বিতর্কিত কর্মকান্ড : মৎস্যজীবী লীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৩ পিএম, ১৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:২৬ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নীতি বহির্ভূত, বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের একক কর্তৃত্ব, গঠনতন্ত্র না মেনে সংগঠন থেকে নেতাদের অব্যাহতি, নীতি বহির্ভূত কর্মকান্ড ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের মৎস্যজীবী লীগের বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং বিশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে কথা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে থেকে বের হওয়ার সময় ওবায়দুল কাদের মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন।
এসময় মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম, রফিকুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক এম এইচ এনামুল হক রাজু এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় এবং প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য রাসেল ও ক্যামিল উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য রাসেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত বুধবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মৎসজীবী লীগের কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন।’
একই কথা বলেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য ক্যামিল। তিনি বলেন, ‘মৎসজীবি লীগের নেতাদের বিশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আলোচনা করেন। সেখানে সংগঠনটির কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আলোচনার সময় দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কমিটি কী আমরা ভেঙে দিতে পারি! মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব এবং বিশৃঙ্খলা হচ্ছে সেটা সমাধান করার জন্য তাদেরকে নিয়ে বসব। মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর অসুস্থ। তিনি সুস্থ হওয়ার পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসব।’
এর আগে নিজের একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে লায়ন শেখ আজগর নস্কর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিম, রফিকুল ইসলাম খাঁ, ফিরোজ আহমেদ তালুকদার, দপ্তর সম্পাদক এম এইচ এনামুল হক রাজু এবং উপ-প্রচার সম্পাদক ইউসুফ আলী বাচ্চুকে দল থেকে অব্যাহতি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিনি একাই স্বাক্ষর করেন।
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরে যান মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর। তিনি দেশের বাইরে গেলেও সংগঠনের কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব না দেয়ায় সংগঠনের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এ কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি সংগঠনের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আলিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার জন্য মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মো. সায়ীদুর রহমানকে নির্দেশ দেন। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশ অনুযায়ী আলিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এর পর দলীয় কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে নিজের অবর্তমানে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি নস্কর। এরপর তিনি দেশে ফিরে পাঁচ নেতাকে নিজের ক্ষমতা বলে অব্যাহতি দেন।
মৎস্যজীবী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ,আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা পালন করার অপরাধে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে তাদের অব্যাহতি দিয়েছেন নস্কর। নিজের অপরাধ ঢাকতে এবং একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর নস্কর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদক একক সিদ্ধান্তে বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কাউকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করার ক্ষমতা রাখেন না। অথচ তিনি সম্প্রতি গঠনতনন্ত্র না মেনে পাঁচ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
মৎস্যজীবী লীগ নেতাদের নীতি বহির্ভূত কর্মকা- এবং বিশৃঙ্খলায় আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে মৎস্যজীবী লীগকে স্বীকৃতি দেয়া হলেও সংগঠনের নেতাকর্মীরা এর মান রাখতে পারেনি। যা দলের জন্য খুবই দুঃখজনক। বিশেষ করে তাজরীন গার্মেন্টসের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের মূল আসামিকে টাকার বিনিময়ে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবি লীগের সভাপতি করার পরেই বিতর্ক সামনে আসে। এছাড়া মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যসহ বিস্তর অভিযোগ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মাত্র ১৩-১৪ জেলার কমিটি করা হয়েছে। বাকি জেলাগুলোর বেশিরভাগ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও সেদিকে কোনো নজর নেই। আর যারা টাকা দিয়ে কমিটিতে আসতে চান সেসব জেলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হয়।
নেতাকর্মীরা জনিয়েছেন, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ বাণিজ্য ও তাদের অর্পকমের প্রতিবাদ করলেই অব্যাহতি দিয়ে হয়রানি করা হয়। এসব অভিযোগ নিয়ে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর চিঠি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং মৎস্যজীবী লীগের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কী হচ্ছে এ সংগঠনের মধ্যে? কেন বারবার সংগঠনকে বিতর্কিত করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার চেয়ে বিতর্কিত এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাদের পদ দিয়ে প্যাকেট বাণিজ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্তদের মনোযোগ বেশি। এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড।