গুলিবর্ষণকারী এসআই মাহফুজ কনক ক্লোজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৬ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জে গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলাকালে এক পুলিশ কনস্টেবলের কাছ থেকে চাইনিজ রাইফেল নিয়ে গুলিবর্ষণকারী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মাহফুজ কনককে ক্লোজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তাকে গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) ফখরুদ্দিন ভূঁইয়া। তবে এসআই কনককে ক্লোজ করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এদিকে জেলা পুলিশের এক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গুলিবর্ষণের বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ তদন্ত হতে পারে। কারণ সংঘর্ষের সময় এসআই কনক যে রাইফেল দিয়ে একাধিক গুলিবর্ষণ করেছিলেন সেই রাইফেলটি ছিল অপর পুলিশ সদস্যের। একজনের অস্ত্র দিয়ে অন্যজন গুলিবর্ষণের ঘটনা রীতিবহির্ভূত বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।
অপরদিকে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত ৩ জন আসামি (বিএনপি কর্মী) বৃহস্পতিবার আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে জবানবন্দিতে কী আছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল সেই সময়ের একাধিক ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে- সংঘর্ষের সময় এসআই মাহফুজ কনক ডান হাতে একটি লাঠি নিয়ে অন্য ডিবি পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে এসআই কনককে দেখা যায় একজন পুলিশ কনস্টেবলের কাছ থেকে একটি চাইনিজ রাইফেলে গুলি লোড করছেন।
ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন তখন এসআই কনক দাঁড়িয়ে নিচের দিকে খানিকটা ঝুঁকে এবং হাঁটু গেড়ে সরাসরি বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাইফেলটি তাক করে গুলি করছেন।
জানা গেছে, এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা সাধারণত রাইফেল ব্যবহার করেন না। তারা ছোট অস্ত্র যেমন পিস্তল বা রিভলবার ব্যবহার করে থাকেন।
অপরদিকে ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয় শাওন প্রধান নামে এক যুবদল কর্মী। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নিহত শাওনের পরনের গেঞ্জিটি বুকে ও পিঠের দিকে রক্তে লাল হয়ে গেছে। সে অবস্থায় শাওন কয়েক সেকেন্ড হাঁটার পরই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে ধরাধরি করে নগরীর ১০০ শয্যা সরকারি জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল) নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শাওনের ময়নাতদন্তের পর জানা গেছে, তার শরীরে কোনো গুলি পাওয়া যায়নি। তবে শাওনের বুকে ও পিঠে গভীর ক্ষত দেখা গেছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলিতে ৩০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। শটগানের গুলি বা রাবার বুলেট সাধারণত শরীর ভেদ করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু রাইফেলের ছোড়া গুলি যেহেতু স্পিন বা ঘূর্ণায়মান থাকে তাই সেটি শরীর ভেদ করার ক্ষমতা রাখে। নিহত শাওনের শরীরে লাগা গুলিটি বুকের দিকে আঘাত করে এবং স্থিরচিত্রে দেখা গেছে সেখানে আঘাতের চিহ্নটি একটি ছোট্ট ছিদ্রের মতো। যেহেতু পিঠের দিকে গভীর ক্ষত হয়েছিল তাতে এই ধারণা অমূলক নয় যে, তার শরীরে আঘাত করা গুলি কোনো রাইফেলের হতে পারে।