গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে এই সরকারকে হটাতে হবে : ড. মোশাররফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৮ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৫ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে-প্রধানমন্ত্রীর এই কথা জনগণ বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আজ রবিবার বিকালে বাড্ডা হাইস্কুল মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি (গুলশান জোন) আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা বিদেশে গিয়ে বলেছেন যে, আগামী নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু হবে। কী বলব? আগের নির্বাচনগুলোতে ডাকাতি হয়েছে। তাই তো। আমরা এটা (প্রধানমন্ত্রীর কথা) বিশ্বাস করি না, এটা কেউ বিশ্বাস করে না, এটা এদেশের জনগণ বিশ্বাস করে না।
অতীত নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা ভোটারবিহীন সরকার দেখেছি। ১৫৪টা আসনে কোনো প্রার্থী ছিলো না। বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সেই নির্বাচন জনগণ বয়কট করেছিলো। আর গত নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি হয়েছে। আর উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলবেন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে- এটা কেউ বিশ্বাস করে না। আমাদের একটাই দাবি অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করেন এবং সংসদ বাতিল করেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হোক। আপনারা আসেন রাস্তায়, সেখানে আমাদের পরীক্ষা হবে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশে যে সংকটকাল চলছে, দেশে যে দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে-এটা আমাদের পরম দায়িত্ব এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনীতিকে মেরামত করা। এই দায়িত্ব আমাদের সকলকে নিতে হবে। দলমত নির্বিশেষে এদেশের সকল গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেশের জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমি বলতে চাই, এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে এই সরকারকে হটাতে হবে। তাই আমাদের সামনে একটাই টার্গেট এই সরকারের পদত্যাগ।
তিনি বলেন, এদেশে কোনো ইভিএম মার্কা ডাকাতি চলবে না। জনগণ নিজের হাতে নিজে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি তারা নির্বাচিত করবে, জনগণের প্রতিনিধির সরকার এদেশে প্রতিষ্ঠা করবে। সেই লক্ষ্যে আসুন, আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা উৎসাহিত, আমি এই মহানগরীর বিভিন্ন সমাবেশে গিয়েছি। এই ঢাকা মহানগর অতীতেও সকল স্বৈরাচারী সরকারকে গণআন্দোলনের মাধ্যমে হটিয়েছে। আজকে এই মহানগরে জনগণ জেগেছে, জাতীয়তাবাদী, গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তি জেগেছে। এই যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছে তাকে অব্যাহত রেখে আমাদের গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারেন সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এর দায়িত্ব একমাত্র আমাদের। এ সময় আওয়ামী লীগকে রাস্তায় পরীক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে রাস্তায় আসুন, সেখানে পরীক্ষা হবে। সরকারের দুর্নীতি আর বিদেশে টাকা পাচারের কারণে জ্বালানি তেলসহ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ করে মোশাররফ বলেন, আজ আমরা যে কারণে সমাবেশ করছি, এটা বিএনপির কোনো ইস্যু নয়। এটা এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের ইস্যু। আজকে এই সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করে বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। সরকার হঠাৎ করে শতকরা ৫০ শতাংশের বেশি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এ কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। আওয়ামী সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে ড. মোশারফ বলেন, আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ’৭২ থেকে ’৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী। আবার আজকের যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি বিনাভোটে একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর একবার ভোট ডাকাতি করে হয়েছেন। সারা পৃথিবীর কেউ গত নির্বাচনকে নির্বাচন বলে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম নকী, মুনসী বজলুল বাসিত আনজু, শামসুল হক, তহিরুল ইসলাম তুহিনসহ মহানগর উত্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।