বিভিন্নস্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলায় মির্জা ফখরুলের নিন্দা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৯ পিএম, ২৫ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:২৮ এএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে বুধবার গাইবান্ধা জেলাধীন গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। আরও আহত হয়েছেন থানা বিএনপির আহবায়ক মোঃ ফারুক আহমেদসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। মূলত অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল, কারণ তিনি বিএনপির সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতা। এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, খুলনার দৌলতপুর, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নেত্রকোণার কলমাকান্দাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলা এবং নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ন্যক্কারজনক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের এখন টিকে থাকার একমাত্র উপায় হলো বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিতত হামলা ও তাদেরকে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে দেশবাসীসহ বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের মনে ভয়ভীতি সঞ্চার করে ভয়াবহ অপশাসন জারি রেখেছে। গোটা দেশ এখন নরকপুরীতে পরিণত হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সরকারদলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে হামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিএনপিকে ধ্বংস করে আওয়ামী দুঃশাসন টিকিয়ে রাখা। কিন্তু এসব অপকর্মের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা প্রলম্বিত করার বাসনা বাস্তবায়িত করতে পারবে না। কারণ জনগণ এখন সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সমাবেশ চলাকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। হামলায় বিএনপি নেতা মকবুল, আমিরুল, যুবদল নেতা মাসুদ, কাইয়ুম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহেল, আল মামুন, ছাত্রদল নেতা সাদ্দাম, নাসিম হোসেন, ডানো, শ্রমিক দল নেতা উজ্জল, শফিকুলসহ ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। হামলাকারীরা নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ দুটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে।
গাইবান্ধা জেলাধীন গোবিন্দগঞ্জ থানা বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। আরও আহত হয়েছেন থানা বিএনপির আহবায়ক মোঃ ফারুক আহমেদ, ছাত্রদল নেতা শাওন প্রধান, আহসান হাবিব, আকাশ প্রধান, শাফিন আহম্মেদ, মিরাজ, বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপি নেতা হেলাল, কৃষকদল নেতা শাহ জামাল হেলাল, যুবদল নেতা রানা, ইব্রাহিম মুন্নাসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বিএনপির একজন সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতা বলেই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা সংঘটিত হয়েছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের আহবায়ক সুলতান সালাউদ্দিন লিটনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে আজ বৃহস্পতিবার কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে কৃষকদল নেতা মফিজ সরদার, ফরিদ জমাদ্দার, কাশেম ও জামাল হোসেনকে গুরুতর আহত করেছে। খাগড়াছড়ি জেলাধীন লক্ষীছড়ি উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ছাত্রদল নেতা রবিউল, এসকেন্দার, যুবদল নেতা বাহাদুর করিম ও কবিরসহ ৭ জনের অধিক নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করে। খুলনার দৌলতপুরে ছাত্রলীগের গুন্ডারা বিএনপি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং নেতাকর্মীদেরকে আহত করে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আসামি করা হয়েছে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক নাসির, ঘাটাইল উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হেলাল কমিশনার ও পৌর বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলামসহ যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও সকল ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। এছাড়া টাঙ্গাইল বিএনপির সাবেক নেতৃবৃন্দের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে সাটুরিয়া যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম কেরন মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। খারনৈ ইউনিয়ন বিএনপির ৭ নং গোবিন্দপুর ওয়ার্ডে বিএনপির সভা চলাকালে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। পরবর্তীতে বাউশাম বাজারে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। একইভাবে উক্ত বাজারে বিএনপির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুঁজে খুঁজে প্রায় ১৮টি দোকানে হামলা, লুটপাট এবং ভাঙচুর করে, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে গিয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান করি আক্তারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুটপাট করে ও বাড়ি সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতা মোঃ মনজাত আলী, ইসমাইল এবং মোহাম্মদ খলিল মিয়াকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তারা এখন ময়মনসিংহ চরপাড়া সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ইউনিয়ন বিএনপি নেতা কর্মীদের খুঁজে খুঁজে হামলা চালাচ্ছে ছাত্রলীগ- যুবলীগ সন্ত্রাসীরা। ২১ জন নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিকালে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ফয়সাল ও ইমনের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাদেরকে গুরুতর আহত করে, তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এসব ভয়াবহ কর্মকান্ড বর্তমান গণধিকৃত সরকারের চলমান দুঃশাসনেরই ধারাবাহিকতা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আওয়ামী সরকারের দ্বারা সংঘটিত উপরোক্ত ন্যক্কারজনক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।