গুলি পুলিশের : আসামি ৫ হাজার বিএনপির নেতাকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৫ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১২:০৪ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে র্যালিতে গুলি করে যুবদল কর্মী শাওনকে হত্যা করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সংবাদ দেশের সকল মিডিয়ায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে। নিহত শাওনের লাশ কড়া পুলিশি পাহারায় গভীর রাতে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নিতে পারেনি তার পরিবারের সদস্যরাও। এ ঘটনার পর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতারা গোটা নারায়ণগঞ্জে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এদিকে যুবদল কর্মী শাওনের ভাইকে বাদি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পবিার রাত ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত পাঁচ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের দোষারোপ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শাওন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছোড়া ইট ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে শাওন মারা যান। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, শাওন নবীনগর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল সকালে শাওন ওয়ার্কশপের মালামাল কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা ১টার দিকে শাওনের ভাই মিলন মুঠোফোনে খবর পান, শাওনের লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। পরে মিলন হাসপাতাল গিয়ে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে মিলন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী ইট-পাটকেল ও লোহার রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে এবং পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শাওন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পাকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতকর্মীরা ইট-পাটকেল ছোড়েন, ককটেল বিস্ফোরণ করে ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকলে ওই ইট-পাটকেল ও অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে রাস্তায় থাকা লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে মামলার বাদী মিলন এজাহারে বিএনপিকে দোষারোপের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এর আগে যুবদল কর্মীকে আওয়ামী লীগ বানানোর চেষ্টা করে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শাওন প্রধানের বাড়ির সামনে শাওনকে যুবলীগ কর্মী দাবি করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
তবে স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা গেছে, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন এবং তিনি যুবদলের কমিটিতে পদ পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ ছাড়া শাওনের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, তিনি নিজেকে যুবদল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন। শাওন প্রধান যে যুবলীগের কর্মী নয়, তা নিশ্চিত করেছেন তার চাচা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী। শাওন তার চাচাতো ভাই মৃত সাহেব আলীর ছেলে।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় তিনজন ছাত্রলীগ নেতা, দুজন ব্যবসায়ী, শাওনের মামা, বন্ধুসহ অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, শাওন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
স্থানীয়ভাবে মৎস্যজীবী দলনেতা সলিমুল্লাহ হৃদয়, যুবদল নেতা আমীর ব্যাপারী, শাহ আলী ও মহসিন ব্যাপারীর সঙ্গে শাওনের সখ্য ছিল। বক্তাবলী ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য চেষ্টা করছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমানের অনুসারী ছিলেন শাওন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাওনের এক মামা বলেন, ‘শতভাগ নিশ্চিত থাকেন, শাওন যুবদল করত। কিন্তু সবকিছু বলা যায় না। বুঝেন তো। অনেক কিছুই বলা নিষেধ।’
শাওনের পরিবার সূত্রে পাওয়া তার ফেসবুক আইডি ঘুরে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে তার যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘Shawon ahmed (রাজা) ’ নামে তার ফেসবুক আইডির ‘বায়ো’তে শাওন লিখেছেন, ‘কর্মীর চেয়ে বড় কোনো পদ নাই/সাক্ষী দেহের ঘামে ভেজা নগরীর রাজপথ/ফতুল্লা থানা যুবদল জিন্দাবাদ।’
গত ৩১ মে শাওনের ফেসবুকে দেয়া সর্বশেষ পোস্টে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও যুবদল নেতা সাদিকুর রহমানের একটি ছবি শেয়ার করেছেন। ছবিটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘নিশি রাতের ভোট চোরদেরকে বলে দিও ২০২৩ সালে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল নারায়ণগঞ্জ জেলা।’
এছাড়া শাওনের আইডি ঘেঁটে সেখানে দেয়া দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেয়া তার বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ও নিজের নামে (রাজা প্রধান) করা পোস্টার দেখা গেছে। পোস্টারগুলোতে তিনি নিজেকে ফতুল্লা যুবদল কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘শাওন যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিল। আমার সঙ্গে তার অসংখ্য ছবি আছে। শাওন প্রধান নাম হলেও রাজনীতিতে সে রাজা প্রধান নামে পরিচিত ছিল।’
বৃহস্পতিবার পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে শাওনকে দেখা গেছে। সংঘর্ষের আগে একটি মিছিলের সামনের সারিতে তার অবস্থান ছিল। সংঘর্ষের সময় নগরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় তাকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় শাওন প্রধানের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দিবাগত রাত দেড়টায় জানাজা শেষে নবীনগর কেন্দ্রীয় সূর্য্যাত আলী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।