ক্ষমতাসীনদের প্রতিটি আঘাতের সমান জবাব দেয়া হবে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৭ পিএম, ১৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৫ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে নারকীয় তান্ডব চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্র মনে রাখবেন। প্রতিটি আঘাতের সমান ও বিপরীত জবাব দেয়া হবে। কাউকে গ্রেফতার করে বিএনপির আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। তারা সবাই আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির মহাসমাবেশ সফল করবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনের মুক্তি দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য শাহজাহান খানের সভাপতিত্বে ও আবদুল কুদ্দুস ধীরেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, এই অবৈধ সরকারের একজন মন্ত্রী যিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উনি প্রতিদিন বলেন খেলা হবে। এটাতো ফিউচার টেনসে বলেছে, প্রেজেন্ট টেন্সে বলবে না খেলা চলছে। আপনি কামরুজ্জামান রতনকে গ্রেফতার করেছেন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা কামালকে গ্রেফতার করেছেন। এটা কি খেলার অংশ না? সারাদেশে সমাবেশ যাতে না হয় তার জন্য অনেককেই গ্রেফতার করেছে। এটা কি খেলার অংশ? বিএনপির সমাবেশের ২ দিন আগে বাস মালিক ধর্মঘট ডাকে এটাও তো আপনার খেলার অংশ। কারণ আপনার নির্দেশ ছাড়া এই বাস মালিক সমিতি ধর্মঘট ডাকার কথা না। বিএনপির সমাবেশ শেষে তাদের ধর্মঘটও শেষ হয় এটা তো ওবায়দুল কাদের ও শেখ হাসিনার খেলার অংশ।
তিনি বলেন, খেলা দেখাচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে। বিদ্যুতের নাকি বন্যা বয়ে গেছে। হাইওয়ে, বড় বড় ফ্লাইওভার উন্নয়নে গোটা দেশ ছড়িয়ে গেছে। দেশের মানুষের আয় বেড়েছে ২১৩৪ ডলার। আবার প্রধানমন্ত্রী একবার বলছে দুর্ভিক্ষ হবে আবার বলছে হবে না। এই যে অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী। মানুষের মাথাপিছু আয় যদি এত বেড়ে থাকে তাহলে দুর্ভিক্ষ হবে কেনো? কিন্তু দুর্ভিক্ষ চলছে। সরকারি চাল ৩০ টাকা কেজি যে ট্রাকগুলোতে দেবে সেই ট্রাকগুলোর পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা মানুষ দাঁড়িয়ে থাকছে চালের জন্য। এটাই তো দুর্ভিক্ষের আলামত। ওবায়দুল কাদের ফিউচার টেন্সে বলেন খেলা হবে। কিন্তু খেলা তো চলছে মানুষের আহার নিয়ে খাদ্য নিয়ে ভোগান্তি নিয়ে। এসব দেশের জনগণ দেখছে এর হিসাব কিন্তু আপনাকে একদিন দিতে হবে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ বলে রিজার্ভে নাকি এখনো ৩৫ বিলিয়ন ডলার আছে। আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংককে বললেন হিসাব দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বললেন ২৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। আওয়ামী লীগ বলে ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ২৪ মিলিয়ন ডলার। হঠাৎ করে কমে গেল কেনো? বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যেটা বলবেন সেটা? কিন্তু বাতাসে অনেক কথা বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত রিজার্ভ তার চেয়েও কম। রাজকোষ শূন্য অবস্থায় এসে পড়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে ৩৫ বিলিয়ন বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ২৪ বিলিয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তো আপনাদেরই লোক। যেই আইএমএফ জানতে চেয়েছে তখনই রিজার্ভ কমে গেছে। এই দেশের পরিস্থিতি খুবই ভয়ঙ্কর অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকগুলোতে কোনো টাকা পয়সা নেই। সব শূন্য অবস্থায়। এরা আওয়ামী লীগ কত লুটপাট করেছে যে, খেলাপি ঋণ ১ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। আর বিএনপি যখন ক্ষমতা ছাড়ে তখন ঋণ খেলাপ ছিল শুধু চার হাজার কয়েকশো কোটি টাকা। এই ১ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে এই টাকা কে নিয়েছে। এই টাকা সব আওয়ামী লীগ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজনেরা নিয়েছে। গতকাল বলেছেন ব্যাংকের টাকা শেষ হয়ে আসছে। দেশের ঋণ খেলাপি কে কে তার জন্য একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যারা যারা ঋণ খেলাপি তারাই সেই কমিটির সদস্য।
শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা ফুটবল খেলার মাঠে কিন্তু আত্মঘাতী গোলও আছে। অর্থাৎ নিজেদের প্লেয়ার নিজেদের গোল পোস্টেই গোল করে দেয়। ওবায়দুল কাদেররা কিন্তু সেই ধরনের আত্মঘাতী খেলোয়াড়। ওবায়দুল কাদের হাছান মাহমুদ যখন বিপদে পড়বে তখন তারা বলবে ঋণ খিলাপির টাকা, উন্নয়নের বুলি বলে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচারের সাথে শেখ হাসিনা ওয়াজেদ জড়িত। যেমন ওয়ান-ইলেভেনে ওবায়দুল কাদের, জলিল, শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিম বলেছে শেখ হাসিনা কার কার কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে। তাই ওবায়দুল কাদের যখন খেলার কথা বলবে তখন শেখ হাসিনা আপনিও সাবধান হয়ে যান কারণ সে বিপদে পড়লে আপনার সব কথা কিন্তু সে বলে দিবে।
তিনি বলেন, আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দিচ্ছেন। গ্রেফতার করছেন মারধর করছেন। নিউটনের তিনটা সূত্র। তৃতীয় নাম্বারটা হল আপনি যেভাবে আঘাত করবেন তার বিপরীত সমান প্রতিঘাত হবে। যে অন্যায় করছেন বিএনপির সাথে, হত্যা নির্যাতন গ্রেফতার করছেন। খুলনা বরিশাল বিএনপির বড় বড় সমাবেশগুলোর আগে যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছেন রক্তাক্ত করছেন সমানভাবে এর প্রতিঘাত জনগণকে সাথে নিয়ে দেয়া হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কামরুজ্জামান রতনকে গ্রেফতার করেছে যাতে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশে লোকজন কম হয়। কিন্তু এটা আপনাদের ভুল পলিসি। কামরুজ্জামান রতনকে গ্রেফতার করার কারণে মুন্সীগঞ্জের নেতাকর্মীরা জনগণ আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে সাফল্যমন্ডিত করবে। তিনি অবিলম্বে কামরুজ্জামান রতনসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।