নির্বাচন ঘিরে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে : গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে বক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫২ পিএম, ২৭ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকার ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক ব্যবসাসহ জঘন্য অপরাধে জড়িত অপরাধীদের ছেড়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা বলেন, সরকার গুন্ডা, মাস্তানদের দিয়ে জনগণকে ভয় দেখিয়ে দমনপীড়ন করে রাখতে চায়। তবে ক্ষমতাসীনদের আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্ন পূরণ হবে না।
আজ শনিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে এসব অভিযোগ করেন সাত দলীয় নতুন জোটের শীর্ষ নেতারা। ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন কর, জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার কর ও দাম কমাও-মানুষ বাঁচাও’ স্লোগানে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি পদযাত্রা বের হয়ে পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগরে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, যারা বাংলাদেশে ক্যাসিনো চালু করেছেন, জুয়া খেলা চালু করেছেন, তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কোর্টকাচারি কোথায়? তারা গিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুল দিচ্ছেন!
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেক দেনদরবার করার পর পুলিশের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তাকে জাতিসংঘ আমন্ত্রণ জানিয়েছে, ভিসা পেয়েছেন। কিন্তু তিনি এই কনফারেন্সে যোগ দেয়ার বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না। এর চাইতে লজ্জার কিছু থাকতে পারে? পুলিশকে আজ সারা পৃথিবীর বুকে নিন্দার পাত্র বানানো হয়েছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, দেশ আজ সংকটের বেড়াজালে আবর্তিত। এখান থেকে উদ্ধার করতে হলে আমাদেরকে এখনই সোচ্চার হতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাতটি দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার ১৯৭৫ সালে দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিলো। তারাই আজকে ফের ক্ষমতায়। এখন তারা কোনো নিয়ম মানে না। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে টাকা লুটে বিদেশে পাচার করছে। আমরা এসবের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার গঠন করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে লুটপাট করছে। অতীতেও তারা দেশে লুটপাট করে দেশে দুর্ভিক্ষ তৈরি করেছিল। আজকে দেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা তাতে আরেকটি দুর্ভিক্ষ আসন্ন। আজকে দেশ শ্রীলংকার পথেই এগোচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব না থাকলে কেউ থাকবো না। গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারত আবারো ট্রানজিট তথা করিডোর শুরু করেছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তাদের মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ জানে না। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, নানা জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশে এ সরকারের গুন্ডা বাহিনী ছাত্রলীগ, যুবলীগ নানাভাবে হামলা করছে এবং একইসঙ্গে রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীও হামলা চালাচ্ছে। হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। ফলে তারা দেশে নানাভাবে লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। এখন তারা তেলের দাম বাড়িয়েছে। পানির দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এভাবে জনগণকে তারা শোষণ করছে।
গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর বলেন, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। তাদেরকে আমরা বাধ্য না করলে তারা থামবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা প্রকৃতপক্ষে সরকারের তথা শেখ হাসিনার বক্তব্য। তারা দেশটাকে ভারতের গোলামির জিঞ্জির পরিয়ে দিতে চায়। আমরা ভারতের জিঞ্জির পরার জন্য পিন্ডির জিঞ্জির ভাঙিনি। সরকার ভাঁওতাবাজি ও ভন্ডামির পলিসি নিয়েছে। তারা ঢাকায় সমাবেশ মোটামুটিভাবে করতে দিচ্ছে আর মফস্বলে তারা যুবলীগ-ছাত্রলীগ দিয়ে হামলা করছে। সারা দেশে তারা নৈরাজ্য কায়েম করেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিতে হবে। আজকে সরকারের পতন ঘনিয়ে এসেছে। আর কোনো ভন্ডামির সুযোগ নির্বাচন কমিশন পাবে না।
তিনি বলেন, ক্যাসিনো, মাদক ব্যবসাসহ জঘন্য অপরাধে জড়িত অপরাধীদের শেখ হাসিনা নির্বাচন উপলক্ষে ছেড়ে দিচ্ছে। যাতে ঢাকায় তারা গুন্ডামি, মাস্তানি করেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।