বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট ‘জলাবন্ধতা’ সরকারের মেগা উন্নয়নের ফল : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ২৫ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:২১ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সৃষ্ট ‘জলাবন্ধতা’ সরকারের মেগা উন্নয়নের ফল বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। আপনারা জানেন, আজকে উত্তরার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএমপি কমিশনার একটা সার্কুলার দিয়েছেন যে, এই সড়কটা ব্যবহার না করার জন্য। গতকাল যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর ফলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এই রাস্তাটি আর চলাচলের উপযোগী নয়। এই কথাটা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছি এই রাস্তাটার কথা। এই যে মেগা প্রজেক্ট, মেগা উন্নয়ন তার একটা ফলশ্রুতি, সেজন্য আজকে এই অবস্থা। কথাটা এজন্য বললাম যে, আজকে এই(জলাবন্ধতা) বর্তমান অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এই তাদের মেগা উন্নয়নের কারণেই।’’
উত্তরার বাসায় কিভাবে যাবেন তা নিয়ে নিজের দুচিন্তার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমি জানি না আমি এখন ফিরবো কি করে। তারপরে ধরে নিচ্ছি, যে অন্য বিকল্প রাস্তা বের করে ফিরতে হবে।”
ঘূর্ণিঝড় ‘সূত্রাং’ এর প্রভাবে ঢাকা-মহাসড়কের গাজীপুর অংশে বিভিন্নস্থানে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীর খিলক্ষেত, উত্তরা-বিমানবন্দর এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া উত্তরা যাওয়ার পথ ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে।
মতিঝিলে দৈনিক নয়া দিগন্তের কার্যালয়ে পত্রিকাটির ১৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ংকর সময় অতিক্রম করছি। আমার কাছে আজকে বিস্ময় মনে হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা সরাসরি জড়িত ছিলাম। তখন কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম আমরা মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নেবো, তার ভোটের অধিকার কেড়ে নেবো, তার কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবো। এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবাই বসে আছেন তাদের লেখার অধিকার কেড়ে নেবো।”
তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭৫ সালের যে অবস্থা আমাদের আপনাদের পার হতে হয়েছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ওই একাত্তরের চেতনাকে তারা বাস্তবায়িত করেছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে তারা স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত করেছে। আজকে আবার একইভাবে তারা এই স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধে কথা বলে তারা মানুষের অধিকারগুলোকে পুরোপুরিভাবে কেড়ে নিচ্ছে।”
তিনি আরোও বলেন, ‘‘এই সময়টা আমাদের অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে, অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করতে হবে এবং আমাদের জয়লাভ করতে হবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে যে আশা, যে স্বপ্ন, যে আকাংখা আমরা দেখিছিলাম, সেটাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আজকে প্রয়োজন সেটা হচ্ছে যে, যারা আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে, যারা আমাদের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে… এখানে একজন সাবেক বিচারপতি সাহেব বলেছেন, সংবিধান মেনে চলতে হবে। কোন সংবিধান? আমি জানতে চাই পরিস্কার করে।”
তিনি বলেন, ‘‘যে সংবিধানে আমার অধিকার হরণ করা হয়েছে, যে সংবিধানের মধ্যে কেটে ছেঁটে তিনটি অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে যে, এটা কোনোদিন পরিবর্তন করা যাবে না। যে সংবিধানে আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যে, আমরা একটা স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমরা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবো সেই সংবিধান অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সেই সংবিধান অবশ্যই আমাদের মানুষের জন্য। আমরা যেটা চেয়েছিলাম যেটাকে করার জন্য এই সংবিধানে অবশ্যই আমাদের কিছুটা পরিবর্তন আনতেই হবে।”
তিনি আরোও বলেন, ‘‘আমরা বলেছি খুব পরিস্কারভাবে যে, আমরা সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করব। যদি আমরা জনজনের ম্যান্ডেটে বিজয় অর্জন করতে পারি সাংবিধানিক কমিশন তৈরি করে আমরা সেই অগণতান্ত্রিক, জনগন বিরোধী যে সমস্ত বিষয় সংযোজন করা হয়েছে সেগুলোকে আমরা বাতিল করে আমরা জনগনের জন্য যেটা প্রয়োজন, ৭২ সালে যেটা করা হয়েছিলো তার আশেপাশে নিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা যুগোপযোগী একটা সংবিধান আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘কথাটা খুব পরিস্কার। এতে অন্য কেউ কিছু বললে, আপনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন- তাতে তো আমার বিরুদ্ধে এখন রাষ্ট্র বিরোধী মামলা হওয়া উচিত। সেটা তো হতে পারে না। ব্যাখ্যাটা খুব পরিস্কার এদেশের মানুষ যা চাইবে সেটাই হচ্ছে সংবিধান এবং সেই সংবিধান আমি মনে করি, বর্তমান যে সংবিধান আছে তা মানুষের আশা-আকাংখা পুরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
ফখরুল সাংবাদিকদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, ‘‘ আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাব, বাংলাদেশকে যেন আমরা সত্যিকার অর্থেই একটা অত্যন্ত প্রগতিশীল জনপদ হিসেবে তৈরি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার যে অবস্থা সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারি, আমরা যেন বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্য, ন্যায় বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধের কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করতে পারি সেজন্য আপনারা অতীতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অব্যাহত রাখবেন। আপনারা জনগনের পাশে দাঁড়াবেন এই বিশ্বাস আমার আছে।”
অনুষ্ঠানে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইকতেদার আহমেদ, ব্যারিস্টার মইনুল ইসলাম, নয়া দিগন্তের ব্যারিস্টার শিব্বির মাহমুদ, আলমগীর মহিউদ্দিন, সালাউদ্দিন বাবর, মাসুম খলিলী, বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিই্উজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।