আ’লীগ নেতার বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার, মামলায় আসামি বিএনপির ৭ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩১ পিএম, ১১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমান হাসানকে ককটেল, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গত মঙ্গলবার আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পরদিন বুধবার রাতে আলোকবালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইউসুফ আলী খান বাদী হয়ে ইমান হাসানসহ আটজনকে আসামি করে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলায় ইমান হাসান ছাড়া বাকি সাত আসামিই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
গ্রেফতার ইমান হাসান আলোকবালী ইউনিয়নের কাজীরকান্দী গ্রামের মৃত সাঈদ মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। মামলার অন্য সাত আসামি হলেন- জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য জাহেদুল করিম, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ, শহর যুবদলের সদস্যসচিব শামীম সরকার, সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী ও সদস্যসচিব কাইয়ুম সরকার।
এর মধ্যে আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব কাইয়ুম সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করছেন আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী। তবে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা এখনো বিষয়টি স্বীকার করেননি। কাইয়ুম সরকারের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ মোট ১৫টি মামলা আছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় বলেন, গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে ইমান হাসানের বাড়ি থেকে ৩টি ককটেল, ৫৪টি ছোট-বড় মার্বেল, ৭৪টি পাথরের টুকরা, ৫টি খালি কৌটা এবং সাদা পলিথিনে মোড়ানো ৫৪০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়। ইমান হাসানকে আটকের পর নরসিংদী মডেল থানায় আনা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমন তার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজন ব্যক্তির নাম বলেন। পরে তাদের উল্লেখ করে পরদিন বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠান।
মামলায় বিএনপি নেতাদের আসামি করার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিজিৎ রায় বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো ব্যাপার নেই। জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম এসেছে, শুধু তাদেরই আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে দেখা যায়, ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইমান হাসানকে। ২ নম্বর আসামি ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম সরকার। তবে এজাহারে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘কাইয়ুম মিয়া’ নামে। মামলার এজাহারে এই দুজনের ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি ছয় আসামির নাম ও বয়স উল্লেখ করা হলেও পিতার নাম ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে। তাদের ঠিকানা লেখা হয়েছে নরসিংদী সদর উপজেলা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতার বাড়ি থেকে ককটেল, বোমা ও গান পাউডার উদ্ধার করল পুলিশ। আর মামলা হলো বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা করে চলেছে। সরকার বিএনপিকে ভয় পাচ্ছে বলেই এসব মামলা দেয়া হচ্ছে।
শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ‘এই মামলায় ইমান হাসান ছাড়া বাকি যেই সাতজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেবল বিএনপির রাজনীতি করেন বলে তাদের ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থেকেও কেবল হয়রানি করতে পুলিশ আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তারা এই ঘটনার সঙ্গে কোনোক্রমেই জড়িত নন।’
তবে আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আসাদুল্লাহর দাবি, ইমনকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষের লোকজন এ ষড়যন্ত্র করেছেন। আসাদুল্লাহ বলেন, ‘প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানের বাড়িতে পরিত্যক্ত ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম রেখে তাকে ফাঁসিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে ওই মামলায় অন্য কাদের আসামি করা হয়েছে, আমি জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন বলেন, ঘটনার সঙ্গে পুলিশ যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। পুলিশ বিনা অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা করে না। কে কোন দল করেন, সেটা ব্যক্তিগত বিষয়। বিএনপির নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ মামলায় বিএনপির কাউকে গ্রেফতার করার খবর আমার কাছে নেই।’