অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৩ পিএম, ১৫ অক্টোবর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫৬ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে কোন দিন কখনো কোন নির্বাচন সুষ্ট হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনকালীন সময়ে নতুন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি স্বচ্ছ পার্লামেন্ট গঠন হবে, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি পরিস্কার- মিথ্যা মামলা সাজাপ্রাপ্ত আমাদের নেত্রী দেশের মানুষের নয়ণেরমনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা, সে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আর অবিলম্বে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই আমরা যদি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন করে একটি জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সবার আগে তরুনদের চাকরীর ব্যবস্থা করা হবে। জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, জ¦ালানী তেলের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে, গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে।
আজ শনিবার (১৫ অক্টৈাবর) বিকেল পৌনে ৫টায় ময়মনসিংহ নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে মির্জা ফথরুল আরও বলেন, চ্রট্টগ্রামের মানুষ দেখিয়েছে, এখন ময়মনসিংহের মানুষ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন নতুন করে। এদেশের মানুষ এখন জেগে উঠছে, জেগে উঠবে। ইনশাল্লাহ আপনাদের সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় এই সরকারকে প্রদত্যাগে বাধ্য করব,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব। এই হোক আমাদের আজকের শপথ।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেছেন, আজকে আমি যখন ময়মনসিংহে রওনা দিলাম। গাজীপুর পার হওয়ার পর মনে হলো হরতাল চলছে নাকি কারফিউ চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, ট্রাক নেই। কিছু ছোট ছোট ট্রাকে আমাদের কিছু নেতা-কর্মীরা আসছে। এরপরে শুনলাম মাঝখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নাকি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, 'তারপর যখন কাছে পৌঁছলাম দেখলাম সোনার ছেলেরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের ছেলেরা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আজকের সভা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ তারা কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশকে আবার আমাদের সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। আমরা এসেছি এই যে দেখছেন চেয়ারটা খালি আছে। এটা কার জন্য? দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি আমাদের কারাবন্দি। তিনি আমাদের দলের প্রধান। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে এখন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা এই চেয়ারটা খালি রেখেছি আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলনে।
'আপনাদের অনুরোধ জানাতে চাই, এই তরুণদের, আমাদের দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ, যাকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি যে, তিনি আমাদের মুক্তির পথ দেখাচ্ছেন ও দেখাবেন- সেই আমাদের তরুণ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাকে যদি ফিরিয়ে আনতে চাই, দেশনেত্রীর যদি মুক্তি চাই, আমাদের লাখ লাখ মানুষের মিথ্যা মামলা যদি প্রত্যাহার করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের পাঁচ জন বীর সেনা ছাত্রদলের নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম, যুবদলের নারায়ণগঞ্জ শাওন ও মুন্সিগঞ্জের শাওন, যশোরের আব্দুল আলিম তারা প্রাণ দিয়েছেন। রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, পুলিশের গুলির সামনে বুকে পেতে দিয়ে আওয়াজ তুলেছে যে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। আপনারা তাদের সম্মান দেখাতে চান, তাদের শ্রদ্ধা করতে চান, তাদের রক্তদানকে বৃথা যেতে দেবেন না বলে শপথ নিয়েছেন। ওই শপথে আজকে আমাদের অটুট থাকতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। এ সময়
সমাবেশটি যৌথ ভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মামুদ আলম ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়মারম্যান ডা: এজেড এম জাহিদ হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, মশিউর রহমান।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুৃল আলম, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, মহিলাদল নেত্রী আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারন সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারন সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণ, সাধারন সম্পাদক জুয়েল' সহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সকাল থেকে ধানের শীষ ও জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও নেতাকর্মীদের ছবি সংবলিত ব্যানার ফেষ্টুন হাতে নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল সহকারে সমাবেশের মাঠে অবস্থান নেয় নেতাকর্মীরা। এরপর দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সভা শুরুর কয়েক মিনিট পরে সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর পাশে একটি আসন খালি রাখা হয় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য।
জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিএনপির এই বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এই সমাবেশকে ঘিরে গত দুইদিন ধরে ময়মনসিংহের সকল ধরনের যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পথে পথে নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। একই সাথে শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় নেতাদের হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি করা হয়েছে বলেও অডিভযোগ করেছেন বিএনপির র্শীষ নেতারা।
এছাড়াও শনিবার বিকেলে সমাবেশ থেকে ফেরার পথে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটলে নগরীর ১৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মাছুম;সহ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে।