বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি ঘোষণা
জনগণের কথা বিবেচনা না করেই নিত্যপণ্যের দাম জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি করছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩১ পিএম, ২৩ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৪৮ এএম, ১২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জনগণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা না করেই নিত্যপণ্যের দাম জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আজও সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৭ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরা ক্ষমতায় নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ একটি দল। গণধিকৃত একটি দল বলেই এরা খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো তদারকি করে না। এরা ন্যায়নীতির কোনো তোয়াক্কা করে না বলেই জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় নেয় না। সর্বত্রই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজ দলের লোকজনদেরকে বিপুল অংকের টাকা লুটের সুযোগ করে দেয়। অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী রাষ্ট্রে কালোবাজার, কালোপূঁজি ও কালো সিন্ডিকেটের ওপর নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা থাকে না।
আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, লোডশেডিংকে যাদুঘরে পাঠিয়েছেন বলে আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীরা জাতির সামনে যে নর্তন-কুর্দন করেছেন সেটির বিষাদময় পরিণতি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। রাজধানীসহ শহরগুলোতে ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিং তো থাকছে, কিন্তু গ্রামের মানুষ রাতের বেশির ভাগ সময় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। দিন-রাত মিলে বিদ্যুতের দেখা পাওয়া দুষ্কর। মূলত শেখ হাসিনার তথাকথিক উন্নয়নের মোড়কের ভেতরটা ছিল ফাঁপা। এই ধরনের পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের সারাংশ মাত্র। দুর্নীতি, নীতিহীনতা ও স্বজনপোষণের অবাধ সুযোগ করে দিয়ে অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন মোড়কের আবরণ ছিঁড়ে আস্তে আস্তে বের হচ্ছে জ¦রাগ্রস্ত কাঠামো। দেশের পরিস্থিতি যে ক্রমান্বয়ে শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের জনশক্তি ও গার্মেন্টস রফতানিতে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রকট হয়ে উঠেছে। রেমিটেন্স কমতে শুরু করেছে। অফিস-আদালতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সময়সূচি সংকুচিত করতে গিয়ে এখন মানুষের জীবন বাঁচাতে সবচেয়ে জরুরি যে জিনিস ঔষুধ সেই ঔষুধের ফার্মেসিও রাত ১২টার পর বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানবতার অস্তিত্বকেও তারা এখন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছুটি সপ্তাহে দুইদিন করা হয়েছে, এটি নজিরবিহীন ঘটনা, পৃথিবীর কোথাও এর দৃষ্টান্ত নেই। এই সরকার প্রকৃত শিক্ষা বিরোধী সরকার। এরা পরীক্ষায় নকলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন সম্পর্কে এরা উদাসীন বলেই দুইদিন ছুটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এরা জনস্বার্থকে তাচ্ছিল্য করতে কোনো দ্বিধা করে না। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার কথা বিবেচনা না করেই নিত্যপণ্যের দাম জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি করছে। আজও সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৭ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এরা ক্ষমতায় নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ একটি দল। গণধিকৃত একটি দল বলেই এরা খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো তদারকি করে না। এরা ন্যায়নীতির কোনো তোয়াক্কা করে না বলেই জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় নেয় না। সর্বত্রই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজ দলের লোকজনদেরকে বিপুল অংকের টাকা লুটের সুযোগ করে দেয়। অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী রাষ্ট্রে কালোবাজার, কালোপূঁজি ও কালো সিন্ডিকেটের ওপর নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা থাকে না।
তিনি বলেন, এই নব্য বাকশালীদের আমলে গণমাধ্যমের গলায় এমনিতেই ফাঁসির দড়ি ঝুলছে। এখন সেই ফাঁসির দড়িতে টান দেয়ার জন্য নানা ধরনের কালাকানুনের অন্ত নেই। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সাংবাদিকদের জরিমানার বিধান রেখে আবারো নতুন করে আইন অনুমোদন করেছে। এটি মূলত সাংবাদিক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করারই আরেকটি পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে নিজ দেশের প্রতিপক্ষ দল ও ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা বলে কিছুই নেই। এরা কর্তৃত্ববাদী শাসনের বরপুত্র। এরা কখনোই একটি বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজের বিকাশকে সহ্য করেনি। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই এদের হাতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও স্বাধীন মত প্রকাশ চরম দলন-পীড়নের শিকার হয়। সাংবাদিকদের জরিমানার বিধান রেখে প্রেস কাউন্সিল (সংশোধন) আইন মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে সেটির বিরুদ্ধে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির প্রচার সম্পাদক, লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক এমপি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ৪০টি মোটরসাইকেলযোগে এসে দুর্ধর্ষ ডাকাতির কায়দায় বেপরোয়া ও বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে এ্যানিকে বাসায় না পেয়ে তার ভাই ও ছেলেসহ চারজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। সন্ত্রাসীরা বাসার এসিসহ মূল্যবান আসবাবপত্রও ভাঙচুর করে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
সোমবার দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ঢাকা জেলাধীন কেরানীগঞ্জ (দক্ষিণ) শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১০/১২ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করে। সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বিএনপির একটি মার্কেটেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় পুলিশ কর্তৃক বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে বেধড়ক লাঠিচার্জ করলে ৫/৬ জন গুরুতর আহত ও শতাধিক নেতাকর্মী আহত, ৫০টির অধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ১৫/২০টি মোটরসাইকেল আটক করে।
মেহেরপুর জেলাধীন গাংনীতে ছাত্রলীগ কর্তৃক বিএনপি অফিসে হামলা ও বিএনপি নেতা কমরেড নাসির, মোঃ মন্টু, যুবদল নেতা সাইদুল, এনামুল, চপল, রুবেল পারভেজ, শমসের, তমসের আলী, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা এডাম ওরফে সুমন, জামাল, রুবেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরসহ নোয়াখালীতে বিএনপি নেতা ভিপি জসিম উদ্দীন, যুবদল নেতা রায়হান, ডা. মাঈন উদ্দিন, ছাত্রদল নেতা মাজেদুল কবির মুন্নাা, রিপনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে বাগেরহাটের রামপালে উপজেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম রবিকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের হামলায় বিএনপি নেতা মাহফুজ মাসুম বিল্লাল ও ওয়াদুদ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। উল্লিখিত ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
১। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে ভোর ৬টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
২। বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শেরেবাংলা নগরস্থ মাজারে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ নেতাকর্মীরা ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন।
৩। ঐদিন বেলা ৩টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালিতে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন।
৪। দিবসটি উপলক্ষে ইতিমধ্যে পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে এবং ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে।
৫। বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির জাতীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দসহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।
৬। অনুরূপভাবে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সকল ইউনিট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। স্থানীয় সুবিধানুযায়ী আলোচনা সভা, র্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালনে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
৩০ আগস্ট গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আগামী ৩০ আগস্ট ২০২২, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে ঐদিন সারাদেশে জেলা ও মহানগরে কর্মসূচি পালিত হবে।