অবাধ, মুক্ত, স্বচ্ছ, ইনক্লুসিভ নির্বাচনকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫০ পিএম, ২৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:১৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে আসামি করা, গ্রেফতার, হয়রানি, দিনে-রাতে বাসায় পুলিশ হানা দিয়ে পরিবারের লোকজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে অশালীনভাবে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের উত্থানের ফলে ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, সুশাসন, স্বচ্ছতা, সহনশীলতাকে অচেনা শব্দে পরিণত করা হয়েছে। অসম্মান করা হয়েছে মানুষের ভোটাধিকারকে। অবাধ, মুক্ত, স্বচ্ছ, ইনক্লুসিভ নির্বাচনকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে বর্তমানে জনগণের বিপুল উত্থান দেখে অবৈধ সরকার দিশেহারা হয়ে প্রতিহিংসার বন্য আচরণ শুরু করেছে। বিরোধী দলের টুঁটি চেপে ধরার জন্য এরা রাষ্ট্রশক্তিতে নির্বিচারে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাহেব বলেছেন, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রস্তুত থাকবে। বিএনপি তো গণসমাবেশ করবে, আর গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতিটাই একটি রাজনৈতিক দলের বড় অর্জন। সুতরাং সমাবেশকে সফল করতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য, সেটি রক্ষার জন্য একটি রাজনৈতিক দল সর্বাত্মক উদ্যোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এখানে তো সংঘাতের কোনো প্রশ্নই আসে না। হাছান মাহমুদের এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর মনের ইচ্ছার হুবহু প্রতিধ্বনি। গণসমাবেশকে নিয়ে মন্ত্রী তার দল ও সরকারের সর্বনাশা ইচ্ছারই পরিকীর্তন করছেন। তবে আওয়ামী সরকার তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে। জনগণের বিশাল শক্তির কাছে চক্রান্তের কোনো আস্ফালন টিকতে পারবে না। ইতিমধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন বিভাগীয় সদরে বিএনপির গণসমাবেশে নানা ধরনের নারকীয় আক্রমণ সত্বেও জনগণের অপ্রতিরোধ্য গতিকে আটকাতে পারেনি। তারা বহু কষ্ট করে দুই/তিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছে। আওয়ামী সরকার সন্ত্রাসবাদের অন্ধগলিতে নিজেদের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। কারণ এরা সুশাসন ও গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করেছে। তবে জনগণ বর্তমান আওয়ামী সরকারের পতনে উদ্দীপ্ত বদ্ধপরিকর। ভোটারবিহীন সরকার বন্দুক ও গুলি করে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যার ধারাবাহিকতায় বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে দিলেও জনগণের রাজপথের উপস্থিতিকে থামাতে পারবে না।
রিজভী বলেন, গণতন্ত্রকামী বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিকামী কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তারা অবিচল। রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করেও তাদের কন্ঠের উচ্চারণকে থামানো যাবে না। শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে দমাতে হত্যার যে নীতি অবলম্বন করেছেন তাতে তিনি সফলকাম হবেন না। তার আমলে একের পর এক নিরপরাধ লোককে হত্যার কোনো বিচার হয়নি। তাই আওয়ামী দুর্বৃত্তরা সহিংস কার্যাবলী চালাতে উৎসাহিত হয়েছেন। প্রতি দুই দিন, তিন দিন পরই বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা ও অতর্কিতে হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করছে, পঙ্গু হয়েছে অনেক নেতাকর্মী, এর ওপর চলছে দেশব্যাপী বেপরোয়া পুলিশি অভিযান, হামলা-মামলার হিড়িক। এসবই রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির ইশারাতেই হচ্ছে। কারণ এক সময় তিনি চট্টগ্রামে বলেছিলেন-একটির বদলে দশটি লাশ ফেলতে। তাই বন্ধুরা, যতই নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হোক, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ সর্বকালের নজিরবিহীন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সকল বাধা অতিক্রম করে এই গণসমাবেশে উপস্থিত হতে সংগ্রামী জনগণ আপোসহীন লক্ষ্যে স্থির।
দেশব্যাপী হামলা-মামলা, গ্রেফতারের সংক্ষিপ্ত চিত্র : পিরোজপুর জেলাধীন নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল সিকদারসহ মোট ৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কুমিল্লা বিভাগীয় গণ সমাবেশের জন্য টঙ্গীর একটি ফ্যাক্টরীতে ৫০০০ গেঞ্জি প্রস্তুত করে নিয়া যাওয়ার পথে টঙ্গীর মুরাদনগরে বিএনপি নেতা জামাল হোসেনসহ ৪/৫ জন বিএনপি কর্মী এবং গেঞ্জির পিকআপ ভ্যান আটক করে উত্তরা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ঢাকা মহানগর উত্তর : ভাটারা থানার ৪০ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঢাকা জেলা : ঢাকা বিভাগীয় গণ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে তল্লাশির নামে ব্যাপক তান্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। এ সময় নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা- এম এ রশিদ, ডিপুটি মেয়র আনোয়ার হোসেন, আশরাফ আলী ভুলু, আসলাম, রিপন, সিদ্দীক মেম্বার ও দীপক ভূইয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে। এই মামলায় আরো আসামি করা হয় ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকসহ ১০৯ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে। এছাড়াও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাড. আবু সেলিম চৌধুরী, রহিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সোলায়মান মোকসেদ, কলাতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য শাহাবুদ্দিন, রহিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কামাল হোসেন; কালিন্দি ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কেরানীগঞ্জ মডেল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক মনির, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হাজী শামিম আহমেদ, তারানগর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি শওকত ও ৮ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সাগরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। দোহার থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিশালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ ব্যাপারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরিফ হোসেন; মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, দোহার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রমজান খান, নয়াবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি লাভলু দেওয়ান, সাবেক এজিএস মোঃ মাহবুবুর রহমান, সাবেক ছাত্রদল নেতা- শিশির মাহমুদ, কিবরিয়া; ও যুবদল নেতা- হারুন মেম্বারকে গ্রেফতারসহ এখনো গ্রেফতার অব্যাহত আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব- শরিফুল হক স্বপন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক- সালাউদ্দীন শাহিন, সদস্য সচিব- আইয়ুব; উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মাসুদুর রহমান দীপু, যুবদলের সদস্য সচিব জিয়াউল হুদা শিপন ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক- সাইফুল ইসলামসহ মোট ৪৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গত ২০ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখে কসবা থানায় একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে পুলিশ। এছাড়াও উক্ত উপজেলার গপিনাথপুর ইউনিয়নের সূতামুরায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে-বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ পিতা-মাতা, মহিলা ও শিশুদের দা-দিয়ে জঘন্যভাবে কুপিয়ে আহত করেছে। আহতরা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ : ওয়ারী থানাধীন গত ২৩ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখে ৩৮ নং ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ককটেল ফাটিয়ে উল্টো বিএনপি নেতা- কাজী আবুল বাশার ও হামিদুর রহমান হামিদসহ প্রায় ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
বংশাল থানায় গত ১৯ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখে আওয়ামী ও যুবলীগের ৫০/৬০ জন সন্ত্রাসীরা আভ্যন্তরিন কোন্দলে দাওয়া-পাল্টা দাওয়া ও ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় পুলিশ উল্টো স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করে। পাবনা জেলার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি তসলিম হান্নান সুইটসহ ১০৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। এছাড়াও ঈশ^রদী উপজেলা, সাঁথিয়া উপজেলা, আটগড়িয়া উপজেলা, ভাঙ্গুরা উপজেলা ও চাটমোহন উপজেলায় প্রায় পাঁচ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আমি এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর আহবান জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।