খুলনা মহানগর বিএনপি নেতা আজিজুল হাসান দুলুর ইন্তেকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৯ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাজনীতির উত্তাল প্রাঙ্গণ ছেড়ে চির দিনের জন্য বিদায় নিলেন সুদক্ষ সংগঠক, মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন সদা হাস্যজ্জল বিএনপি নেতা আজিজুল হাসান দুলু। আকষ্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সবার প্রার্থনাকে পেছনে ফেলে চলে গেলেন শেষ ঠিকানায়। রাজপথের সাহসী যোদ্ধা, বন্ধুবৎসল আড্ডাপ্রিয় আপনজন, স্নেহপরায়ন পিতা ও প্রিয়তম স্বামী-সব পরিচয়কে ভুলিয়ে বড্ড অসময়ে চলে গেলেন তিনি।
খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি, খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক, সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল হাসান দুলু আজ সোমবার বেলা ১১ টা ২৫ মিনিটে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তিনি ব্যাংকার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, নেতাকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে যান। এদিকে সদালাপী বিনয়ী ও মিষ্টভাষী এই নেতার মৃত্যুতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলের এই নেতার মৃত্যুতে ৪ দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে খুলনা বিএনপি।
গত ১৮ আগস্ট খুলনা মহানগর বিএনপির ১৭ নং ওয়ার্ডের সাংগঠনিক কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী যুবলীগের হামরা ও তান্ডবের ঘটনায় বিএনপি নেতা দুলুসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তার পরের দিন বিএনপি কার্যালয়ে বিএনপির প্রেসব্রিফিংয়ে দলের শেস কমসূচিতে অংশ নেন। তার পরের দিন ২০ আগস্ট সকাল ১০টায় তিনি অসুস্থতা অনুভব করলে প্রথমে খুলনা ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হৃদরোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাৎক্ষণিক তাকে রিং পরানো হলেও তার স্থাস্থ্যের অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার ভোরে ঢাকা উদ্দেশ্যে রওনা হন। দুপুরে ইউনাইটেড হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সোমবার বেলা ১১ টা ২৫ মিনিটে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
তার কফিন নিয়ে দুপুর আড়াইটায় ঢাকা থেকে রওনা হয়। কফিন খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন গোবরচাকা গাবতলাস্থ নিজ বাড়িতে আনা হয়। এ সময় বিএনপি ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রিয় এই নেতাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় করেন। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যে সৃষ্টি হয়। আত্মীয়-স্বজন ও নেতাকর্মীদের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
দলের এই নেতার মৃত্যুতে খুলনা বিএনপি ৪ দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সোমবার মাগরিব বাদ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আজিজুল হাসান দুলুর কফিনে মহানগর ও জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, এশা বাদ শহীদ হাদিস পার্কে জানাজা ও টুটপাড়া কবরস্থানে দাফন। আগামী মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল। আগামী বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল এবং আগামী বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায় খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে শোক সভা। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
আজিজুল হাসান দুলু খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের খুলনা মহানগরীর আহবায়ক, খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব খুলনার কোষাধ্যক্ষ, খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, খুলনা শিশু হাসপাতাল ফাউন্ডেশন, খুলনা শিল্প একাডেমি ও ডায়াবেটিকস সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি খুলনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ও রোটারী ক্লাবের সাথে জড়িত ছিলেন।
॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শোক ॥
খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল-কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা আজিজুল হাসান দুলু আজ সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। আজিজুল হাসান দুলু'র অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজিজুল হাসান দুলুর অকাল মৃত্যুতে তার শোকাহত পরিবার-পরিজনদের মতো আমিও গভীরভাবে সমব্যাথী। স্বেচ্ছাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সাবেক এই ছাত্রনেতার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। একজন বলিষ্ঠ সংগঠক ও নিবেদিতপ্রাণ বিএনপি নেতা হিসেবে খুলনা মহানগর বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হিসেবেও সংগঠনকে মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে খুলনা মহানগর বিএনপির যে ক্ষতি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়।
তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শণে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে তিনি যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন তা এলাকার নেতাকর্মীদের নিকট অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও সজ্জন মানুষ। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আলামীন যেন তাকে বেহেস্ত নসীব এবং শোকার্ত পরিবারবর্গকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।
বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় আজিজুল হাসান দুলুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
॥ মহানগর ও জেলা বিএনপির শোক ॥
খুলনা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আজিজুল হাসান দুলুর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে খুলনায় ছুটে আসেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপির সদস্য ও খুলনা-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। তারা মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর পরিবারের শোকাহত সদস্যদের পাশে কিছু সময় অবস্থান নেন এবং সমবেদনা প্রকাশ করেন। এদিকে বিএনপি নেতা দুলুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিবৃতি দিয়েছেন মহানগর ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এক বিবৃতিতে তারা দুলুর মৃত্যুতে দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলনে তার ত্যাগ ও অবদান ভুলবার নয়। তিনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক ও সাচ্চা জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিক।
বিবৃতিদাতারা হলেন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহীর, আবু হোসেন বাবু, কাজী মোঃ রাশেদ, খান জুলফিকার আলী জুলু, স ম আব্দুর রহমান, সাইফুর রহমান মিন্টু, সৈয়দা রেহানা ঈসা, এস এ রহমান বাবুল, অ্যাড. নুরুল হাসান রুবা, মোল্লা খায়রুল ইসলাম, কাজী মাহমুদ আলী, মোঃ রকিব মল্লিক, মোস্তফা উল বারী লাভলু, শের আলম সান্টু, মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ, আবুল কালাম জিয়া, অধ্যাপক মনিরুল হক বাবুল, বদরুল আনাম খান, শেখ তৈয়েবুর রহমান, মাহবুব হাসান পিয়ারু, শামীম কবির, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, আশরাফুল আলম নান্নু, একরামুল হক হেলাল, শামসুল আলম পিন্টু, মাসুদ পারভেজ বাবু, মেজবাউল আলম, শেখ সাদী, এনামুল হক সজল, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ।