খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২০ এএম, ৪ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৭ এএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আজ শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘যখন দেশে একটা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে, যখন মানুষ তাদের অধিকারের জন্যে আন্দোলন করছে, কথা বলছে, যখন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে-চাল,ডাল,তেল। গতকালকে আবার চিনিরও দাম বাড়িয়েছে ১৪ টাকা, জ্বালানি-বিদ্যুত সংকট- সব মিলিয়ে দেশে একটা যখন চরম অব্যবস্থাপনা এবং চরম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সময়ে তার(প্রধানমন্ত্রী) এই ধরনের হুমকি – এটা তিনি যদি মনে করে থাকেন গণতন্ত্রের আন্দোলনকে ব্যাহত করবে বা দমন করবে তাহলে তিনি সঠিক জায়গায় বাস করছেন না। কারণ এই যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, জনগনের এই আন্দোলনকে কেউ দমাতে সক্ষম হবে না। মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। এখানে ওই হুমকি-ধামকি দিয়ে কোনো কাজ হবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর উক্তির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘তার (প্রধানমন্ত্রী) এই উক্তি (বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দেব) থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা কত প্রতিহিংসা পরায়ণ এবং তারা যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা যে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই এই ধরনের উক্তি করেছেন তিনি এবং এমন সময় করেছেন।”
‘বাড়াবাড়ি করছে তো রাষ্ট্র’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বাড়াবাড়ির কথা বলেছেন উনি (প্রধানমন্ত্রী)। বাড়াবাড়ি তো করছে রাষ্ট্র, বাড়াবাড়ি করছে আওয়ামী লীগের এই সরকার। তারাই আজকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে এবং তারা পুরোপুরিভাবে আজকে এই বাড়াবাড়ির মাধ্যমে তাদের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আমাদের যেটা সাংবিধানিক অধিকার, সমাবেশের অধিকার, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যে প্রোগ্রামগুলো করছি সেই প্রোগ্রামগুলোতে তারা বাধা সৃষ্টি করছে, গ্রেফতার করছে। কোনো সভ্য দেশে চিন্তা করতে পারেন যে, সরকার হরতাল দিয়ে দেয়। এরা হরতাল দিচ্ছে। বরিশালে পাঁচ দিন আগে থেকে বলে দিয়েছে যে, পরিবহন বন্ধ থাকবে। হঠাত করে নৌ পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি কি স্পিডবোটগুলো ভোলা থেকে বরিশালে আসে সেগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে আবার এক পত্রিকায় দেখলাম প্রাইভেট কারও নাকী বন্ধ করে দিয়েছে। এটাকে কোন ক্যাটাগরিতে ব্যাখ্যা করবেন কিভাবে তারা?”
তিনি বলেন, ‘‘ওই যে একটা গদ শুরু করেছে যে, আমরা তো করিনি, করেছে তারা। তো আপনারাই (সরকার) সব কিছু চালাচ্ছেন, দেশের নিয়ন্ত্রণ করছে আপনারা। কি কারণে এখন এই সমস্ত ভোতা যুক্তি দিয়ে আপনারা আবার গণতন্ত্রকে ধবংস করতে চান, আবারো একটা সাজানো-পাতানো নির্বাচন করতে চান যাতে করে আপনারা আবার ক্ষমতায় চলে আসতে পারেন। জনগন এবার জেগে উঠেছে, জনগন এই সমস্ত যে প্রতারণামূলক যে কাজ তা কিছুতেই হতে দেবে না। যেকেনো ত্যাগের বিনিময়ে তারা এবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে- এটাতে তারা বদ্ধ পরিকর।সত্যিকার অর্থেই তারা জনগনের সরকার ও জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করবে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। সেজন্য প্রথম যে শর্ত আমরা দিয়েছি যে, প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারসহ পদত্যাগ করতে হবে।”
বর্তমানে দেশে সরকার ‘অপশাসনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের কবর’ রচনা করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
‘এখানে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকার জনগনকে ভয় পাচ্ছে, মানুষকে ভয় পাচ্ছে। যেভাবে মানুষ জেগে উঠছে এখানে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে। আমি বিশ্বাস করি এখানে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) সরে যেতে হবে। সেই কারণেই আমরা অনেকবার বলেছিলাম যে, এখনো সময় আছে সেইভ এক্সিট নেন। রিজাইন করেন এবং ক্ষমতা কেয়ারটেকার গভমেন্টের হাতে দেন। তাহলে একটা সেইভ এক্সিট হতে পারে। তা না হলে তার আগেও বলেছি, এখনো বলছি যে, পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
‘রেমিটেন্স পাচারের অভিযোগ’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে সংকটগুলো তৈরি হয়েছে এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের দুর্নীতির কারণে তৈরি হয়েছে।প্রতিটি ক্ষেত্রে, পদে পদে তারা দুর্নীতি করছে। আজকেও পত্রিকায় বেরিয়েছে, গত ১০ বছরে কানাডায় যারা মাইগ্রেন্ট করেছেন তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ হচ্ছে বাংলাদেশী। এগুলোর প্রমাণ পাবেন যেমন আপনার রেমিটেন্স কমে গেছে। রেমিট্যান্স কমছে কিন্তু আপনার শ্রমিকের সংখ্যা কিন্তু কমেনি, আবার বেড়েছে। তাহলে রেমিট্যান্সটা কোথায় যাচ্ছে? আমি আগেদিনও বলেছি যে, এই রেমিট্যান্স বিদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই কাজটা করছেন সরকারি দলের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তারাই এটাকে হুন্ডি করে পাচার করছে। যেকারণে দেশে আজকে যে সংকটটা সৃষ্টি হয়েছে ইট ইজ ওয়ান অব দ্যা রিজনস।”
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এদেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধবংস করেছে। অর্থাত বহুদলীয় গণতন্ত্র যে পুন:প্রবর্তন করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব সেই বহুদলীয় গণতন্ত্রকে তারা ধবংস করে নতুন একটা মোড়ক দিয়েছে যে একটা গণতন্ত্রের মোড়ক আছে কিন্তু ভেতরে তা পুরোপুরিভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা যেটা হচ্ছে বাকশালের মতো। আপনারা দেখেন যে, গত এক যুগে তারা আমাদের ৩৫ লক্ষ্যের উপরে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, ৬‘শর উপরে নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। আপনারা দেখেছেন যে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা যে আন্দোলন শুরু করি সেই আন্দোলনে ইতিমধ্যে ৪ জনকে তারা গুলি করে মেরেছে এবং একজনকে পিটিয়ে মেরেছে।আপনারা দেখছেন যে, কিভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, কিভাবে তারা তাদেরকে বাড়ি-ঘর ছাড়া করছে, কিভাবে পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপির ওপর দমনমূলক যে কাজ সেই কাজ তারা শুরু করেছে।”
‘পুরনো কাসুন্দি ঘেটে লাভ নেই'
‘জেল হত্যা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জিয়াউর রহমান জড়িত’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এহেন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এসব পুরনো কথা, এই সমস্ত কথাগুলো অনেক পুরনো। এই কাসুন্দি ঘেটে কোনো লাভ নাই, ডাইভারট বা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে কোনো লাভ নাই।”
‘‘লক্ষ্য একটাই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং এই সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে।”
‘ঢাকায় হবে লাস্ট বিভাগীয় সমাবেশ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা বিভাগীয় সমাবেশ করছি। ঢাকায় হবে লাস্ট বিভাগীয় সমাবেশ ১০ ডিসেম্বর। আমরা আমাদের ঘোষণা দিয়েছি যে, আমরা প্রত্যেক বিভাগে সমাবেশ কবে করব তা দিয়েছি। এর পরে দায়দায়িত্ব তো সরকারের তারা কি করবে না করবে। আওয়ামী লীগ কী ঘোষণা করলো না করলো। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট, অবিচল। সেখান থেকে আমরা এক পাও নড়ব না এবং দেশের মানুষও নড়বে না। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম আমরা শুরু করেছি সেই সংগ্রাম আমরা চালিয়ে যাবো এট এনি কস্ট।”