কোনো অঘটন হলে এর সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০৯ পিএম, ২১ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
খুলনার বিভাগীয় সমাবেশে ‘কোনো অঘটন হলে এর সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘‘২২ অক্টোবর খুলনায় আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ আছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার ইতিমধ্যে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করছে খুলনায়। তারা পথে পথে নেতাকর্মীদেরকে, সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করছে।
‘‘খুলনার সমাবেশে যেন বাধা সৃষ্টি করা না হয় তার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। যদি কোনো রকম সমস্যা তৈরি হয় তার সকল দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে। এটা প্রমাণিত হবে যে, এই সরকার আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, আমাদের সভা-সমাবেশ তারা করতে দিতে চায় না।”
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘শুধু তাই নয়, গতকাল রাতে তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যেখানে তিনি এটার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে গিয়েছেন, তিনি যে বাসায় অবস্থান করছেন সেখানে পুলিশ রেইট করেছে এবং সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। আমি কিছুক্ষণ আগে খবর নিয়েছি যে, এখন নির্দেশ দিয়েছে যে, পথে পথে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে সেখানে গ্রেফতার করার জন্য।”
‘‘গতকাল তারা রামদা, লাঠিসোটা অস্ত্র নিয়ে শোডাউন করেছে, মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। আমি এই গ্রেফতার এবং এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করবার যে প্রচেষ্টা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভোলা-মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ-যশোরে পুলিশের গুলিতে ৫ জন নিহত এবং সারাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে খুলনায় সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ হবে।
সমাবেশ উপলক্ষে শুক্রবার ও শনিবার গণপরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজ যেটা হয়েছে যে, সমস্ত গণপরিবহন তারা বন্ধ করে দিয়েছে এবং কথা আছে যে, ট্রেন তারা..., লঞ্চও বন্ধ করছে। কিন্তু এটাতে সাধারণ মানুষের যে জীবনযাত্রা তাকে সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিতভাবে ব্যাহত করছে।”
‘‘এখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকার চায় না যে, মানুষ একটা গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের যে কথা, তাদের যে বক্তব্য, তাদের যে প্রতিবাদ সেটা প্রকাশ করুক। তারা একটা সংঘাতের দিকে চলে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে এই রাস্তা থেকে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।”
‘সরকার জনভীতি রোগে আক্রান্ত’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘খুলনায় নিশ্চয় আপনাদের প্রতিনিধিরা আছেন তাদের কাছ থেকে জানতে পারবেন। আজকের পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট আপনারাই করেছেন। প্রত্যেকটা পত্র-পত্রিকায় যে কিভাবে তারা একটা রেইন অব ট্রেরর সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এটা তারা ময়মনসিংহে করেছিল, চট্টগ্রামে করেছিল। বাট নাথিং ওয়াট।”
‘‘কারণ তো একটাই। এরা (সরকার) জনভীতি রোগে ভোগে। এটা হচ্ছে পিপলস ফোবিয়া রোগ হয়েছে তাদের। মানুষ দেখলেই ভয় পায়। যে কারণে তারা নির্বাচনগুলো ওইভাবে করে যাতে করে জনগণকে বাদ দিয়ে করা যায় সেই পদ্ধতিতে তারা নির্বাচন করছে। রাষ্ট্র চালাতে চায় তারা মানুষকে বাদ দিয়ে। এটা তাদের অসুখটাই তাই, রোগটাই তাই।”
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘‘ভয়টা কীসের তাদের? কি কারণে তারা সমস্ত কিছু বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশগুলো বন্ধ করতে চাচ্ছে। একটাই তো কারণ। যে মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না।”
‘‘জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদের ভেসে যেতে হবে, এভাবে যদি জনগণ জেগে উঠে, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে তখন তাদেরকে অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় সরে যেতে হবে। এটাই তাদের ভয়।” গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
‘দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার কারণেই দুর্ভিক্ষের পদধবনি’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চয় অমর্ত্য সেনের বইটা পড়েছেন। যেখানে উনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর্যালোচনা করতে গিয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষটা ছিল মানবসৃষ্ট, মানুষদের দ্বারা তৈরি করা। অর্থাৎ তখন যারা ক্ষমতাসীন ছিলেন তাদের অব্যবস্থাপনা, তাদের দুর্নীতি, তাদের অযোগ্য, তাদের অদক্ষতার কারণে সেই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। আজকে সেই একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। এটা আমরা বারবার করে বলে আসছি।”
‘‘দুর্ভিক্ষ তো আগাম পদধবনি শুনতে তো পাওয়া যাচ্ছেই। আমরা কিছুদিন আগেও বলেছি যে, আগাম পদধবনি শোনা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। তখনও তারা আমাদেরকে। এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন সেটা। এই যে ব্যর্থতা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটা এখান থেকে প্রমাণিত হয়।”
‘কৃষকদের গোল্ড মেডেল দেয়া উচিত’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের তো বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দেয়া উচিত। তারা দিবারাত্র পরিশ্রম করে যে ফসল ফলায় তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ কোনো রকমের খেয়ে বেঁচে থাকে।”
‘‘এরা মুখে বলে যে, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। আর অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ টাকার খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করছে। কয়েকদিন আগেও দেখেছেন বিদেশ থেকে আমদানি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের পুরো লক্ষ্যটা হচ্ছে- লুট করা, চুরি করা সবখানে।”
‘অবশ্যই ন্যায় বিচার যেন পায় তা দেখা হবে’
সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী যাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর দিচ্ছে তাদের প্রতি যদি অবিচার করা হয় তাহলে আপনারা ক্ষমতায় গেলে তারা ন্যায় বিচার পাবেন কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা তো সবসময় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। আমরা তো স্পষ্ট করে বলছি, আমরা সামাজিক ন্যায় বিচার, মূল্যবোধ, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করবো।”
‘‘অবশ্যই আমরা এগুলো যেন সকলে সমান বিচার পায় এটা আমরা দেখবো।”
বিদ্যুৎ খাতকে সরকার ‘বিলিয়নিয়ার’ তৈরির কারখানায় পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সম্প্রতি জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এবং সারাদেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে শুক্রবার সকালে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘গত এক যুগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেন লুটপাটের মাধ্যমে বিলিয়নিয়ার বানানোর শিল্পে পরিণত হয়েছে। লোডশেডিং বেড়েই চলেছে। জাতীয় গ্রিডেও বিপর্যয় ঘটছে। প্রশ্ন হচ্ছে এক যুগের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ খাতে এতো বিপুল অর্থ ব্যয় করেও কেন আজ বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার নসিহত দেয়া হচ্ছে? কেন বিদ্যুৎ খাত আজ অর্থনীতির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে?”
‘‘উত্তর একটাই, এই সরকার একটা লুটেরা। তাদের (সরকার) লাগামহীন দুর্নীতি ও হরিলুটের খেসারত আজকে জনগণকে দিতে হচ্ছে।”
গত ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও এখনো বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানানো হয়নি। এই অদক্ষ সরকারের অপরিকল্পনাহীনতা, অপরিণামদর্শিতা ও জবাবদিহিতার কারণেই তারা এমন উদাসীনতা দেখাতে পারছে। পিজিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই তো মুখ্য নয়। লোক দেখানো গল্প-কথার প্রতিবেদন নয়। জাতি জানতে চায় কেন এই বিপর্যয় ঘটলো এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয় এড়াবার রোড ম্যাপ কি?’’
‘‘বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সময় উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক সংযোগ- এই চারটি মৌলিক স্তরের সুসমন্বয় করা হয়নি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সঞ্চালন যেখানে মাত্র ৬৯% ও ১৮০% বেড়েছে, সেখানে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ৪১৭%। উৎপাদন পরিকল্পনার পরিণামদর্শিতার অভাবে মহাপরিকল্পনাটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কলকারখানার চরম দুরবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘নজিরবিহীন লোডশেডিংয়ের কারণে উচ্চমূল্যের ডিজেল জেনারেটর চালিয়ে কারখানা সচল রাখতে গড়ে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। গ্যাস নির্ভর বড় শিল্প যেমন সিরামিক্স টেক্সটাইলগুলো ধুঁকছে। জেনারেটর চালিয়ে স্পিনিং মিলগুলো সচল রাখা যাচ্ছে না।”
‘‘সরকার সব কিছুর জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর করোনা সংক্রমণের দোষ দিয়ে পার পেয়ে যেতে চাচ্ছেন। অথচ করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগ থেকেই সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতি খাদের কিনারায় চলে এসেছিল।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এখন যেটা চলছে সেটা লুটপাটের অর্থনীতি। এটাকে বলে আওয়ামী অর্থনৈতিক মডেল। বাংলাদেশে এখন আপনারা এই আওয়ামী অর্থনৈতিক মডেলের রিফলেকশন দেখতে পারছেন। ভবিষ্যতে আরো দেখতে পারবেন।”
‘বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র : সাদা হাতি’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকারের অসত নীতির কারণেই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সাদা হাতিতে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশে আগেও ছিল। কিন্তু গত এক যুগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেন লুটপাটের মাধ্যমে বিলিয়নিয়ার বানানোর শিল্পে পরিণত হয়েছে।”
‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এক দিকে চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ আমদানিও করা হচ্ছে। তাই শেয়ারবাজার পতনের মতো বিদ্যুৎ খাতে সংকট অনিবার্য ছিল। প্রহর গুনছিল কখন বিস্ফোরণ হবে। এখন সেই বিস্ফোরণ শুরু হলো।”
‘গ্রিড বিপর্যয়ের তদন্ত : উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘‘আমাদের দেশে একটা কথা আছে না- উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেয়া আর কি। চাকরি গেলে তো পিজিসিবির এমডির যাওয়ার কথা, তারই তো সব খেয়াল করার কথা।”
‘‘ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার-এনএলডিসি স্থাপন হয়েছে অনেক দিন আগে। যেটা ডিজিটালাইজড করার কথা। যেটা দিয়ে সারাদেশে বিদ্যুতের অবস্থা দেখবে কোথায় কি হচ্ছে। সেটাকে এনালগ করে রাখছে তারা। সুতরাং ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার জন্য সুবিধা হচ্ছে। এই ক্যাপাসিটি চার্জের জন্য ডিজিটালাইজড করেন নাই। মোট কথা হচ্ছে পুরোটা চুরি আর জনগণ সেটা বহন করতে হবে।”
জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়সহ সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘অবশ্যই তার (বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী) দায় আছে। তার তো পদত্যাগ করা উচিত। টেলিভিশনে দেখলাম উনি উল্টো প্রশ্ন করছেন, ফখরুল ও টুকু কি বুঝে এই টেকনিক্যাল বিষয়ে।”
‘‘আরে আমি সাড়ে ৪ বছর এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম। তাতে বিদ্যুতের প্রত্যেকটা জিনিস বুঝি। ওহ তো ১৫ বছর আছেন মন্ত্রী, ওর তো বুঝা উচিত আরো বেশি।”
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিদ্যুতের এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো চাঁদের চেরাগ না যে, আসলেই বিদ্যুৎ দেবো। তবে আমরা মেজার নেবো। আমাদের যে মাস্টার প্ল্যান ছিল ওটাকে অনুসরণ করবো যাতে মানুষের উপরে ট্যাক্সেশন বেশি না হয়।”
প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন যে, বিএনপির আমলে এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি- এই প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা তো উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন। উনি ১৫ বছর ক্ষমতায় থাইকা জনগণকে বিদ্যুতে দিয়া এখন তারা বিদ্যুৎ পায় না। ট্যাক্স দিতে হয় তার জন্য।”
‘‘আর আমাদের আমলে যতটুকু লোডশেডিং হইছে জনগণকে ট্যাক্স গুনতে হয় নাই।”
আইএমএফ ঋণ প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি, বাজেট সহায়তার কথা বলে সরকার আইএমএফ ও এডিবির কাছে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। এই স্বল্প পরিমাণ ঋণ দেশের দুই মাসের খরচ জোগান দেয়ার জন্য আসলে যথেষ্ট নয়।”
‘‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমদানি নির্ভরতা বর্তমান জ্বালানি সংকটের অন্যতম কারণ। সরকার বাপেক্সকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। স্থলভাগে ও সমুদ্রে গ্যাস আবিষ্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এই জাতির দুর্ভাগ্য যে ভাগ-বাটোয়ারার সুবিধার জন্য দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেল দেয়া হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ওপেক কিংবা ওপেক প্লাস দেশগুলো থেকে তেল ও গ্যাস কেনার জন্য বড় ও স্থায়ী সরবরাহ চুক্তি করেনি সরকার। অথচ কমিশন খাওয়ার জন্য তেল উৎপাদনকারী নয় এমন বড় দেশ যেমন চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।”
‘‘অপরদিকে মোট আমদানির ৫০% স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কিনছে সরকার। কাতার ও ওমানের মতো দেশের বড় গ্যাস সরবরাহের চুক্তির অফার উপেক্ষা করে কমিশন খাওয়ার জন্য লোভে উচ্চদামে স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস থেকে কিনছে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।