জনগণের ঘাড়ে আইএমএফের ঋণ চাপিয়ে সরকার ডুগডুগি বাজাচ্ছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৪ পিএম, ১০ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
দুর্নীতি করে রিজার্ভ ফাঁকা করে সরকার এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ঋণ নিয়ে জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এর আগে বলেছিলেন, আইএমএফের ঋণ লাগবে না। তাহলে এখন কেন নিচ্ছেন? কারণ, দুর্নীতি করে রিজার্ভ ফাঁকা করে ফেলেছেন। আর এখন আইএমএফের ঋণ পেয়ে ডুগডুগি বাজাচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনে এক সমাবেশে আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এই সমাবেশ সভা হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে পাওয়া ঋণ কোন খাতে খরচ করা হবে তা প্রকাশের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে আইএমএফের কাছ থেকে লোন (ঋণ) পেয়েছেন, ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, আইএমএফের লোন আমাদের দরকার নাই। এখন আবার লোন নিয়েছেন। ভালো কথা। আজকে আপনারা এসব (লোন) কি খাতে খরচ করবেন, কোথায় খরচ করবেন-এগুলো জনগণ জানতে চায়। আইএমএফের লোন নিয়ে আবারো জনগণকে আপনারা আরেক ঋণের মধ্যে ফেলতে যাচ্ছেন যেটা ইতিমধ্যে সমস্ত ঋণের ক্ষেত্রে হয়েছে।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, এই লোন শোধ করবেন কি করে? ইতিমধ্যে আপনার তো রিজার্ভ খালি হয়েছে। পরিশোধ করা অনেক কঠিন হবে। বুধবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে প্রাথমিক সমঝোতা হয়েছে বলে জানান। সাত কিস্তিতে বাংলাদেশ এই ঋণ পাবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতেই এ ঋণের প্রথম কিস্তিতে ৩৫২ দশমিক ৩৫ ডলার পাওয়া পারে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় শর্ত তারা দিয়েছে, সেগুলো আমরা নিজেরাই শুরু করছিলাম। সরকারের দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আইএমএফ থেকে লোন নিচ্ছে কেনো? চুরি-দুর্নীতি করে সব সাফ করে দিয়েছে, দেউলিয়া করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। বিদ্যুতের নামে আপনারা এমন পাচার করেছেন যেমন সেই বিদ্যুতে অন্যতম ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে অন্যতম মিলিয়নিয়ারদের মধ্যে একজন হয়ে যায়। দেশে রাখছে না টাকা। কানাডায় বেগম পাড়া হয়েছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হয়েছে- সব জায়গায় দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। রেমিটেন্স দেশে না পাঠিয়ে হুন্ডি করে বিভিন্ন দেশে ‘অ্যাসেট’ ক্রয় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বহুবার বলেছি, আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি করা, চুরি করা, দেশকে ফোকলা করে দেয়া। আপনি আশে-পাশে দেখেন আওয়ামী লীগের যে পাতি নেতাটা আছে তা দাপটে থাকা যায় না। তার আগে পায়ে সেন্ডেল থাকতো না, তার এখন পাঁচ তলা বাড়ি হয়ে গেছে। ঢাকা শহরে এখন যত মার্সিডিজ, ফোরশে, ল্যান্ড রোভার দেখা যায়। ইতিমধ্যে আর কখনো দেখেছেন অথচ রাস্তায় ঢুকতে পারে না। গাড়ি যে চালাবেন তার রাস্তা নাই। মানুষ পায়ে হেঁটে পার হতে পারে না। এই গাজিপুরের রাস্তার করুণ অবস্থা, মানুষ ১২ বছর ধরে কষ্ট করছে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যে আন্দোলনটা করছি এটা আমরা বিএনপির জন্য করছি না। এই আন্দোলন আমাদের জনগণের জন্যে, জনগণের ভোটের অধিকার, জনগণের বাঁচার অধিকার, তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকারের জন্য। আমরা এই আন্দোলন করছি একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের জন্য। একটা গণতান্ত্রিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি যারা ৫ বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অতীতে, তাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এটা চিন্তা করা যায়? এটা এদেশে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে গণতন্ত্র নাই, তাদের কাঠামোর মধ্যে গণতন্ত্র নাই। স্বাধীনতার পরে তারা একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। আজকে আবার এই ১৪ বছরে ধরে ওপরে গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।
গণতন্ত্র ফেরাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন ও গত কয়েক মাসে ভোলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের নুরে আলম, মুন্সিগঞ্জে শহীদুল ইসলাম শাওন ও নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধানকে পুলিশের গুলি করে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এভাবে নির্যাতন করে বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জেগে উঠেছে সকল অসত্যের বিরুদ্ধে, হত্যা ও জেগে উঠেছে নির্যাতনের বিরুদ্ধে। সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দাবি খব সামান্য। আপনি এই মুহূর্তে পদত্যাগ করেন দেশকে ভালোবেসে থাকেন। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করে দেন, পদত্যাগ করে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে যেখানে সকল দলের অংশগ্রহন থাকবে।
মায়ের কান্না প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আপনারা এখন নতুন সব ফন্দি-ফিকির বের করছেন। আমাদের গুম হওয়া পরিবারগুলোর তাদের একটা সংগঠন আছে ‘মায়ের ডাক’ করেছে। এখন ওটার একটা পাল্টা একটা তারা (ক্ষমতাসীনরা) তৈরি করেছে ‘মায়ের কান্না’। এটা নতুন। ১০ বছর আগে ওই ৭৫ সালে সিপাহী-জনতার বিপ্লব ওই যে ৭ নভেম্বর। সেই সময়ে কারা কারা নাকি মারা গিয়েছিলো তাদের পরিবার এতোদিন পরে তারা উদয় হয়েছে। উদয় হয়ে তারা দাবি করছেন যে, শহীদ জিয়া নাকি মানুষদের হত্যা করেছেন। সেজন্য নাকি তারা তার (জিয়াউর রহমানের) কবর সেখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এটাকে হালকাভাবে নেবেন না। এটা একটা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত শুরু করেছে। এই চক্রান্ত হচ্ছে আবারো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য। আমরা সেটা হতে দেবো না। আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, জনগণের ভোটের অধিকারকে রক্ষা করতে হলে আমাদের অবশ্যই এই সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, ড. মফিদুল আলম খান, মাহমুদুল বারী, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন রবিন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ানুল হক রিয়াজসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।