‘আ.লীগের এসব নেতা আসলেই ঘরে ঢুকে মারতে পারে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫১ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪২ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সামশুদ্দোহা সিকদার বিএনপির নেতাকর্মীদের দমনে 'পুলিশ হয়ে' তাদের ঘরে ঘরে ঢুকে অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার 'পাড়াইয়া মাইরালামু' বলে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের গাজীপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহাকে হুমকি দিয়েছেন। তাদের এসব বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন বক্তব্য কী বার্তা দেয়? বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের এ ধরনের বক্তব্য নতুন নয় উল্লেখ করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ এ ধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণ করছে। পায়ের তলা থেকে মাটি যত সরে যাচ্ছে, ততই তারা এ ধরনের সন্ত্রাসী-ফ্যাসিস্ট তৎপরতার আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু, ইতিহাস বলে, এসব দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় না।'
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, 'এখন যা ঘটছে, অতীতেও একই ধরনের ঘটনা আমরা দেখেছি। তার মানে এখন আবার বাংলাদেশে একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ঘোষণা দিয়ে তারা সেটা করছে। এ কাজের পরিণতি সব সময় অশুভ। এর ফলে বিভাজন হয়, রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হয়, রাজনীতিতে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতার পালা বদরের পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। 'এসবের মাধ্যমে সহিংসতা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও বলপ্রয়োগ— এগুলোকে রাজনীতির অনিবার্য করে তোলা হয়। কিন্তু, এসবের ফল কখনোই কারো জন্য ভালো হয়নি। এর ফলাফল ভয়াবহ। আমরা আশা করি ক্ষমতাসীন দল এ জায়গা থেকে সরে আসবে', বলেন তিনি।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, 'এই আস্ফালনগুলো দেখে বোঝা যায় যে, আওয়ামী লীগের এসব নেতারা মুখে আইনের শাসনের বড় বড় বুলি আওড়ালেও আলটিমেটলি এ দেশের আইনের শাসনের প্রতি তাদের কোনো ধরনের শ্রদ্ধা-সম্মান কিছু নেই। তারা চাইলেই যেকোনো কিছু করতে পারে। তারা যে হুমকি দিচ্ছে, সেগুলো খুবই সঠিক-বাস্তব। কারণ, আসলেই তারা ঘরে ঢুকে মারতে পারে, যে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারে, গায়েব করে দিতে পারে। কারণ, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এরকম পর্যায়েই পৌঁছে গেছে। তাদের ওপরেই সবকিছু। দেশের বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর তাদের কোনো ধরনের শ্রদ্ধাবোধ নেই। তারা যে হুমকিগুলো দিচ্ছেন, সেটা শুধু কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির প্রতি হুমকি নয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকি। ফলে এটাকে শুধু দলীয়ভাবে দেখার সুযোগ নেই। এর মানে বোঝায় যে, প্রশাসনও কতটা বায়াসড হয়ে পড়েছে যে, তারা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করছে। প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। এটা বলার মানে কি বোঝায় যে পুলিশ তাদের হাতের পুতুল? পুলিশেরই তো এখন উচিত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া', যোগ করেন তিনি।
বিষয়ে জানতে চাইলে 'অতি উৎসাহী দুয়েকজন বিচ্ছিন্ন কথা বলেন' বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
তিনি বলেন, 'তারা দলের মুখপাত্র নয়। হয়তো অতি আবেগ-উত্তেজনায় তারা আলতু-ফালতু কথা বলে ফেলেন। সারা বাংলাদেশে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে যেন কোনো ধরনের উসকানিমূলক কথা বলা বা গ-গোল-মারামারি দলের নেতা-কর্মীরা যেন না করে। একজন থানা পর্যায়ের সহযোগী সংগঠনের নেতা অথবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কী বলল, সেটার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণ হয় না। তবে, আমরা সবাইকে সাবধান করে দিয়েছি। 'এখন একজন মাঠপর্যায়ের কর্মী কী বলল, সেটাই যখন মিডিয়া হাইলাইট করে, বুঝতে হবে এখানে ষড়যন্ত্র আছে। সারা দিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা-মন্ত্রীরা কথা বলছেন। সেই কথা মিডিয়ায় কোট হয় না। একটা থানা পর্যায়ের যুবলীগের সভাপতি কী বলল, সেটা যখন কোট হয়, তখন বুঝতে হবে যে, শুধু বিএনপি-জামায়াত নয়, অন্যরাও এর সঙ্গে উসকানি দেওয়ার জন্য, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য তৎপর হয়েছে। থানা যুবলীগের সভাপতি কী বলল, সেটা যখন মিডিয়া হাইলাইট করে, তখন বুঝতে হবে যে, মিডিয়ার অন্য কোনো খেলা আছে', যোগ করেন আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।