সরকারকে হটানোই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ : ড. খন্দকার মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৮ পিএম, ১৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:১২ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারকে হটানোই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের মূল দাবি- সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে মুক্তভাবে রাজনীতি করতে দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্র সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা যেখানে ব্যর্থ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেখানেই সফল। ৭ নভেম্বর দিনকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিতর্কিত করছে। অথচ সেই দিনটি বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আকাক্সক্ষা পুনরুদ্ধার হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা দিকনির্দেশনা দেবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। পরে ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির নামে লুটপাটের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। দেশে রক্ষী বাহিনী তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দেশে পরিবর্তন এসেছিল। সেই পরিবর্তনকে আবারো একটি পাল্টা অভ্যুত্থান করে থামাতে চেয়েছিল খালেদ মোশাররফ।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের আগে ৩-৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না। রেডিও, টিভি বন্ধ ছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। ঠিক সে সময় ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এজন্য ৭ নভেম্বর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ৭ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতার ফসল। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে জিয়াউর রহমানের অবদানকে অস্বীকার করতে চায়। সেজন্য তারা ৭ নভেম্বরকে পছন্দ করে না।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রসমাজকে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে সরাতে হলে ছাত্রদলকে সামনের কাতারে থাকতে হবে। তবেই দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, গায়ের জোরে সরকার বারবার দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। এজন্যই সরকার জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপিকে ভয় পায়। আজকে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করেছে বারবার। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। চাপাবাজি দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। তারা আইএমএফের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। তাদের লুটপাটের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। আজকে নতুনভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও সরকারের অপশাসনে জনগণ আজ অতিষ্ঠ। তারা আজ এই সরকারের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপির সমাবেশগুলোতে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সরকার ভয় পেয়ে বিএনপির গণসমাবেশে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু জনগণ কোনো বাধা বিপত্তিতে ভয় পায় না। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমাবেশে অংশ নিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশও সফল হবে।
পূর্বঘোষিত এ সমাবেশ বেলা দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই সকাল থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন। রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। ছাত্রদলের সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনের একটি সড়ক বন্ধ হওয়ায় রাজধানীর শান্তিনগর, কাকরাইল মোড়, পুরানা পল্টনের বিজয়নগর, দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তরের বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান প্রমুখ।