ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কি না ব্যাখ্যা চান বিএনপি মহাসচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ১৯ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:২৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কি না প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় গত বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘গত পরশু দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুংকার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। এতোই যদি আপনারা হুমকি দেন, ধামকি দেন তাহলে আবার আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য দাবি করেন কেন?’
‘আমরা এই কথাটার (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) ব্যাখ্যা চাই। আমরা জানতে চাই এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও যে, আজকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথা বলেছেন সেই কথার অর্থ কী? তাতে কি এটা দাঁড়ায় এই সরকার টিকে আছে ভারতের আনুকূল্যে? এ কথার অর্থ মানুষ তো জানতেই চাইবে। এটা জরুরি কথা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক দেশ থাকবে কি থাকবে না, বাংলাদেশ কি সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকারগুলো ফিরিয়ে এখানে একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবে কি করবে না।’
‘আজকে এই প্রশ্নগুলো কেন এসেছে। কারণ আমরা দেখলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সব অধিকারকে তারা কেড়ে নিয়েছে, সংবিধানকে পরিবর্তন করেছে, মানুষের যে পাঁচ বছর পরপর একদিন ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার যে সুযোগ ছিল, সেই ভোট দেয়ার ক্ষমতাকে হরণ করে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে তারা বাতিল করে দিয়েছে।’
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে জেএম সেন হল মাঠে জন্মাষ্টমী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে না পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে না এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।’
‘সেজন্য শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।’
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। বিএনপি মহাসচিব শুক্রবার বিকালে মিলনায়তন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এর আগে সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।
উত্তরার গার্ডার দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেতু মন্ত্রী যিনি আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি অনেক কথা বলেছেন। সারাক্ষণ গালিগালাজ করেন। আমি যে কথাটা বলতে চাই, এতোই যদি দক্ষ আপনারা দেশটা ভালো চালাচ্ছেন তাহলে উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুরের যে রাস্তা সেই রাস্তায় কেমন করে আপনারা যখন মন্ত্রী আছেন তখন গার্ডার পড়ে গিয়ে এক পরিবারের ৫ জন মানুষ সাথে সাথে মারা যায়। প্রতিদিন প্রতিটি রাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। কারণ কোথাও কোনো ডিসিপ্লিন নাই, কোথাও কোনো শাসন নাই, সুশাসন নাই। সবখানে যে যেখানে পারছে লুট করছে, দুর্নীতি করছে, টাকা লুটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। যার জন্য কেউ কোনো কথা মানে না।’
‘উত্তরার ঘটনায় গ্রেফতার করলেন কাকে? ওই ড্রাইভারকে, গ্রেফতার করলেন কাকে? গার্ডকে। কেন? এই কথার জবাব তো দিতে হবে সেতুমন্ত্রীকে প্রথম, জবাব দিতে হবে ডাইরেক্টর জেনারেলকে, জবাব দিতে হবে প্রজেক্ট ডাইরেক্টরকে। তাদের বিরুদ্ধে তো এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।’
দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে ফোকলা করে দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার দুর্নীতিবাজদের সরকার, এই সরকার চোরের সরকার, এই সরকার ডাকাতের সরকার। এরা অবৈধ। রাতের অন্ধকারে নির্বাচন করেছে, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।’
‘জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের বিবৃতি প্রসঙ্গে’
বাংলাদেশে গুমের ঘটনাসমূহের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলের দেয়া বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি এখানে এসে যাওয়ার আগে একটা বিবৃতিতে পরিষ্কার করে বলেছেন, এখানে র্যাবের হাতে যে গুম হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তার সব প্রমাণ এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এটার বিচার করা দরকার। এদের অবশ্যই স্বাধীন তদন্তের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
‘এই কথার পর থেকে তাদের শরীরে যে বিছুটি ছিটাই না, ওই বিছুটি ছুটে গেছে। একজন মন্ত্রী যিনি তথ্যমন্ত্রী বোধহয় তিনি ওই হাইকমিশনারকে সবক দিচ্ছে যে, আপনি প্যালেস্টাইন দেখেন, বার্মা দেখেন। আরে আগে আপনি বাংলাদেশ দেখেন। এই বাংলাদেশের কত হাজার মানুষ আপনি হত্যা করেছেন, কত মানুষকে আপনি গুম করেছেন।’
গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ইলিয়াস আলীর আজকে তার ছেলের বিয়ে আছে। কত বছর হয়ে গেছে এই ইলিয়াস আলীকে আপনারা গুম করেছেন তার খবর পাওয়া যায়নি। লাকসামের পারভেজকে আপনারা গুম করেছেন, অনেক ছাত্রনেতাকে আপনারা গুম করেছেন। তাদের মায়েরা চেয়ে থাকে কখন তার ছেলে ফিরবে? এই সরকার তাদের মায়েদের বুক খালি করেছে।’
‘আমরা অবিলম্বে গুম হওয়া মানুষদের খোঁজ চাই, আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। নিশ্চয় ওই নেত্র নিউজ আপনারা সকলে দেখেছেন, আয়নাঘর দেখেছেন। আমরা জানতে চাই এই আয়নাঘর কতটুকু সত্যি, কিবা আছে তা বলতে হবে। জনগণ জানতে চায়।’
‘ক্ষমতা ছাড়ুন’
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এতো চ্যালেঞ্জ করবেন না। ক্ষমতা ছাড়ুন, ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় নামুন। দেখা যাবে এদেশে জনগণের শক্তি বেশি না আপনাদের মতো দুর্নীতিবাজদের শক্তি বেশি। অবশ্যই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ক্ষমতায় থেকে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা যায়। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন তখন বুঝা যাবে আপনাদের শক্তি কত? এদেশে কয়টা লোক আপনাদের পক্ষে আছে তখনই বুঝা যাবে।’
‘এরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, এরা বাংলাদেশের গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। এরা এখন বাংলাদেশের মানুষের শত্রু বন্ধুগণ।’
‘সরকারকে আর সময় নয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে আর কোনো সময় দেয়া যাবে না, আমরা আওয়ামী লীগকে আর কোনো সময় দিতে রাজি নই, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেয়া হবে না। এখন জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে একই সঙ্গে রাস্তায় রাজপথ দখল করে নিয়ে এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।’
দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনব, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করব এবং এই সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার ও জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জনগণের কাছে আহ্বান- ‘আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ জামান ও সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, এসএম জিলানী, ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।