সরকারের সিন্ডিকেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০১ পিএম, ১৭ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেশনের যাঁতাকলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমানে নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র আমরা সবাই জানি। কারণ এখানে আমরা যারা উপস্থিত আছি, সাংবাদিকবৃন্দসহ আমাদের সবারই বলতে গেলে নির্দিষ্ট টাকায় সংসার চালাতে হয়। তাই আমরা যতটা তিক্তভাবে বাজারের মূল্যবৃদ্ধি অনুভব করতে পারি, তা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে যারা সম্পদের পাহাড় জমিয়েছে, যাদের দুর্নীতির টাকা এখন সুইস ব্যাংক, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম, কানাডার বেগমপাড়া, ইউরোপ, আমেরিকা, কিংবা লাতিন আমেরিকান দ্বীপরাষ্ট্রে পাচার হচ্ছে তারা কখনোই অনুভব করতে পারবেন না। পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের মদদপষ্ট সিন্ডিকেটকারীদের ভূমিকার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। মূল্যবৃদ্ধির এই দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারের চালিকাশক্তিরাই। বর্তমান সরকার মূলত চালাচ্ছেই এক ধরনের স্বার্থান্বেষী অর্থপিপাসু বণিক সমাজ। সরিষায় ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে? রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তখন যা হবার তাই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে। এবারের বাজেটের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এ সরকার হলো A govt. by the businessman, for the businessman, of the businessman. যার ফলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিলে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই বরাবর প্রাধান্য পাচ্ছে। গত মাসাধিককাল থেকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাবে এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও ভোগ্যপণ্যসহ সকল পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ভোক্তারা যখন দিশেহারা তখন হঠাৎ করে বিনা নোটিশে রাতের অন্ধকারে জ্বালানি তেলের দাম নজিরবিহীন বৃদ্ধি ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। এই মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি। In one go জ্বালানির এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি এর আগে আর কখনও হয়নি। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম একবারে ৪৫% থেকে ৫১% একসাথে বাড়িয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে দেশের মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতির কফিনে শেষ পেরেকটুকু ঠুকে দেয়া হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। গরীব সীমিত আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এতে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গণপরিবহন থেকে কাঁচাবাজার- সর্বক্ষেত্রে কয়েকগুণ মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে সবাই। প্রতিবাদে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে, তারা মিছিল করছে। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সারাদেশে আগুন জ্বলছে। জ্বালানির মূল্য যদি বাড়াতেই হতো সরকার তা সহনীয়ভাবে ধাপে ধাপে বাড়াতে পারত। হঠাৎ করে রাতের আঁধারে একবারে এত বেশি দাম বৃদ্ধিতে জ্বালানি ব্যবহার সংশ্লিষ্ট সকলেই হতচকিত হয়ে পড়েছে। যাত্রী, ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই taken a back. বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্যের অজুহাত দেখিয়ে দেশে জ্বালানির দাম বাড়ালেও, বাস্তবতা হলো বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যখন ১৩০ ডলার থেকে ৯০ ডলারে নেমে এসেছে এবং আরো কমে আসছে, বাংলাদেশে তখনই জ্বালানি মূল্য এক লাফে এত বেশি বৃদ্ধি করা হলো। মূলত এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসায় জ্বালানি তেলের দর বাড়ানোর টেকনিক নিয়েছে সরকার। এক লাফে এত বেশি মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক, অমানবিক ও অবিবেচক। সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিণামদর্শিতার দায় পুরোপুরি সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হলো।
তিনি বলেন, জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা কর আদায় করে সরকার। প্রকারান্তরে যার দায়ভার পড়ে ভোক্তা পর্যায়ে জনগণের ওপর। এই দুর্যোগকালে সাময়িক সময়ের জন্য জ্বালানি আমদানিতে কর আদায় মওকুফ করা হলে আকাশ ভেঙে পড়ত না। সরকারের রাজস্ব বিভাগ তো সরকারেরর অংশ। সরকার চাইলেই এনবিআর এই কর মওকুফ করতে পারে। কিন্তু সরকার তা করেনি, করবেও না। তাদের তো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর টাকা লাগবে। আর এনবিআরকেই জনগণের পকেট কেটে ঐ টাকা যোগাড় করে দিতে হয়। তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের মূল্য অনেক হ্রাস পায়, তখন বাংলাদেশে জ্বালানি-মূল্য কিন্তু কমানো হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে বিপিসি বিশ্ববাজার থেকে কম দামে জ্বালানি কিনে এনে দেশে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেছে। এভাবে বিপিসি প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা প্রফিট করেছে। ঐ লাভের টাকা থেকে বর্তমানে তেল আমদানির অর্থ যোগান দিতে পারে সরকার। কিন্তু সরকার তা করবে না। জনগণের কাঁধে চাপানোই তাদের জন্য সহজ পথ। সরকার ভোক্তাদের কাছে গ্যাস বিক্রির সময় গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (GDF)’র কথা বলে গত কয়েক বছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা জিডিএফ ফান্ডে জমা করেছে। কথা ছিল এ অর্থ নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কারে ব্যয় করা হবে। কিন্তু সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এতদিন বঙ্গোপসাগর বা সারাদেশে গ্যাস উত্তোলনে কোনে অর্থ ব্যয় না করে দলীয় ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্য বরং বেশি দামে এলএনজি আমদানিতে অর্থ ব্যয় করেছে। এখন এই জিডিএফ ফান্ড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে এলএনজি কিংবা তেল আমদানি করছে বলে জানা গেছে।
তিনি আরো বলেন, এদিকে গত ১২ বছর ধরে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর দায়ও এখন জনগণের ঘাড়ে। এ কারণে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৫১% বাড়ানো হয়েছে। আর জ্বালানি তেলের ওপর ভর্তুকি কমাতে ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদেশে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বাড়াতে বন্ধ রাখা হয়েছে এলএনজি চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বড় বড় শিল্প কারখানা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে লোডশেডিংয়ের সময় উৎপাদন অব্যাহত রাখলেও হিমশিম খাচ্ছে ছোট ছোট শিল্প কারখানাগুলো। এখন ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ডিজেল চালিত জেনারেটর চালু রাখতে তাদের দৈনিক ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হয়েছে। যার ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সবকিছু শেষ পর্যন্ত গিয়ে চাপছে উৎপাদিত পণ্যের ওপর। অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভোক্তাদের। অনেকে পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক মালিক লোকসান কমাতে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে। একদিকে বাজারে ডলারের দাম এখন কার্ব মার্কেটে ১১৪ টাকারও বেশি। তাও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের পণ্যের দামই বেড়ে গেছে। সাধারণের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.০৫%। সেখানে সরকারি হিসেবেই গত জুনে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭.৫৬%। যা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। অবশেষে অর্থমন্ত্রী নিজেও মূল্যস্ফীতির কথা স্বীকার করেছেন। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে গত এক বছর ধরে সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে এবং বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১২% শতাংশের ওপরে রয়েছে। চাল থেকে সব ধরনের পণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন ১৬৮ টাকা যা গত সপ্তাহেও ছিল ১২০ টাকা। সরকার গরিবের চাল বলে খ্যাত ‘মোটা চালের’ দামও ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম দিয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়। আর মূল্যস্ফীতির প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই সবচেয়ে বেশি পড়ে। কারণ, তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাদ্যপণ্য কিনতে। খাদ্যপণ্য কিনতে যত টাকা খরচ হয়, এর ৫০-৬০ শতাংশ চলে যায় চালের পেছনে। তাই মোটা চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির ওপর বেশি প্রভাব পড়ে। তাই চালের মত একটি মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তুলনার মাধ্যমে বিএনপি সরকারের দায়িত্বকালীন সময়ের সাথে বর্তমান অগণতান্ত্রিক লুটেরা সরকারের পার্থক্য তুলে ধরছি : ২০০৬ সালে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল গড়ে ১৫ টাকা। ২০২২ অর্থাৎ বর্তমানে মোটা চালের দাম গড়ে ৫৪ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি ৩ গুণেরও বেশি। ২০০৬ সালে ১০০ টাকায় প্রায় ৭ কেজি মোটা চাল কেনা যেতো। বর্তমানে ১০০ টাকায় মোটা চাল কেনা যায় ২ কেজি। প্রায় ৫ কেজি কম চাল পাওয়া যায়। আয় সক্ষমতা যদি ২ গুণ বৃদ্ধি পায়, এরপরেও ২০০৬ সালের সম পরিমাণ ক্রয় সক্ষমতা অর্জন অসম্ভব। বিএনপি সরকারের আমলে মানুষের Real Income ছিল অনেক বেশি যার ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও ছিল বেশি। অন্য দিকে বর্তমানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। কেননা সে তুলনায় মানুষের Real Income অনেক হ্রাস পেয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সরাসরি অভিঘাত গণপরিবহন খাতে : বাংলাদেশে জ্বালানির বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি নজিরবিহীন। বর্তমানে জ্বালানি মূল্যের অভিঘাত এসে পড়েছে সরাসরি ভোক্তা জনসাধারণের ওপর। সবকিছুর দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ১৫০ শতাংশ। প্রথম ধাক্কাটি এসেছে গণপরিবহনে। বাস ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ইচ্ছে মতো। সরকার এর আগেও গত নভেম্বরে ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল। ঐ সময়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ভাড়া বাড়ানো হয় ২৭ শতাংশ। তখনই ঐ বৃদ্ধি ছিল অযৌক্তিক। এখন আবার বাস ভাড়া ২৭%, লঞ্চ ভাড়া ৩০% বাড়ানো হয়েছে। এর তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে শিল্পপণ্য, কৃষিপণ্য, গণপরিবহনের ভাড়াসহ জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জ্বালানি খরচের তুলনায় ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছে পরিবহন কোম্পানিগুলো। বাস মালিকরা পণ্যবাহী যানের ভাড়াও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধির ধাক্কা ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে আরো চাপ সৃষ্টি করবে। এর মধ্যে নৌপথের ভাড়া বাড়ানোরও তৎপরতা চলছে। লঞ্চের মালিকরা দু-এক দিনের মধ্যে ভাড়া বাড়াবেন বলে জানিয়েছেন। ট্রেনের ভাড়াও বৃদ্ধির চিন্তা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের জ্বালানির ৬৫ শতাংশ ভোক্তা পরিবহন খাত। গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানের প্রায় পুরোটাই ডিজেলনির্ভর। এর মধ্যে বাস, লঞ্চ, ট্রেন, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান উল্লেখযোগ্য। গণপরিবহনের মূল ব্যবহারকারী নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। ফলে নতুন এ মূল্যবৃদ্ধি তাদের বেশি বেকায়দায় ফেলবে। ইতিমধ্যে এর প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। পেট্রল পাম্প, বাস টার্মিনাল ও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করেছে। সবার জিজ্ঞাসা জীবনযাত্রার ব্যয় আর কত বাড়বে? গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। তখন বাসের ভাড়া গড়ে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। মাত্র ৯ মাসের মাথায় আবারো দূরপাল্লার পথে বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২২ শতাংশ এবং নগরে সাড়ে ১৬ শতাংশ। ট্রাক ভাড়াও বাড়ান হয়েছে অতিমাত্রায়। এতে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ বেড়েছে। এই বাড়তি খরচ পণ্য আমদানিসহ সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে যোগ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ার বোঝা সাধারণ মানুষের কাঁধেই পড়ছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। চালের দামের কথাই ধরা যাক। টিসিবির হিসাবেই ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি সর্বনিম্ন ৩০ টাকা। গত শুক্রবার ওই দাম দাঁড়ায় ৫০ টাকায়। এর অর্থ হলো- নিম্ন আয়ের মানুষকে চাল কিনতে প্রায় ৬৭ শতাংশ বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। শুধু চাল নয়, ব্যাপকভাবে বেড়েছে ভোজ্যতেল, ডাল, আটা, চিনি, দুধ ও মাছ-গোশতসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম। সাবান, টুথপেস্ট, খাতা-কলমসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্য ও শিক্ষা উপকরণের দাম। পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে- একটি ডিম এখন সাড়ে ১৪ টাকা। ডিম এক হালি ৫৬ টাকা এবং ডজন ১৬৮ টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে যাচ্ছে কৃষিতে। কয়েক দিনের ব্যবধানে ইউরিয়া সার ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমনের ভরা মৌসুমে খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক। এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন ধানে সেচ বেশি লাগছে। এত খরচ করে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে খরচ আদৌ উঠবে কি না এ নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সার-ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকই কেবল চাপে পড়ছে না, খাদ্যনিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়লে বাজারে কৃষিপণ্যের দামও বেড়ে যায়। উভয় সঙ্কটে পড়েছেন কৃষকরা। মানুষ কতটা কষ্টে আছে রবিবার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এর করুণ বিবরণ রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বল হয়, সেই কর্মকর্তা তাদের দুই সন্তানের পাতে তাদের পছন্দের খাবার তুলে দিতে পারছেন না। কারণ নিত্যপণ্যের দাম এতটাই বেড়েছে যে, সংসারের ব্যয় সামলাতে তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছ-গোশত কেনা তিনি একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। ভাজি ভর্তা ও ডাল দিয়ে দুপুর-রাতের খাবার খেতে হচ্ছে। সন্তানদের জন্য নিয়ম করে প্রতিদিন দুটি ডিম রাখতেন। এখন সপ্তাহে তিন দিনের বেশি ডিম খেতে দিতে পারছেন না। বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে ব্যয় কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
রিপোর্টটিতে আরো বলা হয়, রাজধানীসহ আটটি বিভাগীয় শহরের ৪০টি পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে তাদের আয় যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে খরচ বেড়েছে অনেক বেশি হারে। ছোট চাকরিজীবীরাই বেশি কষ্টে আছেন। ঢাকায় খোলা আটার দাম গত বছর ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এখন সেই আটার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। এক বছরে দাম বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। ব্রয়লার মুরগি গত বছর ছিল ১৫০ টাকা কেজি, এখন সেটি ২০০ টাকা। কোনো কোনো পরিবারে মাছ, গোশত ও দুধ বাবদ ব্যয় বাদ দেয়া হয়েছে কিংবা কমান হয়েছে। সন্তানদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় কমাতেও বাধ্য হচ্ছেন মা-বাবারা। একেবারে অসহ্য পর্যায়ে না গেলে রোগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। এভাবেই ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে মানুষ।
ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সাধারণ মানুষের কাঁধে ফের ব্যয়বৃদ্ধির ভার : কাঁচাবাজার থেকে একটি পরিবারে যা যা কিনতে হয়, তার প্রায় সবকিছুর দামই আরেক দফা বেড়েছে। এ তালিকায় যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা আছে, তেমনি রয়েছে সবজি, ডিম ও মুরগির দাম। পিছিয়ে নেই মাছ ব্যবসায়ীরাও। তারাও দাম বাড়িয়েছেন। এই মূল্যবৃদ্ধি সেসব সীমিত আয়ের মানুষের ওপর সরাসরি আঘাত, যারা ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে নাকাল। এবার বর্ধিত ট্রাাকভাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর প্রভাব কাঁচাবাজারে পড়েছে। আগামী দিনগুলোয় শিল্পপণ্যের দামেও প্রভাব পড়বে। দাম কতটা বেড়েছে, তা দেখা যায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকায়ই।
সংস্থাটির প্রতিবেদন বলছে, ৪ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত দাম বেড়েছে সব ধরনের চাল, ডাল, আটা, ময়দা, বোতলজাত সয়াবিন তেল, চিনি, রসুন, দেশি পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, আদা, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির। বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দর এক সপ্তাহ আগের তুলনায় কেজিপ্রতি গড়ে ১০ টাকা বেশি। কাঁচা মরিচের কেজি ছাড়িয়েছে ৩০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা মাছের দাম গড়ে ২০ টাকা বেশি চাইছেন।
টিসিবির হিসাবে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩০ টাকা। সেই হিসাবে এখন দাম প্রায় ৬৭ শতাংশ বেশি। টিসিবির তালিকায় উল্লিখিত দরের চেয়ে বাজারে পণ্যের দাম বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব পণ্যের দামের সঙ্গেই ট্রাক ভাড়া যুক্ত। জ্বালানির দাম বাড়ার পর ট্রাক ভাড়া ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শুকনা মরিচ আর আটার দাম। গত এক বছরের ব্যবধানে শুকনা মরিচের দাম ৭৮ শতাংশ আর আটার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৮ শতাংশ। এ ছাড়া সয়াবিন তেলের মূল্য ৩৭ শতাংশ, ডালের ৫১ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ নানাভাবে ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। নিজের আয় দিয়ে আর চলতে না পারায় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেকেই ফ্যামিলি বাসা ছেড়ে উঠেছেন মেসে। মানুষ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। গত ১২ বছরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯০ শতাংশ বেড়েছে।
আবারও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব : এহেন পরিস্থিতিতে মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক তখনই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানোর। মাসখানেক আগে গ্যাসের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১২ বছরে দফায় দফায় দাম বাড়ানোর কারণে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯০ শতাংশ বেড়েছে। এভাবে চললে শিল্পোৎপাদনও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে। জীবনযাপনে আরও বেশি বিপর্যয় নেমে আসবে।
আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী : গত ৫ জুন মাসের শুরুতে পাইপলাইনে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ দশমিক ৯১ পয়সা করে গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এই দাম বাড়ানোর কারণে যানবাহনে ব্যবহার্য সিএনজি বাদে সব পর্যায়েই খরচ বেড়েছে। দুই মাস না যেতেই আবারও গ্যাসে দাম সমন্বয়ের কথা বলছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। এতে সর্বক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। নিম্নে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র দেয়া হল :
২০০৬ সালে ছিল বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ১.৬০ টাকা, ২০২২ সালের বর্তমান মূল্য ৭.১৩ টাকা, ২০০৬ সালে গ্যাসের মূল্য এক চুলা ২০০ টাকা, দুই চুলা ২৫০ টাকা, ২০২২ সালে এক চুলা ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলা ১০৮০ টাকা।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পুরোপুরি অযৌক্তিক : এমনিতেই খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে জনগণ প্রায় মরণাপন্ন হয়ে পড়েছিল, এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের সামান্য সচ্ছলতা যা অবশিষ্ট ছিল, তাও ছিনতাই হয়ে গেছে। তেলের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী সময়ে সরকার চাইলে বিপিসির লাভের টাকা থেকে সমন্বয় করতে পারত, এর জন্য তাদের হাতে তহবিলও ছিল। এটা বেশি দিন করতেও হতো না, কারণ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাচ্ছে। কিন্তু তারা তা করেনি। দেশের অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি পুরোপুরি অযৌক্তিক। গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে পরিষ্কারভাবে বলছেন যে, অকটেন ও পেট্রল আমাদেরকে বিশ্ব বাজার থেকে কিনতে হয় না। প্রাকৃতিক গ্যাসের বাইপ্রডাক্ট হিসেবে এটা পাওয়া যায় এবং আমাদের চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ অকটেন, পেট্রোলের মজুদ আছে। তাহলে পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ান হলো কেন? গত ১৪ বছরে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছে ১৫ বার, আবারও বাড়াতে চায় ২৫%। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা গত দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১৪ বছরে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৫ বার। আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আবাসিকে ২৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত পানির দাম বাড়াতে চায়। এ জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির জন্য দাম দিতে হয় ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ওয়াসার নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে ১ হাজার লিটার পানির জন্য ১৯ টাকা খরচ করতে হবে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানে ৪২ টাকা। ওয়াসার নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম দিতে হবে ৫০ টাকা (প্রথম আলো- ১১ আগস্ট, ২০২২)।
এদিকে ওয়াসার পানির গুণগত মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তো রয়েছেই। আমরা পানির মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। টিসিবি ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির ২০০৬ সনের সাথে একটি তুলনামূলক চিত্র সংযুক্ত করা হলো।(Annexure-1)
মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দাপটে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্ররা যখন পিষ্ট হচ্ছে, তখন সরকারের মন্ত্রীদের আবোল তাবোল বক্তব্য কাটা ঘায় নুনের ছিটার মতোই মনে হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বাংলাদেশের জনগণ নাকি বেহেশতে আছে।
এলজিআরডি মন্ত্রী বলেছেন, “গ্রামে-গঞ্জে না খেয়ে কোনো মানুষ নাই। প্রত্যেক মানুষের গায়ে জামাকাপড় আছে। আমি মনে করি না আমরা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। তখন তো খেতে পায়নি। এখন তো খেতে পারছে। তখন তো একটি শাড়িই কিনতে পারত না।” ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য গম আমদানি কমাতে আটার রুটির পরিবর্তে চালের রুটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী দেশের মানুষকে কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। মানুষের দুরবস্থা নিয়ে এমন তামাশা করার অধিকার মন্ত্রীদের কে দিয়েছে? এদিকে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- অভাবের তাড়নায় প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বিক্রি করতে খাগড়াছড়ির এক হাটে তুলেছেন মা সোনালী চাকমা। ছ’ বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমার বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন তার মা। কি নিদারুণ অভাব আর কষ্টে থাকলে একজন মা সন্তানকে বাজারে বিক্রির জন্য আনতে পারে তাতেই স্পষ্ট বাংলাদেশ নামক “বেহেশতের” বর্তমান হাল-চিত্র। দেশের জনগণ এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থপাচার আর অপশাসন দেশেটাকে সত্যিকার অর্থেই অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকেই বাকশালীরা ধ্বংসের শেষ প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। বাগাড়ম্বর আর কাল্পনিক উন্নয়নের গল্প দেশের জনগণ আর শুনতে চায় না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যত অন্যায় অপকর্ম করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত তাদেরকে করতে হবে। সম্প্রতি জ্বালানির দাম বাড়িয়ে তারা জনগণের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছে। বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। এ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই বিধায় তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী সরকারকে রাজপথের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে সত্যিকার অর্থে জনমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করি।
‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হবে না, আন্দোলন দমন করা হবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কখনই ওনার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো কথায় বিশ্বাস করি না। এটা একটা কারণে যে, তারা যা বলে তা করে না। আমরা বলেছি যে, তাদের সমস্ত কথা-বার্তায় সমস্ত প্রতারকের ভূমিকা পালন করে ওরা।
আয়নাঘরে বন্দি ও নেত্র নিউজ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আয়নাঘরে বন্দি বলেন, নেত্র নিউজের প্রতিবেদন বলেন-এসব কথাগুলো আমরা বহু আগে থেকে বলছি। এই যে গুম করে নিয়ে যায়, তারপরে অনেককে গুম করে রাখে, অনেককে মেরে ফেলে, তারপরে অনেককে ছেড়ে দেয়, তারপরে তারা ভয়ে কোনো কথা বলে না-এই বিষয়গুলো আমরা বহুবার বলেছি আপনাদেরকে। আজকে নেত্র নিউজে প্রতিবেদনটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আমরা সবাই জানতে পারছি যে, এ ধরনের ঘটনা একটা ঘটেছে। সেখানে নিঃসন্দেহে এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষকে হত্যা করে, গুম করেই তো একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টাটাই তারা (সরকার) করছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের হরতালে বিএনপি সমর্থন করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো আগেই বলেছি যে, কোনো দলের ন্যায়সঙ্গত দাবির আন্দোলন আমরা সবসময় সমর্থন করি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।