শেষ রক্ষা পেতে সরকার পুরানো খেলা শুরু করেছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫০ পিএম, ৩০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
শেষ রক্ষা পেতে সরকার আবারও সেই পুরানো খেলা শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী জালেম সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। তাদের সকল অন্যায় অবিচার অপকর্মের বিচার দেশের জনগণ করবেই। আর যারা এই নিশিরাতের সরকারকে সহযোগিতা করছেন তারা এসব বন্ধ করুন। জনগণের পায়ের আওয়াজ শুনুন। তবে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের অবৈধ মসনদ খান খান হয়ে যাবে। শেষ রক্ষা পেতে সরকার আবারো সেই পুরানো খেলা শুরু করেছে।
আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই নিশিরাতের মাফিয়া সরকার পতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে নিয়ে ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলীয় কর্মসূচিকে বানচাল করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে অসংখ্য ককটেল ফাটানোর অভিযোগে পুলিশের মামলা দায়ের, কিন্তু কেউ ককটেল ফুটতে দেখেনি বা শোনেনি (সূত্র-সমকাল)। কাওরান বাজারে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় আসামি বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু ককটেল বিস্ফোরণের কোনো শব্দ পায়নি এলাকাবাসী (সূত্র-প্রথম আলো)। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় জাপানে থাকা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা গায়েবি মামলার আসামি (সূত্র-ডেইলি স্টার)। সেই পুরনো কায়দায় সারাদেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম মাহবুবকে গতরাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তার কোনো হদিস দিচ্ছে না। এ নিয়ে দল ও তার পরিবার গভীর উৎকন্ঠায় রয়েছে। তাকে ডিবি পুলিশই তুলে নিয়ে গেছে। আমি অবিলম্বে তাকে জনসমক্ষে হাজির করার আহবান জানাচ্ছি। গত রবিবার সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ২০১৮ সালের শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দীন অপুকে দুদুকের একটি ফরমায়েশি ভুয়া মামলায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি প্রচন্ড অসুস্থ। বিএনপির একজন সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থীকে এহেন নিপীড়ন-নির্যাতন-অসম্মান নজিরবিহীন। কোনো সভ্য সমাজে এই ধরনের জুলুম-নির্যাতন-ডান্ডাবেড়ি পরানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘৃণ্য-বর্বরোচিত চরম মানবাধিকার লংঘনের কাজ হতে পারে না। মিয়া নূর উদ্দিন অপু কোনো খুন বা ডাকাতি মামলার আসামি নন। তিনি বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার আসামি। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কারাবন্দিদের জন্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে অনুসৃত যে ন্যূনতম নীতিমালা তৈরি করেছে সেখানকার ৩৩ নং অনুচ্ছেদে ডান্ডাবেড়ি পরানোকে অমানবিক বলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ এবং ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশের হাইকোর্ট বেঞ্চ কোনো আদালতের এজলাসে বিচারাধীন আসামিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলার বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। তাকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে, জামিনও দেয়া হচ্ছে না-যা অমানবিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। আমি অবিলম্বে মিয়া নুর উদ্দিন অপুর মুক্তি প্রদান এবং ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে আদালতে তোলার জন্য দায়ী কারাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আওয়ামী জালেম সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। তাদের সকল অন্যায় অবিচার অপকর্মের বিচার দেশের জনগণ করবেই। আর যারা এই নিশিরাতের সরকারকে সহযোগিতা করছেন তারা এসব বন্ধ করুন। জনগণের পায়ের আওয়াজ শুনুন। তবে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের অবৈধ মসনদ খান খান হয়ে যাবে। শেষ রক্ষা পেতে সরকার আবারো সেই পুরানো খেলা শুরু করেছে।
সারাদেশে হামলা-মামলা-গ্রেফতারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, রাজশাহী জেলাধীন বাগমারা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও গনিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম রঞ্জুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জামিন হওয়ার পরেও গত ২৮ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশরাফুজ্জাহান জাহানকে কারাফটক থেকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-ডেমরা থানাধীন ৬৪ (পূর্ব) নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল এবং সহ-কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির খান, কালিয়াকৈর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে চারটি গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। ঝালকাঠি জেলাধীন রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তালুকদার আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসিম উদ্দিন আকনসহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের ২৬ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৮০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনসহ দঃ বিঃ আইনে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক।
জামালপুর জেলাধীন মেলান্দহ পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম রেনু, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আজিজ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোঃ নবীনসহ ৫ জনকে গত ২৮ নভেম্বর বিকালে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই। পুলিশ নাশকতার বানোয়াট অভিযোগ এনে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। গ্রেফতারকৃত ৫ জনসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। রংপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুসহ ১৭ জন নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগামি ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ পন্ড করার অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বগুড়া গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন, সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নতুনসহ বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম টুকু, কায়দোজ্জামান টিপু, আব্দুর রহিম, সাইফুল ইসলাম, হারুনুর রশিদ হারুন, যুবদল নেতা রুহুল হাসান রুহিন, ছাত্রদল নেতা এম আর হাসান পলাশ, এস এম রাঙ্গা, তৌমিরুল ইসলাম তৌকির, জাকিরুল ইসলামসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর রাতে ৫০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মৃত ও বিদেশ থাকে এমন নেতাকর্মীদেরকেও আসামি করা হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহ আলম এই মামলার ১নং আসামি, তিনি গত ১৫ দিন যাবৎ দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় তার নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে মামলা দিয়েছে ভোটারবিহীন সরকার। গত ২০/১১/২০২২ তারিখে কসবা থানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার গোপিনাথ ইউনিয়ন ও উপজেলার ৪৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে কসবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরিফুল হক স্বপন, পৌর বিএনপির আহবায়ক সালাউদ্দিন শাহীন, সদস্য সচিব আইয়ুম খান, কসবা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মাসুদুর রহমান দিপু, উপজেলা সদস্য সচিব জিয়াউল হুদা শিপন, কসবা উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল ইসলামকে। মিথ্যা মামলার আসামি হারেজ পাঠান এবং ফেরদৌস সরকার হজ¦ব্রত পালনের জন্য মক্কায় অবস্থান করছেন। অথচ তাদেরকেও উক্ত মামলার আসামি করা হয়েছে
কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সূতামূড়ার ৩ জন নেতাকর্মীর বাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা বাড়ির সদস্যদের গুরুতর আহত করেছে। আহতদেরকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সূতামোড়ার ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাসির ডাক্তারকে দা, কুড়াল দিয়ে বাড়িতে গিয়ে জঘম করে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত ২৫ নভেম্বর ২০২২ বিনা কারণে গায়েবি মামলা দিয়ে নেত্রকোণায় কেন্দুয়া পৌর বিএনপি নেতা খোকন আহম্মেদ ডিলার, মোয়াজ্জেম হোসেন, আশুজিয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সোহেল আহম্মেদ, আব্দুল হেলিম ভূইয়া, কেন্দুয়া উপজেলা যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন, আন্জু মেম্বার, মাসুদ, জেলা ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম সাদেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বাসা বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল ইসলামের সন্ধান দাবি করছি, নুরুদ্দিন অপুর ওপর জুলুম-নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশব্যাপী গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।