুরু করেছে। আমরা ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, বিভিন্নভাবে খবরও পেয়েছি যে, প্রায় ২শটা নাকি বাস রেডি করা হয়েছে পুড়িয়ে দেয়ার জন্য। এটা অসমর্থিত কিছু সূত্র থেকে পাওয়া খবর। আমরা শুনেছি ইতিমধ্যে কিছু কিছু লোককে, ইতিমধ্যে কিছু আলামতও আমরা পেয়েছি যে, ছাত্রলীগ, য্বুলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসীকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, থানায় থানায় নামিয়ে দিয়ে সেখানে তারা সন্ত্রাস প্রতিরোধ করবে। আমরা তখন থেকে এ ব্যাপারে সচেতন হয়েছি, সজাগ হয়েছি। যে কারণে আজকে এই সেমিনারটি অনুষ্ঠান করা হয়েছে আমাদের সুধী সমাজকে, সুশীল সমাজকে, রাজনৈতিক দলগুলো এবং কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দকে জানাতে চাই যে, সরকার আবার সেই পুরনো খেলা, সেই উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য আবার কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। একটা বিখ্যাত গান আছে যে, গানটা আপনারা অনেকে শুনেছেন যে গানটাতে বলা হচ্ছে যে, ‘রাইজ আপ স্ট্যান্ড আপ’। এখন উঠে দাঁড়াতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, জনগণের ম্যান্ডেট এদের কাছে নেই। এরা ১৫টি বছর ধরে মানুষের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়ে গেছে। আমাদের ৬শ নেতাকর্মীকে গুম করে দিয়েছে। মানুষ আজকে এই ভয়াবহ দানব থেকে মুক্তি চায়।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ পাচার, মেগা প্রজেক্টের নামে অর্থ লুটসহ বিভিন্ন খাতে অর্থনীতিকে ফোকলা করার কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, সরকার চুরি-মারী করছে এখন জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করছে। আর সমানে মুখে বলছে যে, পৃথিবীতে সংকট আছে, বাংলাদেশে সংকট নাই। এখন বলেছে যে, বাংলাদেশে খুব চমৎকার একটা অবস্থা বিরাজ করছে, অর্থনৈতিক কোনো সংকট নাই। এই যে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা, জাতিকে সবসময় একটা অন্ধকারের মধ্যে রেখে দেয়া, এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের শাসনকে আরো স্থায়ী করতে চায়, স্থায়ী ব্যবস্থা করতে চায়। এর জন্য এর বিরুদ্ধে আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়েছি। মানুষ আমাদের চেয়ে আগে আছে- এটা অত্যন্ত সত্য কথা। যে মানুষটি সাঁতরে নদী পার হয়ে সমাবেশে আসে, যে বরিশালে তিন দিন খোলা আকাশের নিচে থেকে সমাবেশ উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বলে যে, আমার বাবা দুইটা ছেলেমেয়ে ঠিক মতো খেতে দিতে পারি না। ভেবেছি এই খালেদা জিয়ার এই সমাবেশে এসে যদি কোনো পরিবর্তন হয়। মরিয়ম বেগমকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল আপনি কি বিশ্বাস করেন পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেছেন, জানি না আল্লাহ বলতে পারেন, তবে চেষ্টা তো করতে হয়। আমরা বিশ্বাস করি মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে অবশ্যই তারা সফল হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন দেশের স্বার্থে পরিবর্তন নিয়ে এসে এই রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থেই আমরা যে কারণে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম সেই লক্ষ্যে একটা বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুলের যৌথ সঞ্চালনায় এই গোল টেবিল আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মীর মোহাম্মদ নাছির, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বরকত উল্লাহ বুলু, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, মো. আবদুস সালাম, ড. এনামুল হক চৌধুরী, ড. শাহিদা রফিক, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুল কাইয়ুম, বিজন কান্তি সরকার প্রমুখ।
এছাড়াও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান ও এসএম শাহাদাত, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ডিএল’র সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, এনডিপির ক্বারী আবু তাহের, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, ইসলামী ঐক্যজোটের অধ্যাপক আবদুল করিম, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, মহিলা দলের নায়াব ইউসুফ, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
গোলটেবিল আলোচনায় রাশিয়া, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন ডা. সায়ন্থ সাখাওয়াত। এছাড়া গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা সহিংসতার ওপর ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
জি-নাইন সাধারণ স¤পাদক ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্থ প্রবন্ধে বলেন, ক্ষমতা দখলে রাখতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগের দ্বিধারী অস্ত্র: বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতান্ত্রিক অধিকার, বিশেষ করে ভোটাধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ একদলীয় স্বৈরশাসনের যে পথ বেছে নিয়েছে, মূলত তা থেকেই দেশে আজ এই অচলাবস্থার উদ্ভব। ২০০৮ সালে প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০১১ সালে জোরপূর্বক ক্ষমতায় টিকে থাকার অশুভ উদ্দেশ্যে দলটি সংবিধান অনুমোদিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান বাতিল করলে এই সংকটের শুরু হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই আওয়ামী লীগই ১৯৯৪-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে ১৭০ দিনের সহিংস আন্দোলনে লিপ্ত ছিল। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলসমূহ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের ডাক দেয়। বিএনপির এই ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ডাকে কোনো কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু তারা এই গণদাবি উপেক্ষা করে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতিতেই একপেশে প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের ১৫৩ জনকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য দেখানো হয়। সরকার গঠনের জন্য দলীয় ১৫১ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের প্রয়োজন হয়। যা হোক জনগণ সেই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করে। এই নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ কেবলমাত্র নির্বাচনী রেওয়াজ মেনে চলার অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই নতুন নির্বাচন হবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং নতুন নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করলে ২০১৮ সালে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল তার অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এই নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট কারচুপির ঘটনা ঘটে। নিশিরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচন খ্যাত ২০১৮ সালের সেই নির্বাচনের আগের রাতে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যালট বক্স ভর্তির অভিযোগ ওঠে। সকল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সেই নির্বাচনকে প্রহসন হিসেবে অভিহিত করে।
‘গণতন্ত্রের মৃত্যু : বাংলাদেশ’ শিরোনামে দি ইকোনমিস্ট লিখেছে, ‘পরিষ্কারভাবে এটি একটি জালিয়াতির নির্বাচন’। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি অংশগ্রহণমূলক স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিরোধী রাজনৈতিক জোট বিএনপির নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে। এই হরতালের সময় আওয়ামী লীগ সরকার ভয়াবহ নাশকতার আশ্রয় নেয়, নিজেরাই গণপরিবহনে বোমাবাজি ও আগুন সন্ত্রাস করে এর দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চেষ্টা করে। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, এই আগুন সন্ত্রাসের মূল হোতা আওয়ামী লীগ নিজেই। এ বিষয়ে প্রকাশিত পুস্তিকায় এসব ঘটনার সচিত্র তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পুস্তিকাটি ইতোমধ্যে আপনাদের হাতে পৌঁছেছে বলে আমার বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ নেতারাই স্বীকার করেছেন যে, দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার অনুগ্রহ লাভে কিছু নেতা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে বিএনপির ওপর এর দায় চাপায়। ২০১৭ সালের ২৩ মে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদ প্রশাসক মাইদুল ইসলাম এমন একটি ঘটনার কথা জানান।
মাইদুল বলেন, ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর, ঢাকার শাহবাগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও বরিশাল-৪ হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ ‘বিহঙ্গ পরিবহন’ নামে নিজস্ব বাসে আগুন দিলে বাসের চালকসহ ১১ জন নির্মমভাবে আগুনে পুড়ে মারা যান। কিন্তু এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়নি। উল্টো বিএনপির ওপর এর দায় চাপিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বলা বাহুল্য, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখনও এর নেতাকর্র্মীরা নিরপরাধ শিশু, নারী-পুরুষদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে; লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সাপের মতো হত্যা করে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের লাশের ওপর নৃত্য করে নিজেদের পৈশাচিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে। শুক্রবার, ৪ জুন, ২০০৪, রাত ৮:৩০ টায়, রাজধানী ঢাকার শেরাটন হোটেলের সামনে, পরের দিন নির্ধারিত বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হরতাল কর্মসূচি উপলক্ষে বিআরটিসির একটি যাত্রী ভর্তি ডাবল ডেকার বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে শিশু, নারী ও পুরুষসহ ১১ জন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অন্যরা জীবনের জন্য পঙ্গু বা ভয়ংকর স্মৃতি বহন করে। পরে তদন্তে জানা যায়, গান পাউডার ছিটিয়ে বাসটিতে আগুন লাগানো হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন বর্বরতা আগে কখনো দেখা যায়নি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এই ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন। এক-এগারোর সরকারের সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম তাদের কয়েকজন নেতার এ ধরনের নৃশংসতায় সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন।
এ ঘটনাপ্রবাহ থেকেই প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাসকে দ্বিধারী তরবারি হিসেবে ব্যবহার করছে। যখন বিরোধী দলে ছিল তখন আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে দলটি। আর যখন ক্ষমতায়, তখন দলীয় নেতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক এ আগুন সন্ত্রাসের দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে বিএনপির ভোটাধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া দলটি। গণতন্ত্রের সপক্ষের কর্মীদের দমন করতে এরা মিথ্যা মামলা, গণগ্রেফতার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালাচ্ছে কেবল নিজেদের ফ্যাসিস্ট শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে। আগুন সন্ত্রাসের মতো আওয়ামী নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপরও নৃশংস হামলা চালায়, তাদের উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করে, জমি এবং ঘরবাড়ি দখল করে শুধু বিএনপির ওপর এর দায় চাপানোর রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাম সামনে এসেছে। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা এ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত এবং মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল যে ২০১৫ সালে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তাতে তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি, ব্যবসা এবং বাড়িঘর দখলে সরকারি ব্যক্তিদের যোগসাজশের অভিযোগ করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের শ^শুর ও আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম আওয়ালসহ অন্যরা। বিরোধী মতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, জোরপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালিয়ে এবং তাদের অপকর্মের দায় বিরোধী দলের ঘাড়ে চাপিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করা আওয়ামী লীগের পুরাতন খেলা।
আমাদের আশঙ্কা, দেশব্যাপী বিএনপির শান্তিপূর্ণ ব্যাপক প্রতিবাদ সমাবেশ দেখে এই ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের সেই পুরনো কাপুরুষোচিত খেলার পুনরাবৃত্তি করতে আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুর, অফিসের সামনে বোমা পেতে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে থানায় থানায় মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করতে শুরু করেছে। আগস্ট ২০২২ হতে ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে ৩২৮টি, গ্রেফতার করেছে ৯৯৭ জনকে এবং মোট আসামি করা হয়েছে ৩৪,৫৫৩ জনকে (যেখানে নাম ধরে আসামি করা হয়েছে ১০,৩৮০ জনকে এবং বেনামে আসামি করা হয়েছে ২৪,১৭৩ জনকে)। এছাড়া হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মী এখনো জেলে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই আন্দোলন যত বেগবান হবে তাদের এই ফ্যাসিস্ট কর্মকান্ড আরো বেশি বেগবান হবে বলে আমাদের আশঙ্কা। আওয়ামী লীগের হোতারা ২০১৪-১৫ সালের মতো আবারও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করে বিএনপির কাঁধে তার দায় চাপাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আমরা দেশবাসী, গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্ক ও সজাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বা কোনো ধরনের নাশকতা করে জনগণের জানমালের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য আমরা বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সদা সজাগ থাকার আহবান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কোনো ষড়যন্ত্রই জনগণের ভোটাধিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনকে স্তিমিত করতে পারবে না ইনশআল্লাহ। ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হয় না। জনতার বিজয় অনিবার্য।