জাতীয় সরকার গঠন এবং রাষ্ট্র মেরামতের জন্যও মিত্র খোঁজা হচ্ছে : জহির উদ্দিন স্বপন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ২৮ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৭ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনের জন্য আমরা রাজনৈতিক মিত্র খুঁজছি না। নির্বাচন-পরবর্তী ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠন এবং এর ভিত্তিতে রাষ্ট্র মেরামতের জন্যও মিত্র খোঁজা হচ্ছে।
আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম ক্লাবে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন।
জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ অপরিহার্য’ র্শীষক সভার আয়োজন করে বিএনপির মিডিয়া সেল।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নির্বাহী কমিটির ও মিডিয়া কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মীর হেলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এনি।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, শহীদের রক্তে অর্জিত এই দেশ আজ দূঃসময়ে মিলিত হয়েছে। নিখোঁজ পিতার কোমলমতি সন্তানেরা স্বজনের সন্ধানে রাজপথে কান্না করছে। নিশি রাতের ভোট ডাকাতি জনগনের স্বপ্নকে ধ্বংস করেছে।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, গত দুটি সংসদ নির্বাচনে যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে, তারপর আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প নেই। আর শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, সবার সম্মিলত আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে যখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তখন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সব দলকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে। তাই আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
লিখিত বক্তব্যে মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ পতনের পর কেবলমাত্র একটি সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রের রুটিন কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই গঠিত হতে পারে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব নয়। ইতি মধ্যে তার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশের জনগণ।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, আইনের শাসন,কথা বলার অধিকার সহ সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। গত ১০ বছরে দেশের মারাত্মকভাবে সমাজিক মূল্যবোধ হারিয়েছে। এখন রাষ্ট্র মেরামত প্রয়োজন। এজন্যই তারেক রহমান গণতন্ত্রকামী সকল দল ও শক্তিসমুহকে নিয়ে নির্বাচনোত্তর একটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় সরকার গঠন এবং জনগণের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্বশীল দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ উপস্থাপন করা হয়েছে। বিএনপি একটি জাতীয় সরকার গঠন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ হলে রাষ্ট্রের সকল অঙ্গ স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া যেমন দেশকে কয়েকশত বছর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারেক রহমানও সেই চিন্তা করছেন।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বিএনপি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, রাষ্ট্রকাঠামোতে গুনগত পরিবর্তন চায়। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ আলোকে বিএনপি রাষ্ট্র রুপান্তর মুলক সংস্কারের পরিকল্পনা করছে।
মাহাবুবে রহমান শামীম বলেন, একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠন এখন সময়ের দাবি। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে অপসারণ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদব্যবস্থার ধারণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্দলীয় সরকারে অধীনেই নির্বাচন হবে, বিএনপিকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। এটা দলের অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত। এ অবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভুঙ্গুর রাষ্ট্র মেরামতে জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ সংসদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
সভায় বিশিষ্টজনরা বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার যুগোপযোগী সংস্কারে নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে একমত পোষণ করে নানা ধরনের পরামর্শ দেন।
উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া সেলের সদস্য আলী মাহমুদ, আতিকুর রহমান রুমন, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর।
সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড.সিদ্দিক আহম্মদ চৌধুরী, অধ্যাপক হায়াদ হোসেন, অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, প্রকৌশলী মো.জানে আলম, সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহনোয়াজ, অ্যাডভোকেট এনামুল হক, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নসরুল কাদের, অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া, চিকিৎসক ডা.খুরশিদ জামিল চৌধুরী, সাংবাদিক জাহেদুল করিম কচি, চিকিৎসক ডা.তমিজ উদ্দীন মানিক, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, অধ্যাপক ড.আবদুল আলিম, অ্যাডভোকেট বদরুল আলম, প্রফেসর মো.জসিম উদ্দীন, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, আইনজীবি, পেশাজীবি নেতৃবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এখন ভুলন্ঠিত। নির্বাচন কমিশন আছে, ভোটাধিকার নেই, সংসদ আছে, কার্যকারিতা নেই, সরকার আছে, বৈধতা নেই, প্রশাসন আছে, নিরপেক্ষতা নেই, আদালত আছে, ন্যায়বিচার নেই। সব কিছুই হচ্ছে আওয়ামী দুঃশাসনের কারনে।