গণসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৮ এএম, ১৩ নভেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৩ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি'র কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় সদরে গণসমাবেশে মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর কথাবার্তায় সৌজন্যবোধ দুরে থাক, ন্যুনতম রাজনৈতিক ভদ্রতা প্রকাশ করেননি। গত পরশু দিন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় তিনি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা ও দেশনায়ক তারেক রহমান সম্পর্কে যে ধরণের বক্তব্য রেখেছেন তা সম্পূর্ণরুপে সুরুচি ও শিক্ষার আলোকবঞ্চিত প্রতিহিংসাপরায়ণ বস্তির মানুষের পক্ষেই সাজে। তিনি বলেন, ব্যক্তির ভাষা প্রয়োগের ব্যবহার দেখেই বোঝা যায়-তার পারিবারিক সংস্কৃতি কি? কোন ধরণের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অশ্লীল, অসভ্য, অশোভন বক্তব্য রাখা যায়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন-'আমরা যুবকদের কর্মসংস্থান করেছি, তারা হত্যা করেছে'। অথচ বাংলাদেশ এখন বেকারের কারখানা, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকারের সংখ্যা বাংলাদেশে। শিক্ষিত বেকার'রা চাকুরি না পেয়ে আত্মহত্যা করছে, যুবক-তরুণদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও হত্যার যে দৃষ্টান্ত শেখ হাসিনা রেখেছেন তা বিশে^র সকল স্বৈরাচারের রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে।
আজ রবিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলতে চাই-বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার, কিশোর শ্রমিক বিশ্বজিৎ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বক্করসহ অসংখ্য শিক্ষার্থীকে হত্যা, ছাত্রনেতা নুরুজ্জামান জনি, বাপ্পী, আরিফ, মতিউর রহমান এম, ভোলার ছাত্রনেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম, মুন্সিগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন, নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন প্রধান, ছাত্রনেতা অনিক, বেনাপোলের আব্দুল আলীম, গত পরশু বাগেরহাট জেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নুরে আলম ভুঁইয়া তানুসহ সারাদেশের জেলায় জেলায় বিএনপি'র অসংখ্য তরুণ নেতাদেরকে আপনার নির্দেশে পুলিশ অথবা র্যাব অথবা যুবলীগ-ছাত্রলীগ হত্যা করেছে। এ সম্পর্কে আপনি আপনার বক্তব্যে তো কিছু বলেননি প্রধানমন্ত্রী? এছাড়াও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী ও সাইফুল ইসলাম হীরু, চৌধুরী আলম, সুমন, মুন্না, জাকির, হুমায়ুন পারভেজসহ অসংখ্য বিএনপি'র আইন প্রণেতা, জনপ্রতিনিধি, অসংখ্য যুবক-ছাত্রকে গুম করার কি জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী?
তিনি বলেন, গণসমাবেশের মানুষের ঢল দেখে প্রধানমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। সমাবেশগুলোতে এত বাধা দিয়েছেন, সমাবেশে যাওয়ার পথে আপনার লালিত যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দিয়ে জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যে সহিংসভাবে আক্রমণ চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন, আহতদের অনেকেই এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, এর কি জবাব দিবেন প্রধানমন্ত্রী ? যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন বাস-মিনিবাস ধর্মঘট ডাকে না, কিন্তু বিএনপি'র গণসমাবেশের ৩০/৩২ ঘন্টা আগে থেকেই ধর্মঘট ডাকা হয়, এটা কার নির্দেশে ডাকা হয়-সেটাও জানে দেশবাসী।
তিনি আরোও বলেন, বরিশালের গণসমাবেশ শেষ হওয়ার পর থেকে গৌড়নদী আগৈলঝরায় বিএনপি'র মালিকানাধনী ২৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। দুইটি এনজিও-কে বন্ধ রাখা হয়েছে, কারণ এই এনজিও গুলো যারা পরিচালনা করেন তারা বিএনপি সমর্থক। সেজন্য সেই এনজিও'র মালিকদের চাপ দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকদের পরিচালক করার জন্য-না হলে এনজিও চালাতে পারবে না।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার মন্ত্রী-নেতারা বলেন-বিএনপি নেতারা নাকি ১৩ বছরে ১৩ মিনিটও রাজপথ দখলে রাখতে পারেনি। তাহলে আপনার নিকট আমাদের প্রশ্ন-সেই বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে, তখন বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সকল প্রকার গণপরিবহন বন্ধ করা হয় কেন ? আপনি এর কি উত্তর দিবেন প্রধানমন্ত্রী ? এই আচরণগুলোকেই জনগণ বলে-হাসিনা মার্কা গণতন্ত্র। আপনার অপকর্ম ঢাকতে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে আপনি যে কুৎসা রটান সেটি জনগণ জানে। আপনি জনগণকে বোকা বানাতে চাইলেও জনগণ সঠিকটাই উপলব্ধি করে।
তিনি বলেন, আপনার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গণসমাবেশগুলোতে জনতার ঢল অভুতপূর্ব। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। ফরিদপুরের জনসভায় দুইদিন আগে থেকেই কমরপুর আব্দুল আজিজ ইন্সটিটিউশন মাঠে জনতার একের পর এক ঢল আসতে থাকে। আশেপাশের বিএনপি'র স্থানীয় নেতাকর্মীরা রান্না করে তাদের খাইয়েছে। অনেকেই আশেপাশের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। মূল শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দুরে সমাবেশস্থলে মনে হয়েছে গোটা ফরিদপুর শহরসহ আশপাশের এলাকায় মানব-বন্যা সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী এসব দেখেই মূলত: হতাশ হয়ে ক্রোধে-প্রতিহিংসায় বেসামাল হয়ে পড়েছেন। আর এজন্যই জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এতো অশ্রাব্য ধারাবর্ষণ।
শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ের কেন্দ্র বিন্দুতে অবস্থান করছেন। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য নাম তাঁরা। শেখ হাসিনা তাঁদের বিরুদ্ধে যতই কথা বলবেন ততই তিনি দেশের মানুষের কাছে ঘৃণিত হবেন বলে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা।
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারের হীন মানসিকতার প্রকাশ ঘটছে প্রতিমূহুর্তে। বিএনপি'র গণসমাবেশগুলোতে জনগণের বিপুল সমাগম দেখে আওয়ামী প্রশাসন দমনের নীল নকশা অনুযায়ী কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণে অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি'র সদস্য মিজানুর রহমান বাচ্চু, বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, মোঃ শাহাদাত হোসেন, হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে বাবুল, মোঃ চাঁন মিয়া সরদার, মিজানুর রহমান আকতার, মোঃ সবুজ, মন্ডল হোসেন, সৈয়দ হেমায়েত উদ্দিন, শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ মামুন, মোঃ রিমন মিয়া, মোঃ ফারুক, নুর মোহাম্মদ,রায়হান কবির, মোঃ আক্কাস আলী, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আলী, মোঃ ফোরকান সরকার, বশির আহম্মেদ, মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী, মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ সজীব, মোঃ আলমগীর হোসেন, মোঃ নোমান, মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ, মোঃ মোশারফ, মোঃ ফারুক, মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ শরিফুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, মোঃ বিপ্লব এবং মোঃ ইসরাফিল-কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ মুহুর্তে অবহিত হয়েছে যে, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদল সভাপতি রুবেল মিয়াকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আমি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তাদের নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি।