নারায়ণগঞ্জে আ’লীগে রিরোধ তুঙ্গে দু’গ্রুপের দুই নেতা আইভী-শামীম বাহাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৯ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম ওসমান এবং নাসিক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের। যদিও দুইজনই একই দলের নেতানেত্রী। কিন্তু একে অপরের বিরুদ্ধে বিষদাগার দলীয় নেতাকর্মীদের দুই শিবিরে বিভক্ত করে রেখেছে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভা সমাবেশে একে অপরকে ইঙ্গিত করে বিষদাগার করে আসছেন। যা দলীয় নেতাকর্মীদের বিব্রত করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিষদাগারের অভ্যন্তরে দুইজনই ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন নেতাকর্মীদের। যেমন শামীম ওসমান বলছেন, এখন সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হন। আবার আইভী বলছেন, যেখানে নৌকা সেখানেই যাবেন। সেটা শামীম ওসমানের সমাবেশ হোক বা অন্য কারো সমাবেশ হোক। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন। কিন্তু তাদের বিষদাগারযুক্ত বাহাস আলোচিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে ররাজনৈতিক অঙ্গনে। কারণ ঐক্যের ম্যাসেজ দিলেও বক্তব্যে ছাড়া দিচ্ছেন না কেউ কাউকে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আইভী ও তার অনুগামীদের ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান বলেন, কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জে জনসভা ডেকেছিলাম। সেটা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। তারা বলেছিলেন, শামীম ওসমানের জনসভা। আমি শেখ হাসিনার কর্মী, শেখ হাসিনার কর্মী হয়েই মরতে চাই। ভাইয়ে ভাইয়ে অনেক বিরোধ থাকে। সবার কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, আসুন ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা এক থাকি। কারণ বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে হবে। অনেকেই পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেন। বলেন, অবস্থান পরিষ্কার করেন। অবস্থান সবার পরিষ্কার করতে হবে, বিএনপি জামায়াত আর সুশীলদের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। কে কোথায় কি করবেন, তার কৈফিয়ত একমাত্র শেখ হাসিনাকে দিতে হবে। ক্ষমতায় এসেছি শেখ হাসিনার জন্য। শেখ হাসিনা কোথায় কোন সিদ্ধান্ত নিবেন, এই ব্যাপারে কারো জিজ্ঞেস করার ক্ষমতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের থাকার কথা না বলে মনে করি। শেখ হাসিনার উপরে কেউ নাই বলে বিশ্বাস করি।
অন্যদিকে মেয়র আইভী গত আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ জেলা কার্যালয়ে এবং ৩১ তারিখ সিদ্ধিরগঞ্জে আয়োজিত শোক সভায় শামীম ওসমানের কঠোর সমালোচনা করেন। একই সাথে দলের নেতাকর্মীদের একত্রিত হবারও ডাক দেন আইভী। হঠাৎ করে আইভীর এমন সক্রিয় হওয়া দেখে ভ্রু কুঁচকেছে অনেকেরই। কারন আইভী সাধারনত রাজনীতিতে তুলনামূলক কম সক্রিয় থাকেন। প্রতিপক্ষ ওসমান পবিবার বলয়ের সমালোচনা করলেও নিজে সংগঠকের ভূমিকায় এসেছেন খুবই কম।
সিদ্ধিরগঞ্জে রাখা বক্তব্যে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার জন্য, আমাদের কর্মীদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নেতায়-নেতায় ঝগড়া চলুক। এতে আমি কর্মীদের কাছে অনুরোধ করছি, যারা মনে প্রাণে আওয়ামীলীগকে ভালোবাসেন তারা কোন বিভেদে জড়াবেন না। তারা যেখানে শেখ হাসিনা, যেখানে বঙ্গবন্ধু, যেখানে নৌকা সেখানেই যাবেন। সেটা হক শামীম ওসমানের সমাবেশ, সেটা হোক আইভীর সমাবেশ। যেটাই হোক, আপনারা আসল নেতৃত্বকে পছন্দ করে নেবেন। এমন কোন কাজ কর্মীরা করবেন না, পরে আপনাদের পালিয়ে যেতে হবে। এবং আপনাদের জন্য কোনো নিরীহ কর্মীকে মাইর দিতে হবে। অথবা মামলার শিকার হতে হবে। দয়া করে আসুন, এখনো সময় আছে ঐক্যবদ্ধের রাজনীতি করুন। একে অন্যের বিরুদ্ধে না বলে, মামলা মোকদ্দমার রাজনীতি পরিহার করে আওয়ামীলীগকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা কাজ করতে চাই। শেখ হাসিনার আদর্শে অনুসারী হয়ে রাজনীতি করতে চাই। ভাইয়ের রাজনীতি চাইনা। আর কোন অত্যাচারীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হবেন না। জায়গা জমি যারা দখল করে তাদের সাথে থাকবেন না।
এর একদিন পূর্বেই জেলা কার্যালয়ে রাখা বক্তব্যে আইভী শামীম ওসমানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, প্যাট্রোনাইজ করেন জামায়াত-বিএনপিকে। আপনি প্যাট্রোনাইস করেন হেফাজতের ফেরদৌসকে। আপনি ফেরদৌসকে কাজে লাগাচ্ছেন এখন জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। ফতুল্লায় রানিং বিএনপির নেতাকে ধরে এনে কোন কারনে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলেন? আপনার লজ্জা করে না। আপনিই নাকি বিএনপির বিপক্ষে কথা বলেন। ইউনিয়ন পরিষদের সবগুলো চেয়ারম্যান বিএনপির লোক বানিয়ে রেখেছেন। সেন্টু কি কোন দিন জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু বলবে?। আপনার মিছিলে কেন সেন্টু আসলো না? কেন ওই খানে দাঁড়িয়ে জয় বাংলা জয়, বঙ্গবন্ধু বললো না। আপনি টাকার বিনিময়ে মানুষকে দলে নিয়ে আসেন এবং টাকার বিনিময়ে অনেকের ক্ষতি করে ফেলেন। এই কাজগুলো থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করতে চাই, আপনার ভয়ে অনেকেই আমাদের সাথে এসে কাজ করতে চায় না। দলের মধ্যে আপনি সবচেয়ে বেশি বিভেদ তৈরি করেন। আপনি এই সমস্ত-সব বন্ধ করেন, না হলে আপনার পরিনতি খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।
দলের তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, সিটি নির্বাচনের পর আইভীকে এতটা কঠোর হতে দেখা যায়নি। শামীম ওসমানের বিশাল সমাবেশের পরেই যেন নড়ে চড়ে বসেছেন আইভী। নিজেকে আলাদাভাবে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একদিকে শামীম ওসমানের হাতে থাকা আওয়ামী লীগের একাংশ ও বিএনপি থেকে আগতরা। অন্যদিকে আইভীর সাথে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন সহ নেতাকর্মীর আরেক অংশ। এমন পরিস্থিতিতে সামনে যখন নির্বাচন এগিয়ে আসছে তখন দুজনের বিদ্ধেষমূলক মন্তব্যের পাশাপাশি ঐক্যের ডাক কোনভাবেই দলে ভারসাম্য রাখছে না।
মোটকথা রাজনৈতিক মাঠে শামীম ওসমান ও আইভীর বাহাস মিডিয়ার খোরাক যোগালেও দলের ভেতর সৃষ্ট বিবেধ প্রশমিত হচ্ছে না। বরং বাড়ছে। শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যের বিরোধ কোন দিন মিটবে না বলেও মত দিচ্ছেন দলীয় অনেক নেতাকর্মী। তাদের মতে, শামীম ওসমান মানেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ। তাকে ঘিরেই আওয়ামীলীগের শক্তিশালী বলয়। যা দলের হাইকমান্ডও অবহিত।
অন্যদিকে আইভী ভোটের মাঠে জনপ্রিয় হলেও রাজনৈতিক মাঠে দুর্বল সংগঠক। তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি দিলেও গত ৪ বছরে জেলা আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করাতো দুরের কথা ৭টি শূন্য পদ অদ্যাবধি পুরন হয়নি। এমনকি কেন্দ্রের দৃষ্টি কাড়ার মতো কোন কর্মসুচি বা সমবেশ করতে পারেনি জেলা আওয়ামীলীগ। যা গত ৩ বছরে এককভাবে শামীম ওসমান একাধিক সমাবেশ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। সবশেষ ২৭ আগস্ট শামীম ওসমানের জনসমাবেশ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে তুলেছে। এখন দেখার পালা আগামী দিনে আইভীর নেতৃত্বে তার বলয়ের নেতাকর্মীরা কি করে।