১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়াপল্টনেই সমাবেশ : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৩ পিএম, ৩০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৯ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, নয়াপল্টনেই সমাবেশ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আগামী ১০ ডিসেম্বর সোহওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি প্রদানের পর আজ বুধবার বিকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি একথা জানান। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পুলিশের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ট্রাকের ওপরে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে জায়গা আপনারা (সরকার) দিতে চান সেই জায়গায় আমরা কমফোর্টেবল নই-খুব পরিষ্কার কথা। চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা, চতুর্দিকে যাওয়ার রাস্তা নেই। একটা মাত্র গেট, যে গেট দিয়ে এক-দুই জন মানুষ ঢুকতে পারে, বেরুতে পারে না। তাই আমরা পরিষ্কার করে আবার বলছি, আপনাদের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে এই নয়া পল্টনে আমাদেরকে ১০ তারিখ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা গ্রহণ করুন, ঢাকায় ১০ তারিখে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সমস্ত ব্যবস্থা আপনারা করুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা আপনাদের দায়িত্ব। তা না হলে সকল দায়-দায়িত্ব আপনাদের। মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২৬ শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। আমরা একমাস আগে আমাদের পার্টির তরফ থেকে ঢাকা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি যে, আমরা নয়া পল্টনের সামনেই আমরা বিভাগীয় সমাবেশটা করতে চাই। আমরা যে চিঠি দিয়েছি এটা ঢাকা বিভাগের সমাবেশ। এটা কোনো জাতীয় সমাবেশ নয়। ঢাকা বিভাগের সমাবেশ করতে আমাদেরকে নয়াপল্টনের এইখানেই জায়গা দেয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। এটা পরিষ্কার কথা। আমরা বার বার বলেছি।
তিনি বলেন, যে যানবাহন জটের কথা বলা হয়েছে এটা খোঁড়া যুক্তি। শনিবার দিন সরকারি ছুটির দিন। সেদিন কোনো রকমের যানবাহনের সেই জট থাকে না। এদের কানে কথা যায় না, এরা বুঝতে চায় না। আগেও বলেছি দেয়ালের লেখা ওরা বুঝতে চায় না, মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে চায় না। সেই কারণে তারা একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই সাজিয়ে সাজিয়ে আর মামলা দেবেন না। শেষ রক্ষা কি হয়? আপনারা দেখেছেন স্যাংশন এসেছে। আবার জনগণের স্যাংশন যদি আসে তাহলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। পরিষ্কার কথা গায়েবি মামলা বন্ধ করুন, হামলা বন্ধ করুন, গ্রেফতার বন্ধ করুন এবং জনগণের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে চলতে দিন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন সারা বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার মানুষের কাছে, ঢাকা বিভাগের কাছে এটা (১০ ডিসেম্বর) একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ যে, ১০ তারিখের সমাবেশকে তাদের সফল করতে হবে। ইনশাল্লাহ সমাবেশ সফল হবে। মানুষের কাফেলা এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। হঠাৎ করে সরকার এতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছে যে, তারা বিভাগীয় সমাবেশগুলোকে বন্ধ করবার জন্য, আন্দোলনকে দমন করবার জন্য তারা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নয়া পল্টনে অতীতে বিভিন্ন সমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে (নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে) বহু সমাবেশ হয়েছে। এখানে জাতীয় সমাবেশ হয়েছে, মহাসমাবেশ হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখানে সভাপতিত্ব করেছেন। ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ হয়েছে। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমাদের জনগণের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার জন্যে, তাদের ভাত, তাদের ভোট, তাদের অধিকারের জন্য আজকে আমরা এই আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনে আপনারা অযথা গত এক মাস ধরে যেভাবে অন্যায়-অত্যাচার-দমনমূলক কাজ করছেন সেই কাজগুলো গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়, রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়। আপনাদের জন্যও ভালো নয়। আপনারা পথ খোলা রাখছেন না। আবারো বলছি, সেইফ এক্সিটের ব্যবস্থা করুন। তা না হলে এদেশের ইতিহাস আপনাদের জানার কথা।
তিনি বলেন, আজকে জনগণ জেগে উঠেছে। এখন এটা বিএনপির আন্দোলন নয়, এটা এখন বেগম খালেদা জিয়ার আন্দোলন নয়, এটা শুধু তারেক রহমানের আন্দোলন নয়। এটা সমগ্র জনগণের আন্দোলন, জনগণের মুক্তির আন্দোলন। তারা (জনগণ) গণতন্ত্র ফিরে চায়, ভোটের অধিকার ফিরে চায়, মানবাধিকার ফিরে চায়। কি বানিয়েছেন দেশটাকে? আজকের পত্রিকায় এসেছে যে, গত কয়েক মাসের মধ্যে শীতালক্ষ্যা, বুডিগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী নদীতে প্রায় সাড়ে ৩শ ডেড বডি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে প্রায় ডেড বডি হচ্ছে ইনজুরড অর্থাৎ তাদের নিহত করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম উনি (অর্থমন্ত্রী) বলেছেন যে, লিখিত দেন ব্যাংকে কোথায় গোলমাল। আরে সারা ব্যাংকই তো লোপাট। ব্যাংক সব লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছেন, ফোকলা করে দিয়েছেন। এটা আমাদের কথা নয়। যে মিডিয়া কথা বলতে পারে না, মুখে তালা দিয়ে রাখে তারা বলছে যে, ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? ওয়াশার এমডিকে নিয়মভঙ্গ করে বেতন-ভাতা প্রদান এবং যে বেশিরভাগ সময় ‘যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন’ ইত্যাদি নানা উদাহরণ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বেআইনি ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে, পুলিশ বাহিনী করছে, অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবহার করছে, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, যুবদলের সাবেক সহ- সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ওলামা দলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলামসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।