লাকসামে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচিতে ক্ষমতাশীনদের ধারাবাহিক তান্ডব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৪ পিএম, ২৬ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৪৬ এএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
গণবিরোধী এবং কতৃত্ববাদী শাসকদের পদত্যাগ, জ্বালানী তেল, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমুল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত উপজেলা/পৌরসভা/ ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসুচীকে কেন্দ্র করে গত ২২ আগষ্ট থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন লাকসাম পৌরসভা বিএনপির নিরীহ নেতাকর্মীদের অভিযোগ তুলছে নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মীদের বাড়ীঘরেও হামলা হচ্ছে। সেখানে রেহাই পাচ্ছে না পরিবারের নারী সদস্যরাও বলে অভিযোগ জানিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিএনপির এক স্থানীয় নেতাকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসকের কৃষ্ণপুর এলাকার পশিম দিকের রোডে একা পেয়ে বর্বোচিত হামলা করেছে ক্ষমতাশীন দলের কর্মীরা বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী।
আহত নেতা লাকসাম উপজেলাধীন উত্তরদা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শাহিন মোল্লা।
বিএনপি নেতারা বলেন, গত সোমবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক, লাকসাম পৌরসভা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মানিকের পিতার জানা যায় অংশ নিতে আসা অনেক নেতাকর্মীরাও হামলা থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি মানিকের পিতার জানা যায় লাকসামের বাহির থেকে আসা রাজনীতির বাহিরে থাকা তার নিকটাত্বীয়রাও। সেখানে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় লাকসাম পৌরসভা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী মফুকে। জয়েন্ট পাইপ দিয়ে পিটিয়ে মানিকের মামা শশুর মো. আকতার হোসেনের পা ভেঙ্গে দেয়া হয়।
আরা আরও বলেন, তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী মফু তার ছেলের তত্বাবধানে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপরদিকে লগ্নসর নামক স্থানে একটি হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসালয়ে চিকিৎসাধীন মানিকের মামা শশুর মনোহরগঞ্জ নিবাসী আক্তার হোসেন। গত মঙ্গলবার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে হামলা করা হয় যুবদল নেতা সাইমুন ও মামুনের উপর। পরশু সকালে লাকসাম পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মোরশেদ আলম সোহেলের নিজ মালিকীয় ষ্টিল ওয়ার্কসপে হামলা করে তাকে গুরুতর জখম করে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে সোহেল দৌড়ে পালিয়ে পার্শবর্তী সাহাপাড়ায় আত্বগোপন করে নিজের জীবন রক্ষা করেন।
গত বুধবার রাত ৯টার পর লাকসাম পৌরসভাধীন ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর বাতাখালীর বাড়ীতে হামলা করে সরকার দলীয়রা। সেখানে রেহাই পায়নি তার ছোট মেয়ে লিজা এবং ছোট ছেলে সাকিলও। মোহাম্মদ আলীর ছোট মেয়ে লিজার ঘাড়ে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে নগদ টাকা ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।
এসব হামলা থেকে রেহাই পায়নি ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আহবায়ক এমডি কাশেম। হামলার শিকার হয়ে তিনি ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে হামলাকারীদের বিচার দাবী করেন। এমডি কাশেমেরর ফেসবুক ষ্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল-
"কি অপরাধ ছিল আমার ।২৪ শে আগস্ট ২০২২ রোজ বুধবার দুপুর 2:30 মিনিটে আমি ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ- লাকসাম উপজেলার আহবায়ক হিসেবে পাশের গ্রামের একজন মুরুব্বির জানাজা নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে উত্তর পশ্চিম গাও চাঁদপুর রেলগেটের উপরে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয়- অস্ত্র নিয়ে আমাকে হামলা করে। তারা আমার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে এবং আমাকে বেদম মারধর করে। সন্ত্রাসীদেরকে আমি চিনেছি। আমি প্রশাসনের কাছে বিচার চাই এবং সাংবাদিক ও গোয়েন্দা ডিফেন্স এর কাছে আমার অনুরোধ আপনারা এ বিষয়টা একটু খতিয়ে দেখবেন। আমাকে দেখতে আমাদের কুমিল্লা জেলার ইসলামিক ফ্রন্ট এর সভাপতি আলহাজ্ব মীর মোঃ আবু বকর সাহেব এবং লাকসাম উপজেলা হিজবুর রাসুল কমিটির সভাপতি মাস্টার আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান ও ইসলামিক ফ্রন্ট সচিব মহিউদ্দিন সাহেব দেখতে যান।"
গত কয়েকদিন যাবত বিচ্ছিন্ন ভাবে এসব হামলায় আরও আহত হন যুবদল নেতা রুহুল আমীন, শহীদ উল্লাহ, সাদ্দাম হোসেন সহ আরও অনেকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর এসব হামলা ও মারধরের বিষয়ে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ব্যবহৃত সেলফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে আমরা লিখিত অভিযোগ পাইনি" পুনরায় এই প্রতিবেদক মৌখিক কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ওসি লাকসাম বলেন, "মৌখিক অভিযোগ, অভিযোগ হিসাবে গণ্য নয়। তবে আমরা এ পর্যন্ত মৌখিক কোন অভিযোগও পাইনি"।
এদিকে লাকসাম পৌরসভা বিএনপির একাধিক নেতৃবৃন্দ সরকারী দল কতৃক বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর এসব হামলা ও মারধর বিষয়ে বলেন, "কেন্দ্রঘোষিত ধারাবাহিক বিক্ষোভ কর্মসুচী আমরা এখনো শুরুই করিনি। আমাদের জেলা নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সমন্বয় করছেন। জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হলে কেন্দ্র বা জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে আমরা কর্মসূচী পালন করবো। কিন্তু তার আগেই গত ২২ তারিখ থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের যাকে যেখানে পাচ্ছে সেখানেই মারধর এবং বাড়ীঘরে হামলা করছে সরকার দলীয়রা। অনেকের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা এসব অমানবিকতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশী অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের নিরীহ নেতাকর্মীদের মারধর, তাদের বাড়ীঘরে হামলা বন্ধ করার জন্য লাকসামে সরকার দলীয় সিনিয়র নেতাদের প্রতি আহবান জানায়"।
আলাপকালে ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতারা আরও বলেন, "আমাদের দল বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দল, সরকারী দল সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মত আমাদেরও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করার অধিকার রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দেশে এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এসব আচরনে প্রমানিত হয় সরকারী দল গণতন্ত্রের কথা বললেও দেশে নুন্যতম গণতন্ত্র নেই। মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। লাকসামে আমাদেরকে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করার সুযোগতো দিচ্ছেই না। উপরোন্ত আমাদের নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর ধারাবাহিক ভাবে নির্যাতন নীপিড়ন চালিয়ে যাচ্ছে"।