আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করতে হবে : গয়েশ্বর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৫ পিএম, ২৮ আগস্ট,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১৫ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
যেখানে আঘাত সেখানেই পাল্টা আঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
আজ রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এরকম মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ’৭১-এর উদ্যোগে সংগঠনের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন : ইভিএম মেশিন ও আজকের গণতন্ত্র’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একাত্তর সালে আমরা যখন যুদ্ধে গেছি, মায়ের কাছে ফিরে আসবো ভাবি নাই। অনেকে আসেনি ফিরে। সুতরাং আজকেও পাকিস্তানিদের চেয়েও জঘন্য এই সরকারের চরিত্র। সুতরাং আজকের আন্দোলনটাকে মনে করতে হবে ইটস এ ওয়ার ফর এ ডেমোক্রেসি। এটা গণতন্ত্রের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ডু অর ডাই। যেখানে আঘাত, সেখানে পাল্টা আঘাত। এই দৃঢ় সংকল্প নিয়েই আমাকে রাস্তায় থাকতে হবে। একাত্তর সালে মায়েরাও কিন্তু সান্ত¡¡না পেয়েছে যখন স্বাধীনতাটা পেয়েছেন সন্তান হারানোর মধ্য দিয়ে। যাদের মায়ের বুক খালি, যার ভাই, যার স্বামী নাই তারাও কিন্তু, তারা যে জন্য লড়াই করছে, গণতন্ত্রের জন্য সোনার হরিণটা আমরা যদি জনগণের হাতের মুঠোয় এনে দিতে পারি আর জনগণের মালিকানা যদি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে আমাদের রক্ত, মামলা খাওয়া, জেলে খাটা সবই সার্থক হবে। আর যদি কিছুই না করতে পারি সকল কিছুই বৃথা। তাতে কিন্তু কোনো বীরত্ব বাড়বে না, তাতে আমাদের প্রতি কেউ সহানুভূতি জানাবে না, তাতে আমাদের ব্যথায় কেউ ব্যথিত হবে না। আমরা সরাসরি যারা রাজনীতি করি তারা যতটুক আঘাতপ্রাপ্ত, যতটুক ব্যথা পাই তার চেয়ে বেশি কষ্টে আছে দেশের জনগণ। এই যে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ঊর্ধ্বমুখি জিনিসপত্রের দাম- এটা কমার কোনো কারণ নেই, কমার কোনো সুযোগ নাই, প্রতিদিন বাড়বে। কারণ বাড়ার জন্য যেগুলো দরকার সেসব সরকার করছে।
গত শনিবার যশোরের চৌগাছার সমাবেশে ক্ষমতাসীনরা হামলা চালালে পাল্টা প্রতিরোধের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন মাইর খায় না, পাল্টা দেয়। এটা একটা ইতিবাচক দিক। গত পরশু যশোরের চৌগাছায় নেতা-কর্মীরা এমন ধাওয়ানি দিছে যে, আওয়ামী লীগকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা এখন সর্বত্র করতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অঙ্গীকারবদ্ধ যে, এই সরকারের অধীনে, এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় আমরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করব না। এটা বার বার আমাদের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে এবং সকল নেতা-কর্মীও বিশ্বাসী যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। সেজন্য নির্বাচন নিয়ে এখন আর আলোচনার সময় নাই। আজকের প্রেক্ষাপটে সরকারের পতন, তার প্রস্তুতি এবং কি কি ধরনের কর্মসূচি অবলম্বন করলে সরকারের পতন নিন্ডিত করা যায়- সেই আলোচনাই আমাদের এখন করতে হবে। অর্থাৎ আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত করতে হবে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করে নির্বাচন নয়। আমরা কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই জায়গায় থাকি নাই। বেগম খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত হননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা গেছি। ওই যে পুরানা কথাটা নেতা-কর্মী-সাধারণ মানুষ তাদের মধ্যে সংশয় থাকে যে, এখন তো বলছে নির্বাচনে যাবে না, পরে যদি আবার যায়। এই সংশয়টা কিন্তু কাটিয়ে ওঠার দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের কর্ম, কর্মপদ্ধতি, আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে আমাদের আন্তরিকতা-এগুলোর মধ্যে দিয়ে আমাদেরকে জনগণের আস্থাটা ফিরিয়ে আনতে হবে। এক শ্রেণি বিশ্বাস করছে যে, নির্বাচনে কিভাবে যায়? আরেক শ্রেণি বিশ্বাস করছে যে, নির্বাচন যাবে। এটা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং বিভিন্ন কথা-বার্তা, যেটা পর্দার অন্তরালে। কারণ আমরা এখানে যারা বসে আছি তাদের মধ্যে কে সংস্থার লোকের সাথে কথা বলে আমরা কেউ কারোটা জানি না এবং আমাদের রাতের অন্ধকারে যে কার সাথে যোগাযোগ করতেছে, কারে কি টোপ দিতেছে, তারা আসুক গ্যারান্টি দিতেছে, কারে কি টাকা দিতেছে তা তো আমাদের জানা নাই। এসব কথা প্রমাণ করার সুযোগ নাই। কিন্তু আকাশে বাতাসে কিন্তু এই কথাগুলো ভাসতেছে। অর্থাৎ পিপলস গ্রেজুয়েলি বিকেম কনফিউজড। এই জায়গাটায় আমাদের কিন্তু পরিষ্কার করতে হবে রাজপথের আন্দোলনে গতিবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। এটার জন্য আমি সর্বপ্রথম তাকে (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ধন্যবাদ জানাই। কেনো? সিক্রেট ডাইরি বিটুইন ইন্ডিয়া এন্ড আওয়ামী লীগ, অর সিক্রেট ডাইরি বিটুইন হাসিনা এন্ড মোদি- এটা উনি ফাঁস করে দিয়েছেন জাতির সামনে। ভারতের কাছে তারা দেন-দরবারটা করে এটা তো আমরা অনুমানে বুঝতাম। তো উনি রাজসাক্ষী, উনি সিক্রেসিটা জনগণের সামনে প্রকাশ করেছেন। সেজন্য তারে একটা আমি ধন্যবাদ জানাতে পারি। তারে যদি বেকুব বলে সেটা আওয়ামী লীগ বলতে পারে যে, গোপন কথা কেনো কইলি? আমি তারে এই কথার জন্য কিন্তু গালমন্দ করবো না।
গয়েশ্বর বলেন, সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সিক্রেট ডায়েরি ফাঁস করে দিয়েছে। এই সিক্রেট ডায়েরির রাজসাক্ষী তিনি। যেহেতু জনগণের কাছে তিনি এটি প্রকাশ করছেন সেজন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে পারি।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বলেন, সরকার অনুগত নির্বাচন কমিশন বসিয়েছে। এই আউয়াল কমিশন আমরা মানি না। বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে সব দল একমত তারা নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সরকার গণতন্ত্র চায় না। সরকার জানে জনগণ তাদের সমর্থন করবে না। তাই তো তারা ভারতের সাহায্য চায়।
জাতীয়তাবাদী প্রজম্ম ৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম প্রমুখ।