সমাবেশ নাকি করতে দেয়া হবে না; দেশটা কি কারো বাপের রাজত্ব নাকি : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২২ পিএম, ২২ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪২ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর নাকি সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। দেশটা কি কারো বাপের রাজত্ব নাকি। দশ তারিখে এখানেই (নয়াপল্টনে) সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা। তিনি বলেন, খুব পরিষ্কার করে বলেছি আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। আমাদের দাবিও পরিষ্কার। বলেছি জ্বালানিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। এখনোতো আসল ঘোষণা দেইনি, আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে। সেদিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নয়ন নিহতের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। গত ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সদর উপজেলার মোল্লাবাড়ি এলাকায় আগামী ২৬ নভেম্বরে কুমিল্লার বিভাগীয় সমাবেশের লিফলেট বিতরণকালে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্র দলের নয়ন মিয়া।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গড়িমসি করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। তাদের সমস্ত দুর্নীতি, তাদের আত্মম্ভরিতা, তাদের অহংকার সব কিছু দিয়ে এদেশের মানুষকে তারা জিম্মি করে ফেলেছে। তাদের (সরকার) কথা শুনলে মনে হয় ওরা হচ্ছে মালিক আর আমরা হচ্ছি চাকর-বাকর-প্রজা, এদেশের মানুষ তাদের প্রজা। করতে দেয়া হবে না ১০ তারিখে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ। এটা কারো বাপের রাজত্ব নাকি। ১০ তারিখে (১০ ডিসেম্বর) এইখানেই (নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে) সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা। আমরা অনেক আগে বলেছি (অনুমতি চেয়ে চিঠি)। আমরা আইন মেনেছি। আমরা আইন মেনে চলতে চাই, আমরা চিঠি দিয়েছি। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। আমাদের দাবিও পরিষ্কার। আমরা বলেছি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, আমরা বলেছি চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে, আমরা বলেছি আমাদের ভাই শাওন, নুরে আলম, আব্দুর রহিম, আবদুল আলিম ও নয়ন হত্যার প্রতিবাদে আমরা এই সমাবেশ করব। আমরা বলেছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আমাদের এই সমাবেশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো তো আসল ঘোষণাটা দেই-ই নাই। আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে। সেদিন থেকে শুরু হবে একদফার আন্দোলন। এ সময়ে মির্জা ফখরুল সেøাগান ধরেন- ‘এক দফা, এক দাবি’। নেতা-কর্মীরা উচ্চকন্ঠে জবাব দেয় ‘হাসিনা তুই কবে যাবি’।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে (এই দাবি) কোনো কম্প্রমাইজ নাই, এখানে কোনো আপোস নাই। যেতে হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান। সমাবেশের বাধা প্রদানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা বার বার করে বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চলেছি। ৭টি বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করেছি আমরা। গাড়ি বন্ধ করে দেয়, বাস-ট্রাক বন্ধ করে দেয়, লেগুনা বন্ধ করে দেয় তাতে কি সমাবেশ বন্ধ করতে পারছে? পারে নাই। মানুষ জোয়ারের মতো এসেছে। তিন ঘন্টার সমাবেশকে তোমরা তিনদিন বনাইছো। তিন দিন ধরে মানুষ তোমাদের পিন্ডি চটকাইছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আমাদের জীবন নিয়ে খেলছে, আমাদের দেশ নিয়ে খেলছে, আমাদের ছেলেদের হত্যা করা হচ্ছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়তে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, সকলকে একসঙ্গে জেগে উঠতে হবে। এমনি এমনি কেউ সরে না। সরাতে হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে পরাস্ত করতে হবে। নয়ন হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, পত্রিকায় এসেছে যে, বাঞ্ছারামপুরের ঘটনা সাজানো ঘটনা। এরা কত অমানুষ হতে পারে, কত নির্মম, অমানবিক হতে পারে যে, দুঃখ পর্যন্ত প্রকাশ করে না। আরে সাজানোর নায়ক তো তোমরা। জোর করে ক্ষমতা দখল করে বন্দুক-পিস্তলের জোরে ক্ষমতায় বসে আছো।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা সবাই সমাবেশের সামনে চারদিকে দাঁড়িয়ে আছেন..। আমি তাদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই যে, তারা এদেশের সন্তান। এদেশের প্রতিটি মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় সমস্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন নেয়। আপনাদের কাঁধে বন্দুকটা রেখে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আজকে যে অবৈধ অন্যায় বেআইনি অমানবিক শাসন চালিয়ে যাচ্ছে তার দায় কিন্তু এসে পড়ে আপনাদের কাঁধে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাবকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া কি র্যাবের গুম করার অধিকার আছে? একইভাবে বাঞ্ছারামপুরে যে পুলিশ ভাই গুলি করেছে তাকে নির্দেশ দিয়েছে বলে সে গুলি করেছে। এই নির্দেশদাতা কে? শেখ হাসিনা। আবারো বলি আমরা নিষেধাজ্ঞা চাই না। অন্য রার্ষ্টের নিষেধাজ্ঞা দেয়া আমাদের জন্য লজ্জাকর, অপমানের। এই লজ্জা ও অপমানের জন্য দায়ী হচ্ছে এই শেখ হাসিনার সরকার। আমরা চাই না, অন্য কোনো বাহিনী আবার নিষেধাজ্ঞায় পড়ুক। তাই পরিষ্কার করে বলছি, জনগণের প্রতিপক্ষ কেউ হবেন না, জনগণকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না। এই জনগণ এই দেশের মালিক।
তিনি বলেন, ওই শেখ হাসিনা নন, আওয়ামী লীগ নয়। এই কথাগুলো পরিষ্কার। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছি, দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার, মানুষের ভাতের অধিকারের জন্য, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার জন্যে। আজকের এই বাংলাদেশ তৈরি করবার জন্য সেদিন আমরা যুদ্ধ করিনি।
মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, বিভাগীয় সমাবেশগুলোর পর মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। ঢাকায় এখনো সমাবেশ হয়নি। এখনই মিথ্যা মামলা শুরু হয়ে গেছে। আরে মামলা দিয়ে কি আটকানো গেছে? ১৫ বছর আটকানো গেছে। যত মামলা দেবে তত আন্দোলন শক্তিশালী হবে, মানুষ আরো রুখে দাঁড়াবে। আমি বলে দিতে চাই, বাধা দিলে বাধবে লড়াই। সকলকে আন্দোলনের জন্য ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নেয়ার আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, লিটন মাহমুদ, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।