এখন আর কোনো নির্বাচন নয়, আন্দোলনই একমাত্র পথ : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৮ এএম, ২০ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৫ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
এখন আর কোনো নির্বাচন নয়, আন্দোলনই একমাত্র পথ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সবকিছুর সংকটের মূলে একটাই যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ জোর করে বিনা ভোটে, নির্বাচিত না হয়ে বৃহত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এখন আমাদের পবিত্র দায়িত্ব যে আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। জনগনকে সঙ্গে নিয়ে, জনগনকে রাজপথে নিয়ে এই বাংলাদেশকে ধবংসকারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে এটা সত্যিকার অর্থে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলছি, এখন আর কোনো নির্বাচনের কথা নয়, এখন আর কোনো ঘুম পাড়ানির কথা নয়। এখন একটা মাত্র দাবি যে, এই সরকার কবে যাবে, এই সরকার কবে যাবে?।”
সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, সবার আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে তাদেরকে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে একটি জনগনের প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট ও জনগনের সরকার গঠন করতে হবে।”
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘ইউনির্ভাসিটি টিচার্স এসোসিয়েশনের(ইউট্যাব)’ এর উদ্যোগে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্র দলের নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজকে আপনাদের দায়িত্ব যে, সমস্ত বুদ্ধিজীবী মানুষদেরকে, সকল সচেতন মানুষকে আপনারা জাগ্রত করবেন এবং তরুন যুবক শ্রেনীকে জাগ্রত করবেন যারা এই লড়াইয়ে অংশ নেবে এবং জয়ী হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধবংস করে ফেলেছে এই সরকার, একেবারেই ধবংস, উচ্চ শিক্ষাকে আরো ধবংস করে ফেলেছে। এমন এমন ভাইস চ্যান্সলর নিয়ে আসেন যে, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সাহেবের মতো, উনিও একই ঘরোনার লোক। সেদিন এক টক শোতে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যিনি, তিনি কথাও বলতে পারেন না। এটা তার (সৈয়দ আনোয়ার হোসেন) কথা। এই সমস্ত মানুষকে দিয়ে, দলবাজ, চাটুকার লোকজনকে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করা হচ্ছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আপনারা দেখবেন, প্রত্যেক দিন ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করে ফেলেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধবংস করে ফেলেছে। আজকে আবার আমাদেরকে সেই জায়গা নিয়ে আসতে হবে, আমাদের অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করতে, একটা মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব অত্যন্ত যথার্থ একটা শ্লোগান দিয়েছেন- ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। বাংলাদেশকে আবার আগের জায়গা ফেরত আনো, গণতন্ত্রের জায়গায় নিয়ে আসো, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবার জায়গায় নিয়ে আসো যেখানে মুক্ত সমাজ থাকে, সবাই যেন কথা বলতে পারে, তার মতামত প্রকাশ করতে পারে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘একদিকে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিদিনকার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এই সরকারের বিভিন্ন রকমের নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তের কারণে এবং তাদের পেটে যখন আঘাত করতে শুরু করেছে অর্থাত চাল-ডাল-তেল-সবজীর দাম এমন পর্যায় গেছে যে পর্যায় সাধারণ মানুষের জন্যে যাদের আয় অত্যন্ত সীমিত তাদের পক্ষে জীবন ধারণই অত্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।সবচেয়ে করুন অবস্থার মধ্যে আছে যারা নিম্ন বিত্তমানুষ, যারা নামতে পারে না, প্রতিবাদ করতে পারেন, তাদের অভাবের কথা মানুষকে জানাতেও পারে না তারা। অন্যদিকে আজকে কারা ভালো আছে? একটা লুটেরা এলিট শ্রেনী ভালো আছে। এই লুটেরা এলিট শ্রেনী কারা? এই শ্রেনী হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদেরা, তাদের মন্ত্রী, তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।আমলা কিছু আছেন যারা প্রতিদিন দেখবেন বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করছেন কিভাবে তাদের আরো বিত্ত সম্পদ তৈরি হবে, কানাডায় বেগমপাড়ায় তাদের বাড়ি তৈরি হবে। আর আছেন, আমি দূঃখের সঙ্গে বলতে চাই- আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী শিক্ষক, কিছু বুদ্ধিজীবী এরা এবং তারা যখন টক শোতে কথা বলেন তখন মনে হয় মোমেন সাহেব (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) বলেছেন, বেহেশতে আছি- এটা অমূলক কোনো কথা নয়। তারা প্রমাণ করতে চান আসলেও মানুষ বেহেশতে আছে।”
তিনি বলেন, ‘‘এক কথায় বলা যায় এই সরকার একটা লুটেরা সরকার, এই সরকারের সঙ্গে মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এই সরকার রাষ্ট্রকে ইতিমধ্যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। প্রমাণ তারা একে একে দিয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘যখন বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এবং নিজেদেরকে স্বাধীন বলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, ভারত সরকার সাহায্য করবেন শেখ হাসিনাকে টিকে রাখার জন্য। অর্থাত তারা একথা বলতে চান যে, ভারত সরকারের আনুকুল্যে এই সরকার টিকে আছে। আমি কালকেও প্রশ্ন করেছিলাম এটা ব্যাখ্যা আমরা জানতে চাই।‘ পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিন্তু তার জায়গা থেকে সরে আসেননি। তিনি একটা বক্তব্য দিয়েছেন যে বক্তব্য তিনি আবারো ওটাই এনসিউর করেছেন। সুতরাং আমরাকে বুঝে নিতে হবে, বলতে হবে পরিস্কার ভাষায় যে, যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদেরকে এই দেশ শাসন করবার অধিকার নেই, তাদের সরকারে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ছোট বেলা বইয়ে পড়েছি, ছড়া পড়েছি, মায়েরা বাচ্চাদেরকে ছড়ার গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। সেটা হলো- ছেলে ঘুমালো, পাড়া ঘুমালো বর্গী এলো দেশে। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিবো কিসে। এখন এটা পরিবর্তন করতে হবে। বর্গীদের ভয়ে তারা বাংলাদেশে আসতো সব লুট করে নিয়ে চলে যেতো। আজকে আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা বর্গীদের ভুমিকা পালন করেছে। তারা আমাদের সম্পদকে লুট করে নিয়েছে।”
বিরোধী নেতা-কর্মীদের গুম করে নেয়ার ঘটনাসমূহের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের বিবৃতি প্রদানে সরকারের ‘মাথা খারাপ’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশ একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অপরাধ তারা দেশের আত্মাকে ধবংস করে দিয়েছে। আমাদের আশা ছিলো গণতান্ত্রিক আত্মা, আমাদের আশা ছিলো একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্ত সমাজ। সেটকে তারা ধবংস করে দিয়েছে।”
‘সরকার দে্শের বিচার ব্যবস্থাকেও ধবংস করে দেয়া এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দেশের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়া এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট- এমন একটা আইন করেছে যে আইনের মাধ্যমে কারো কোনো লেখার সাহস থাকবে না। সরকারকে সেন্সর করতে হয় না। প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা আছে, যে গোয়েন্দা টেলিফোন করে বলে, নিউজটা এরকম গেলো কেনো? টেক শোতে কে আসবে না আসবে সব কিছু তারা নির্ধারণ করে দেয়। এদেশ কি আপনারা বলবেন স্বাধীন দেশ? এখানে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এই অবৈধ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এটা কোনো দিন গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে না। এই আওয়ামী লীগকে এজন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে জবাবদিহিত করতে হবে যে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য।”
ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, অধ্যাপক আবুল হাশেম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদুল হাসান মুক্তা, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শের মাহমুদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক সৈকত, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর সরকার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন উর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পারভেজ রেজা কাকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাহবুব আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।