সরকারের বিরুদ্ধে জনগন 'আগ্নিয়গিরির মতো ফুঁসে উঠছে' : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৪ এএম, ১৬ নভেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:১১ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারের বিরুদ্ধে জনগন 'আগ্নিয়গিরির মতো ফুঁসে উঠছে' বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভা বিভিন্ন বিভাগীয় সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ''এরা(সরকার) কত কাপুরুষ, কাওয়ার্ড দেখেন। এই যে সমাবেশগুলো হচ্ছে প্রত্যেকটা সমাবেশ কত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোনো রকম সমস্যা হচ্ছে না। এরমধ্যেও তারা আমাদের ৫'শ অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে ফেলেছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আবার গায়েবী মামলা দেয়া শুরু হয়েছে। ১৫ বছর ধরে তো এই মামলা বহু দিয়েছো, ১৫ বছর ধরে বহু মানুষ খুন করেছো, ৬' শ মানুষকে গুম করে দিয়েছো। এতে করে রোখা যাবে না তো। রোখা কি গেছে? যায়নি। এখন আবার অত্যন্ত তীব্র আগ্নিয়গিরির মতো সব ফুঁসে উঠছে মানুষ। এটাই ফুঁসে উঠবে। এই ফুঁসে উঠার মধ্য দিয়েই এই সরকারের পতন হবে।আমরা বিশ্বাস করি জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগনের বাংলাদেশ তৈরি হবে।"
'বিভাগীয় সমাবেশে অভূতপূর্ব্ সাড়া'
মির্জা ফখরুল বলেন, ''এটা আশার কথা। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, এই বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যোগ দিচ্ছে কারা? দেখবেন, লুঙ্গি পড়ে আসছে, হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে এবং তিনদিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে চিড়া-মুড়ি-গুড় নিয়ে, এসে তারা এসব সমাবেশগুলোকে সফল করছে তিনদিন খোলা আকাশের নিচে থেকে। এটা অভূতপূর্ব। আমরা যদি এটাকে ধারণ করে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারি শুধুমাত্র যে আমাদের জন্য তা নয়, গোটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গোটা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাহলেই এটাকে আমরা সফল হব। কে কোথায় কি বললো না বললো, সেদিকে বেশি কান দেয়ার দরকার নাই। কে কি বলছে, খেলা বলছে না কি বলছে- বলতে দিন। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট থাকবো। আমরা এবার আমাদেরকে এই বিজয় অর্জন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।"
'আমরা কঠিন যুদ্ধ শুরু করেছি'
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আমরা কঠিন যুদ্ধ শুরু করেছি, আমরা কঠিন লড়াই শুরু করেছি।এই লড়াইয়ে আমাদেরকে জয়ী হতে হলে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে প্রতিমুহুর্তে স্মরণ করতে হবে। কিভাবে উনি হেঁটে হেঁটে ফারাক্কা বাঁধে গেছেন, কিভাবে উনি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছেন, কিভাবে উনি মানুষের দূঃখের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।"
তিনি বলেন, ''সেই মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আমরা মনে করব, তাকে স্মরণ করব, তার পথে আমরা চলব। তাহলে আমরা মনে করি যে, আমরা সফল হতে সক্ষম হবো। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও কিন্তু সেই পথ(ভাসানীর পথ) দেখিয়েছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেননি। উনি এখনো ৪ বছর ধরে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনে কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন।আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে বিদেশে আছেন। ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।"
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিএনপির গঠিত মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানী মারা যান। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি দুইদিনের কর্মসূচি গ্রহন করেছে। আগামীকাল বিএনপির নেতৃবৃন্দ টাঙ্গাইলে সন্তোষে প্রয়াত নেতার কবর পুস্পমাল্য অর্পন করে তাকে শ্রদ্ধা জানাবে।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে বিরল রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে তার আদর্শ অনুসরণ করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরোও বলেন, ''এখন তো রাজনীতি বদলে গেছে। আমার প্রায় মনে হয় যে, এখন নষ্ট সময় চলছে। এই নষ্ট সময়ে মওলানা ভাসানীকে স্মরণ করা, তাকে অনুসরণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।তিনি(ভাসানী) নিজের জন্য কোনো কিছু চাননি। ১৯৫৪ সালে তার দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে মওলানা ভাসানী মন্ত্রিত্বও নেননি। এই হচ্ছে মওলানা ভাসানী।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''এখনকার যে রাজনীতি সেই রাজনীতিতে আমরা যেটুকু দেশের জন্য, মানুষের জন্য চেষ্টা করছি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি। একটা জিনিস তার কাছ থেকে নেওয়া দরকার সেটা হচ্ছে যে, আমাদের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্য যেন আমরা কখনো আপোষ না করি।সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যেন সর্বশক্তি দিতে পারি।"
তিনি বলেন, ''আমাদের নোমান ভাই(আবদুল্লাহ আল নোমান) তিনি বিয়ের রাতে বাসর থেকে উঠে সন্তোষ চলে গিয়েছিলেন। দুদুর (শামসুজ্জামান দুদু) সঙ্গে আলাপ করছিলাম যে, কতটা বড় আবেগ থাকলে, প্রাণের কতটা টান থাকলে ওই রাতে রাজনীতির টানে, আদর্শের টানে তিনি সন্তোষ চলে গিয়েছিলেন। এটা থেকে ওই সময়কার, ওই সমকালীন যে রাজনীতি, যারা রাজনীতি করতেন তাদের যে মনমানসিকতা, তাদের যে আন্তরিকতা এই জিনিসগুলোর কিছুটা প্রমাণ পাওয়া যায়।"
তিনি আরোও বলেন, ''মাহবুবউল্লাহ ভাই( অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ) এখানে আছেন। আমার অনেক স্মৃতি আছে তার সঙ্গে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও, অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও কী কষ্টটা তিনি প্রথম জীবনে করেছেন শুধু রাজনীতির জন্যে। তার বিয়ের পরে প্রথম যে সন্তান সেই সন্তানের দুধ তিনি যোগাড় করতে পারেননি। এমনও সময় গেছে তার। তখন তিনি সেই রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এই কথাগুলো আমরা এখন কেউ চিন্তাও করতে পারিনা। একজন কিছুক্ষন আছে বললেন, এখন ফাইভ স্টার না হলে ভালো লাগে না, বড় গাড়ি না হলে ভালো লাগে না- রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা এসে গেছে। এই প্রবণতা বড় কিছু এচিভ করা যায় না, কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভভ হয় না। এখানে ত্যাগ থাকতে হবে এবং সেই ত্যাগের মধ্য দিয়ে বড় কিছু অর্জন করতে হবে।"
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্য্যালয়ে সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমূল হক নান্নু, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মতস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, মওলানা ভাসানীর স্বজন মাহমুদুল হক সানু প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।