সিদ্ধিরগঞ্জে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দুই গ্রুপের কয়েক দফা সংঘর্ষ আহত-১৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩০ পিএম, ৬ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:১৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন ঘিরে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় সভাস্থলের চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে কেন্দ্রী নেতা-নেত্রীকে গাড়িতে তুলে দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি টিসি রোডস্থ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমানের বাসভবনের নিচতলায় ঘটনাটি ঘটে।
সভা চলাকালে মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ এবং হাইব্রিড বিতর্কে দ্বন্ধে¦ জড়িয়ে পড়েন মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি মো: জুয়েল হোসেন সমর্থিত সিব্বির গ্রুপ এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া রাজু গ্রুপ। এই দ্বন্দ্ব থেকেই মারামারির সূত্রপাত। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার বিকালে পূর্ব নির্ধারিত প্রস্তুতিমূলক সভা শুরু হয় মজিবুর রহমানের বাসভবনের নিচতলায়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া রাজুর সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জহিরুল হকের সঞ্চালনায় উক্ত প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সহ-সভাপতি এড. কাজী সাহানার ইয়াসমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিরাজ বিল্লাহ। প্রধান বক্তা ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবুর রহমান এবং বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া। প্রস্তুতিমূলক সভায় আলোচনা শেষে সিদ্ধিরগঞ্জের ৯টি ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের সময় হাইব্রীড বিতর্কে দুই গ্রুপ উত্তেজিত হয়ে হট্টগোলে লিপ্ত হয়। এসময় সভা স্থলে দুই গ্রুপের হাতা-হাতি শুরু হলে নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দু:খ প্রকাশ করে জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সিদ্ধিরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি থেকে বঞ্চিত। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কমিটি গঠনের জন্য দফায় দফায় নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় করছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে নেতাকর্মরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কমিটিতে আধিপত্যবিস্তারের জন্য মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, ভুমিদস্যু ও হাইব্রীডদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দু’টি গ্রুপ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে উঠেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ প্রস্তুতিমূলক সভার আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ওয়ার্ড নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করার একপর্যায়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সিব্বির তার কর্মীদের জীবন বৃত্তান্ত ফরম কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হাতে দেওয়ার জন্য উপস্থাপন করে। এসময় থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জহিরুল হক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও থানা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বর্তমানে দলে অনেক হাইব্রীড নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। তাই কমিটি গঠনের পূর্বে কর্মীদের সিএস, আরএস দেখে কমিটি গঠন করতে হবে। সিদ্ধিরগঞ্জের মোট ১০টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে ত্যাগীদের সমন্বয়ে কমিটি করার আহবান জানান তারা। এসময় মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন ও তাঁর অনুসারী সিব্বির আহমেদের গ্রুপ এবং আমিনুল হক ভুঁইয়া রাজুর গ্রুপের মধ্যে হাতা-হাতি শুরু হয়। তা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীরা কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন সভাস্থলে মারামারির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, আমিনুল হক রাজুর পক্ষে স্থানীয় একটি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ি ও কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিল। রাজুর পক্ষে তারা পুর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে আসে। ওই গ্রুপটি রাজুর নির্দেশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে।
এদিকে, সেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন, হাইব্রিড ও দলের বাহিরের লোকজন কেনো কমিটিতে আসবে? তখন জুয়েল হোসেনসহ তার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়ান। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের উভয়কে থামিয়ে দেন। পরে জুয়েল হোসেন ও সিব্বির আহমেদ মিছিল করতে করতে যাওয়ার সময় মিজমিজি টিসি রোড এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো সংঘর্ষে জড়ান উভয় পক্ষ।
তবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জহিরুল হক জানান, আমরা যারা দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছি, আমরা আশাবাদী তারাই দলের কমিটিতে স্থান পাবে। তবে আমাদের সাবেক মহানগর কমিটি সভাপতি জুয়েল হোসেন তার নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে কমিটি করতে চায়। যারা কখনো দলের জন্য ছিলো না। তাদের কাগজ নিয়ে তিনি নেত্রীর কাছে দেন। অথচ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন তার কাছে নাই।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেন বলেছেন, সিদ্ধিরগঞ্জে আগে ওয়ার্ড কমিটি আসবে, তারপর থানা কমিটি আসবে। এ রকমই বলছেন নেতৃবৃন্দরা। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের কমিটিতে অর্šÍভুক্ত করার প্রসঙ্গে বলেন, আসলে মানুষ কত কথাই বলে। মৌখিক কথা একটা, ডকুমেন্টস আরেক বিষয়। আমাদের সভায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের অনেক সিনিয়র নেতারা এসেছিলেন। এখানে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, তারা যাচাই-বাছাই করে দিবে। আমার মতে, সংগঠন করতে টাকা না, মেধা লাগে। আমি যখন মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ছিলাম, মানুষকে নিয়ে আমি কাজ করেছি। দেন-দরবারের বিষয়ে কে কি বলেছেন, আমি তো কিছু শুনি নাই।
আজকের সভায় হৈ চৈ হট্টোগোলের বিষয়ে তিনি বলেন, দলের ভিতরে প্রতিযোগিতা থাকে। এখানে কিছু মানুষ আছে, সবার তো সমান জ্ঞান নেই। জ্ঞান একেক জনের একেক রকম হয়। কিছু কর্মীরা আছে, হৈ-হুল্লোর করতেই পারে। এখানে অনেকরকম ঘটনা ঘটে। দিন শেষে আমরা সবাই একটা আওয়ামী পরিবার।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী সভাপতি আলহাজ্ব মজিবুর রহমান বলেন, আমার বাসভবনে থাকাকালীন অবস্থায় কোনো হাতাহাতির ঘটনা হয়নি। নেত্রী শাহানারা ইয়াসমিন চলে যাওয়ার পর আমি নারায়ণগঞ্জ চলে আসছি। পরে শুনলাম আশপাশে পোলাপান নাকি ঝামেলা করেছে। তবে আমার ঐখানে কিছু হয়নি।