নেই বিদ্যুৎ, স্কুল, সুপেয় পানি
ডিজিটাল দেশে এনালগ গ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৯ এএম, ২৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩২ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
শতভাগ বিদ্যুতায়নের উপজেলায় বিদ্যুৎ বিহীন কালেঞ্জী খাসি পুঞ্জিঁ ও তৈলং পাড়া আদিবাসী গ্রাম। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা, অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়রা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম তৈলংপাড়া, গ্রামটিতে নেই বিদ্যুৎ, স্কুল, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা। অসহায় এসব ত্রিপুরা সম্প্রদায় অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর কুয়ার পানি পান করে জীবন পার করছেন। অনিরাপদ পানি পান করে অনেক সময় কোমলমতি শিশুরা পানি বাহিত ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সুপেয় পানি না থাকায় জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে অনিরাপদ কুয়ার পানি পান করছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়। এ বিষয়ে তৈলং ত্রিপুরা গ্রামের (হেডম্যান) আদিবাসী নেতা করুনা দেবর্বমা জানান দুর্গম পাহাড়ি কাদাযুক্ত সড়কেই আমাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা, নেই বিদ্যুৎ, স্কুল, এবং নিরাপদ পানি। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। কেউ আমাদের নিরব কান্না দেখতে পায় না।
তিনি আরো বলেন, গর্ভবতী নারী ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে নানান দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গ্রামটি টেলিযোগাযোগ বেহাল অবস্থা অর্থাৎ গ্রামের ৬ কিলোমিটার দূর থেকে থাকে না কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক, যোগাযোগ করতে হলে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ইতি দেববর্মা জানান আমরা হাসপাতালে যেতে হলে পুরুষরা ৬ কিলোমিটার দূরে বাইসাইকেল চালিয়ে গিয়ে সিএনজি আনতে হয়, কারণ এখানে ফোনে কোনো নেটওয়ার্ক থাকে না, বিধায় স্বশরীরে গিয়ে খবর দিতে হয় সিএনজি চালকদের।
তিনি আরো বলেন আমরা বাংলাদেশের নাগরিক, কিন্তু আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই,স্কুল নেই, নিরাপদ পানি নেই, এমনকি স্বাস্থ্য সেবাটাও পাচ্ছি না। অনেক কষ্টে জীবনধারণ করতেছি। সাধারণ ত্রিপুরা সম্প্রদায় বলেন, আমরা শুনেছি দেশ ডিজিটাল হয়েছে কিন্তু আমরা এখনো এর সুফল পাচ্ছি না, আমরা আমাদের গ্রামের উন্নয়ন চাই, আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।
এ বিষয়ে সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ তৌফিকুল ইসলাম সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, রিজার্ভ ফরেস্টে বিদ্যুৎ দেওয়া কেবিনেটের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তবে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া আইনে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও কেনো লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জিঁতে বিদ্যুৎ প্রদান করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবানে তিনি বলেন সংরক্ষিত বনেও বিদ্যুৎ নেওয়া ও দেওয়া বন আইনে নিষেধ, কিন্তু সেখানে কিভাবে বিদ্যুৎ প্রদান করা হয়েছে বিষয়টি উনার জানা নেই।
তিনি আরো জানান, বন বিভাগের বন্য প্রাণী বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে, সিলেট বন বিভাগের দায়িত্বে নয়। তৈলংপাড়া সুষমা নগর এর মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সিফাত উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে আমি এই ত্রিপুরা পল্লী সরেজমিন পরিদর্শন করেছি, এ বছর উপজেলা পরিষদের এডিপি থেকে রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং আগামী বছর নিরাপদ পানির জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। বিদ্যুৎ প্রদানের বিষয়ে তিনি আরো বলেন বন বিভাগের জায়গায় উনাদের বসতি বিধায় বন বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ প্রদান করতে নিষেধাজ্ঞ রয়েছে, তবে বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অবগত করবেন বলে জানান। বিদ্যুৎ প্রদানে বন বিভাগের বাধার বিষয়ে উপ প্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায় জানান বিষয়টি উনার জানা নেই, বিষয়টি প্রধান বন সংরক্ষক কে অবগত করবেন, এবং রাজকান্দি রেঞ্জের কুরমা বন বিটের তৈলং পাড়ার বিদ্যুৎ না দেওয়ার বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে আলাপ করবেন বলে জানান।