তিতুমীর কলেজে হেনস্তা : ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে ভয়ে কলেজছাত্রী!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৮ পিএম, ২৮ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০১ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে বাঙলা কলেজের ছাত্রীকে ইভটিজিং, হেনস্তা ও জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগে গত রোববার (২৩ অক্টোবর) বনানী থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী সুমাইতা লাইছা বুশরা। এতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও বনানী থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমাম হাসান শুভসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাব্বির হাসান রাতুল, সহ-সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম সামি, সহ-সম্পাদক মো. মেহেরাব হোসাইন ইকরাম এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী সৈকত সম্রাট। এদিকে মামলার পর উল্টো ভয়ে আছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী লাইসা।
তিনি বলেছেন, মামলার পর অভিযুক্তরা এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। আমাকে প্রতিদিন বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দেয়া হচ্ছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি, ভয়ে আছি। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
জানা গেছে, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত এবং ক্যাম্পাসে প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলার প্রধান আসামি ইমাম হাসান শুভ ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার ঘনিষ্ট হওয়ায় তাকে কেউ কিছু বলছে না। আর তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছেন তারা।
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া বলেন, সে (ইমাম হাসান শুভ) যে দোষী আমরা বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানিয়েছি। ঘটনার তথ্য-প্রমাণ, ভিডিও কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলেছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তিলোত্তমা শিকদার বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ভিডিও ফুটেজও এসেছে। অনেক ধরনের কথাই শুনছি। বিষয়টি নিয়ে আমরাও তদন্ত করছি। ভুক্তভোগী ওই মেয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তেই তারা ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। আসামিরা সবাই পলাতক। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। অন্যদিকে মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আযম মিয়া। অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের রাজনীতে জড়িত থাকায় তদন্তে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কে কী করলো সেটা বিষয় না, কী অপরাধ করলো সেটাই বড়। গত বৃহস্পতিবার তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাসে ইভটিজিংয়ের পর হেনস্তা এবং জিন্মি করে টাকা আদায় করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা। এ নিয়ে 'ইভটিজিংয়ের পর ছাত্রীকেই জিম্মি করে টাকা নিলেন ছাত্রলীগ নেতা' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরদিন ভুক্তভোগী ছাত্র বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করছেন, আমি সরকারি বাঙলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বাঙলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে বনানী থানাধীন সরকারি তিতুমীর কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে যাই। পরীক্ষা শেষে আমি ও আমার বান্ধবী তিতুমীর কলেজের মাঠে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। তখন ইমাম হাসান শুভ মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে জনসম্মুখে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল মুখভঙ্গিতে কথাবার্তা বলে উত্যক্ত করতে থাকেন, যা আমার জন্য মানহানিকর। এরপর আমরা যে যার বাসায় উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথে আমার আরেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়। তখন ইমাম হাসান শুভ আবারও আমার কাছে এসে উত্যক্ত করতে শুরু করেন। তার মোটরসাইকেলের পেছনে বসা অজ্ঞাতনামা অন্য একজন আমাকে দেখে কটূক্তি ও উত্যক্ত করেন। পরে আমি ও আমার বন্ধু কলেজের বিজ্ঞান ভবনের সামনে পৌঁছালে তারা আবারও আমার পিছু নেয়। তখন বিরক্ত হয়ে একটি ইটের টুকরা শুভর মোটরসাইকেলের দিকে ছুড়ে মারি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, এসময় শুভর সঙ্গে আরও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন পর্যায়ক্রমে এসে যোগ দেন। এরপর তারা আমার বন্ধুকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন এবং আমার ছোড়া ইটের টুকরায় মোটরসাকেলের ক্ষতি হয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ তোলেন। তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শুভ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও তারা ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য বেপরোয়া আচরণ শুরু করেন। নিরুপায় হয়ে আমাদের কাছে থাকা তিন হাজার টাকা তাদের দিই এবং কোনো অপরাধ না করেও ক্ষমা চাইতে বাধ্য হই। এ ঘটনায় ‘ইভটিজিংয়ের পর ছাত্রীকেই জিম্মি করে টাকা নিলেন ছাত্রলীগ নেতা’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়।