সরকার যে গুম-খুনের হোতা তা জনগণের মুখে মুখে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৭ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৫ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার যে গুম-খুনের হোতা সে বিষয়টি সুপ্রতিষ্ঠিত জনগণের মুখে মুখে। সকল অপকর্ম করে মিথ্যার বাড়াবাড়ি দিয়ে কোনো বিজয় অর্জন হতে পারে না। উন্নয়নের ফানুস ও মায়াজালও এখন মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে দেশের ওপর চলছে আওয়ামী বেপরোয়া দখলদারী।
আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ক্ষমতার সীমাহীন লিপ্সায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে সরকার। দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সর্বনাশা অভ্যাস হয়ে গেছে সরকারের। এরা জনগণের ইচ্ছাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। বিনা নির্বাচনে বারবার ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে ওরা আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের একট নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ স্থান গড়ে উঠতে না দিয়ে এটিকে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসকে টিকিয়ে রাখার জন্য তারা গুম এবং ক্রসফায়ারকে অলিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় নীতির অঙ্গীভূত করেছে। তারই সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল সিলেটে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সকল মামলায় জামিনে থাকার পরও গতকাল সিলেট জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদকে বিনা ওয়ারেন্টে গভীর রাতে তার বাড়ির দরজা ভেঙ্গে উঠিয়ে নিয়ে গেছে র্যাব। তাকে র্যাব তুলে নিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত তাকে আটকের বিষয়টি ঘোষণা করেনি। অথচ এলাকার অনেকেই দেখেছে মকসুদ আহমেদকে র্যাব-ই উঠিয়ে নিয়ে গেছে এবং এখন মকসুদ আহমেদ র্যাবের হেফাজতে আছে বলে নানাভাবে জানা গেছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও আওয়ামী লীগ এখন অভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিএনপি’র ওপর আক্রমণ করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারী যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং রাষ্ট্রীয় সংগঠন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। এভাবেই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে এক বিপজ্জনক চোরাবালির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গুম ও ক্রসফায়ার এই শতকে গণতন্ত্র ও সভ্যতার প্রতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণকে রেখেছে শঙ্কা ও সংশয়ের মাঝে। দুঃস্বপ্নের অতীত এক অভিঘাত গুম ও ক্রসফায়ার। গতকালও জাতিসঙ্ঘের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল নাসিফ বাংলাদেশের গুম-খুন-মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এই সরকারের পতন এ মুহূর্তে জরুরি।
রিজভী আহমেদ বলেন, পরনির্ভর গণবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি পেতে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে এখন উন্মাদ হয়ে সরাসরি প্রতিবাদ মিছিলে গুলি করে হত্যা করছে। চোখে গুলি করে অন্ধ করে দেয়া হচ্ছে যাতে দেখতে না পায়। পায়ে গুলি করে সাহসী নেতাকর্মীদের চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে যাতে তারা রাজপথে নামতে না পারে। বুকে-মুখে-মাথায় গুলি করে ঝাঁজরা করে দেয়া হচ্ছে যাতে কথা বলতে না পারে। রংপুরের গঙ্গাছড়ায় তুলিপ, মোরসালিন আহমেদ, হাজানুর রহমান হারেস, নারায়ণগঞ্জে আলিফ, সিরাজগঞ্জের রনি ইমরান, চট্টগ্রামের ইব্রাহিমসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীকে চোখে গুলি খেয়ে এখন অন্ধ হতে বসেছে। কিশোরগঞ্জে ছাত্রদল নেতা শ্রাবণের পেটে-বুকে অসংখ্য গুলি করা হয়েছে। তার শরীর থেকে গুলিও বের করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রাণ কেড়ে নেয়া, চোখ কেড়ে নেয়া, হাত-পা কেড়ে নেয়া এ সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। খেলা হবে বলে সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন এটি সেই খেলারই নির্দয় নমুনা।
তিনি আরো বলেন, ২২ আগস্ট থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩২৯ জনের অধিক। আসামি করা হয়েছে ২০ হাজারের অধিক। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭১১ জন। আর ৩১ জুলাই থেকে নিহত হয়েছেন তিনজন।