ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না : আবদুল্লাহ আল নোমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৫ পিএম, ৩১ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫৩ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, বেগম জিয়াকে জেলে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাবো। আগামী নির্বাচন হবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্বাচন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচন করলে সেটা জনগণ মেনে নিবে না। ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট কারচুপি ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, বিরোধী ও বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান অংশীদার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আমরা অনেক সফল।একদিনে কোনও ফলই রাজনীতিতে আসে না। এটা পর্যায়ক্রমে সামনের দিকে এগোতে থাকে। পৃথিবীর কোনও দেশে ফ্যাসিস্ট সরকার গণআন্দোলনের মুখে টিকে থাকতে পারেনি।এ সরকারও পারবেনা।তিনি বলেন,আগামী নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই দিনের নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য জিয়াউর রহমান জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। গ্রামে একটি থানা তে যে মুক্তিযোদ্ধা ছিল একটা শহরে তত মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। অথচ স্বাধীনতার পরে তাদের ভাগ্য আর ফিরলো না। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সরকারের পরিকল্পনায় ছিল না। জিয়াউর রহমান তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পরিকল্পনা নিয়েছিলেন।
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যগে বিএনপির ৪৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী'র প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেগা প্রকল্পের অর্থে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উন্নতি হচ্ছে মন্তব্য করে নোমান বলেন, আজকে মেগা প্রকল্প থেকে যে অর্থ লুট হচ্ছে তার মাধ্যমে দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ১৯টি মেগা প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে।এই মেগা প্রকল্পের উন্নয়নে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে না, তারা শুধুমাত্র হয়রানির শিকার হয়েছে, তাদের অর্থ লুট করা হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের টাকার অংশীদার হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এই উন্নয়ন আসলে উন্নয়ন নয়। এটা অস্বাভাবিকভাবে মানুষ যেমন মোটা হয়ে যায় শরীরে চর্বি জমে, এক্সট্রা চর্বি। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের কথা সরকার বলছে, একটা শ্রেণি বা গোষ্ঠীর উন্নয়ন হচ্ছে। এই উন্নয়ন সাধারণ মানুষের নয়, এই উন্নয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উন্নয়ন হচ্ছে।এর ফলে আজকে দেশ এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছে যেখানে মানুষ দুই বেলা খাওয়ার জন্য তার যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংস্থান করা প্রয়োজন সেটাও করতে পারছে না।
এই সরকারের পতনের যে আন্দোলন এই আন্দোলন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ নয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার যে এর ফলে আজকে দেশ এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছে যেখানে মানুষ দুই বেলা খাওয়ার জন্য তার যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংস্থান করা প্রয়োজন সেটাও করতে পারছে না, বলেন তিনি।
প্রধান বক্তা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন,বিএনপির নেতৃত্ব আজকে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ করে যে আন্দোলন গড়ে তুলছে সেই আন্দোলনই হবে সরকার পতনের আন্দোলন। এই আন্দোলন হবে একদফার আন্দোলন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, সেই সরকারের তত্ত্বাবধায়নে যে নির্বাচন হবে তার মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ মুক্তি পাবে, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।
মীর নাসির আরো বলেন, দেশে নব্য বাকশালী শাসন চলছে। গণতন্ত্র সম্পূর্ণ পরাহত। ভোটবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের নৈতিক বৈধতা নেই। শীঘ্রই গণআন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের প্রকৃত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যতই নির্যাতন-নিপীড়ন আসুক সাহসিকতার সাথে তা মোকাবিলা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যাবে না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৪৪ তম প্রতিষ্টবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভা নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ে আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের সভাপতিত্বে যুগ্মআহাবায়ক নুরুল আমিন ও নুর মোহাম্মদ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবে রহমান শামীম,বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া।
বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহাবায়ক এমএ হালিম,আলহাজ্ব সালাউদ্দিন,অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইন্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন,সরুয়ার আলমগীর,কাজী সালাউদ্দিন, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, আবু তাহের,সেলিম চেয়ারম্যান, অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার,জাকের হোসেন,শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, গিয়াস চেয়ারম্যান, হাসান জসিম,মুরাদ চৌধুরী, শফিউল আলম,সরোয়ার উদ্দিন সেলিম,জুয়েল,মনিরুল আলম জনি,মেহেরুন নেসা নার্গিস, নুরুল হুদা,সাইফুল ইসলাম টুটুল প্রমুখ।
বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম বলেন, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এক ভয়ঙ্কর দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। মানুষের কথা বলা, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করে এক নির্বাক রাষ্ট্র সমাজ গঠনের আয়োজন করেছে। জনগণের প্রতিবাদ বিক্ষোভে দিশেহারা হয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার পুরো দেশে এক ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে। সরকার দুঃশাসন চালু করে মূলত জনগণের প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে।বিএনপির ওপর নির্বিচারে হামলা সরকারের এক অশুভ পরিকল্পনার অংশ। এর দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকেই বহন করতে হবে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন,বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ভোট গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা বলতে চাই, ইভিএম কেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই যাবে না বিএনপি। আওয়ামী সরকারের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও গোষ্ঠীতন্ত্রের স্বার্থ চরিতার্থের জন্য দেশের দুরাবস্থা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ব্যর্থতার জন্য মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে সংসদ বাতিল করে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন কমিশনের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে বিদেশীদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানের হারাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। অন্য দেশের কাছে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ আরেকটি যুদ্ধ করবে, আর সে যুদ্ধ হবে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার। বিএনপি কারো রক্তচক্ষুকে ভয় করে না। আমরা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।