সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে চায় : মান্না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৬ পিএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, মানুষ বাজারে টাকা নিয়ে যায় ব্যাগ ভরে আর সওদা নিয়ে আসে অর্ধেক করে। সরকার সমস্থ জিনিজের দাম বাড়িয়েছে। আজকে মাংস খাওয়া, মাছ খাওয়া মানুষ প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। অথচ আমরা মাছে-ভাতে বাঙ্গালী ছিলাম। আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা ভোটের আগে বলেছিল ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে। কিন্তু আজকে মোটা চালের দাম কত? চিকন চালের দাম কত? এই জন্য আমি বলি ফোর টোয়েন্টি গর্ভমেন্ট, মিথ্যুক, জনগণকে ভাওতা দিয়েছে। এবং সেই ভাওতাবাজ সরকার এখন ক্ষমতায় আছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ৭ দলের রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং রাজনৈতিক সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা বন্ধ করার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা।
তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দল ভোটে জিতবে না, ভোট দিতে দিবে না। আপনি যতই প্রতিবাদ করেন আপনার কোন কথা শুনবে না। বরং আপনি সভা করতে যাবেন, আপনাকে সভা করতে দিবে না।
মান্না বলেন, দেশের ২০টি ব্যাংকের কাছে কোন ডলার নেই এলসি করার জন্য। ভারতের কোন কোন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে এলসি দেয় না। আমরা আরও ২ মাস আগেই বলেছিলাম যে, দেশের রিজার্ভ নেই। তখন আমাদের মারার উপক্রম হয়েছিল। গ্রেপ্তারও করার চেষ্টা হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মানুষ এখন কোনো কিছু ক্রয় করে আরাম বোধ করেন না।
তিনি আরও বলেন, এখন সমাবেশ ডাকলেই মানুষের ঢল নামে। যেখানেই সমাবেশ ডাকা হয় সেখানেই মানুষের ঢল। মানুষ চিড়া, মুড়ি, গুড় নিয়ে নদী সাঁতরিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। সরকার কোনো সমাবেশেই মানুষ আটকাতে পারেনি। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে রাজনৈতিক নানান বাতাবরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সামনে আবার একটা কর্তব্য এসেছে। মানুষ বাচার তাগিদে, দেশ রক্ষার তাগিদে আবার সংগ্রাম করতে উদ্বদ্ধ হচ্ছেন। গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে। এই গণজাগরকে আর বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। এই গণজাগরণকে আমাদের দেশের শাসন ব্যবস্থা বদলের স্বার্থে আন্দোলনকে প্রজ্জালিত করতে হবে। শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমরা সরকারের পদত্যাগ চাই। শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। কোনো রকম ভুলভ্রান্তি চলবে না।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার উন্নয়ন ১৪ বছরে এসে দুর্ভিক্ষে রূপ নিয়েছে। আপনিই বলেছেন, আমরা বলিনি। প্রতিদিন রিজার্ভ কমছে। কেন কমছে? এর কারণ আপনার উন্নয়নের নামে বছরে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আট হাজার লেনদেন পেয়েছে, যেগুলোকে তারা অস্বাভাবিক বলছে। এসবের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে। ডলারের কোষাগার ফাঁকা। এমন লুটপাট আগে বাংলাদেশে কখনও ঘটেনি। এ সরকারের আমলে দশ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই টাকা কার? আপনাদের উন্নয়নে আমাদের আজ এ অবস্থা করেছে।
সাকি বলেন, ২০১৪ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। ২০১৮ সালে সুষ্ঠু ভোট দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিলেন। আমরা কী দেখলাম। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পুলিশ রাতে ভোট দিয়েছে, এমন কথা কোথাও শুনিনি। আমরা সরকারকে বলতে চাই, জাপানের রাষ্ট্রদূতের কথা কি আমরা অস্বীকার করতে পারি? আমরা তো ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা তো দেখেছি। দেশের মান সম্মান নিয়ে আমরা চিন্তিত, আপনারা নন।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা র্যাবের মতো প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করেছেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধের অধিকার হলো, তারা ক্ষমতায় থাকবে, কিন্তু মানুষ ভোট দিতে পারবে না। প্রতিপক্ষকে হাত-পা বেঁধে নিজেরা অস্ত্র নিয়ে, পুলিশ নিয়ে তারা বলে খেলা হবে। নির্বাচনে আসুন, আমরা আপনাদের হাত-পা বাঁধব না।
সাকি বলেন, শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ না। তাই আমরা তার পদত্যাগ চাই। তারা ক্ষমতা ছাড়বে না। তারা বলে বিরোধী দল বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। আমরা বলি এতদিন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে স্টিম রোলার চালিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকেছিলেন। আজ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে আছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ধর্মের নামে মুক্তিযুদ্ধের নামে বিভাজিত করতে চায়। আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধী দলের নয়, নিজ দল ও সমর্থকদের ভোটাধিকারও কেড়ে নিয়েছে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।