নোয়াখালীতে বিএনপি-আ'লীগ সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা, আসামী ১৩০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৫ এএম, ৩০ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৪৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ১ হাজার ৩৪৮ নেতা-কর্মীকে আসামি করে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলার বাদী পুলিশ এবং অন্য মামলার বাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা।
গতকাল সোমবার (২৯ আগস্ট) রাতে সেনবাগ থানায় মামলা দুটি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দুটি মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌরসভার কাউন্সিলর মহিন উদ্দিন (৪২), পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব মিয়া মোহাম্মদ ওয়ালিদ বিন হায়দার (২৫), বিএনপির সাবেক জেলা কমিটির সদস্য জাফর খান (৬০), ছাত্রদলের কর্মী হাফিজুর রশিদ (২২), শহিদুল ইসলাম (১৯), মো. আকাশ (১৯), ইমরান হোসেন (১৯), মো. মুরাদ (২৫), মো. হৃদয় (২২), হুমায়ুন কবির (৩০), স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী মো. ইস্রাফিল (৩০), জেলা বিএনপির কর্মী মোহাম্মদ আলী (৫২), ইমাম হোসেন (৪০) ও আজিজুল হক (৫৪)।
এর আগে গতকাল বিকেলে উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের গাজীরহাট মোড় এলাকায় বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাতে থানায় একটি মামলা করেছে। মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানসহ ২২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও ৪০০ থেকে ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে একই সময় আওয়ামী লীগের মারধর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ডমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। এ মামলায়ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানসহ ২২৩ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলায় আরও ৪০০ থেকে ৪৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, দুটি মামলায় গতকাল রাতে ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হবে। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে দুটি মামলায় আসামি হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। আজ সকালে তিনি বলেন, তিনি বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি মারামারি করতে সেখানে যাননি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মারামারি করেনি, যা করেছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এখন একই অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। তাঁরা নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গণহারে মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানিতে মেতে উঠেছে। তিনি এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গতকাল বিকেলে সেনবাগ উপজেলার গাজীরহাট মোড় এলাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতা কাজী মফিজুর রহমান। বিকেলে বিএনপির একটি মিছিল সমাবেশস্থলের দিকে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখোমুখি হয়। সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও তিনটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩১ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগান থেকে আটটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।