বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৭ পিএম, ১৬ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৫ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
'গৃহবন্দি' খালেদা জিয়ার প্রাথমিক ও নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ৭৮তম জন্মদিনের দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, ''বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাস হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র- এই দুটো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত-এটাকে আলাদা করা যাবে না। যিনি একজন গৃহবুধ ছিলেন, জাতির প্রয়োজনে, যুগের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজন যখন সেই গৃহবুধ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবার জন্যে সামনে এসে দাঁড়ালেন তখন থেকে তিনি সংগ্রাম শুরু করেছেন। সারাটা জীবন এই গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবার জন্যে, গণতন্ত্র চর্চা করবার জন্যে তিনি সংগ্রাম করেছেন। এখন পর্যন্ত এই গণতন্ত্রের জন্যে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের মামলায় তাকে গৃহে অন্তরীন করে রাখা হয়েছে।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''আমাদের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গণতন্ত্রের মা যিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন, যিনি গণতন্ত্র চর্চা করেছেন তাকে অবশ্যই প্রাথমিক মুক্তি দিতে হবে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এই জন্মদিনে আমরা তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি, আমরা দোয়া করছি আল্লাহ'তালার কাছে তিনি সুস্থ হয়ে, সুস্থ শরীরে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসেন, আমাদেরকে নেতৃত্ব দেন।"
তিনি বলেন, ''দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন সাধারণ নেত্রী নন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটা ইন্সটিটিউশন। তিনি তার সারাটা জীবন এই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তার জীবনকে গড়ে তুলেছেন গণতান্ত্রিকভাবে। তার সংসার, তার পার্থিব জীবনের সমস্ত সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে এদেশের মানুষকে একটা সমাজ উপহার দেয়ার জন্য, মানুষকে মুক্ত করবার জন্য তিনি লড়াই করে চলছে নিরবধি।"
মহানগর বিএনপি উত্তর-দক্ষিনের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে তার রোগমুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই দোয়া মাহফিল হয়। সারাদেশে আজ মহানগর-জেলা-উপজেলালায় এই দোয়া মাহফিল হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ''বর্তমান সরকার যারা অবৈধ এবং জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে যাদেরকে তুলনা করা যায় একমাত্র পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে এদেশের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে, হত্যা করে, খুন করে এদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকাংখাকে ধবংস করে দিতে চেয়েছিলো, ঠিক একই ভাবে আজকের অবৈধ অনির্বাচিত ফ্যাসিবাদী সরকার তারা বাংলাদেশের মানুষের সমস্ত আশা-আকাংখাগুলোকে ধুলিসাত করেছে, ধবংস করে দিয়েছে। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত তারা তাদের ফ্যাসিবাদী শাসনকে রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে, অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।"
তিনি বলেন, ''দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, আমাদের ৬'শ উপরে নেতা-কর্মীকে গুম করেছে, সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এই তো সেদিন ভোলাতে কিভাবে আমাদের ছাত্র দলের নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিম পয়েন্ট ব্যাংক রেঞ্জে গুলি করে হত্যা করা হয়ে্ছে। প্রতিদিন গ্রেফতার করা হচ্ছে, প্রতিদিন মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। এসব কথা আর গোপন নেই।"
বাংলাদেশে গুম হওয়ার ঘটনার ওপরে সম্প্রতি নেত্র নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ''নেত্র নিউজের এই সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে এ্যামিনেস্টি ইন্টারনেশনাল গতকালই স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছে এই যে ভয়াবহ, ভয়ংকর মানবাধিকারের যে চিত্র, এই চিত্র অবশ্যই শুধু নিন্দা নয়, এটা জঘন্যতম একটা ঘটনা। এই ঘটনাগুলো ঘটছে এবং তারা বাংলাদেশে অবস্থারত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের যে হাইকমিশনার তাকে তারা বলেছেন যে, আপনি এটার নিন্দা করেন এবং এর সম্পর্কে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত অনুষ্ঠান করেন। এটাকে হালকা করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের বহু ভাই চলে গেছেন, আমরা তাদের ফেরত পাইনি, আমাদের বহু নেতা চলে গেছেন তাদের ফেরত পাইনি। আজকে ৬'শ উপরে নেতা-কর্মীকে এভাবে গুম করা হয়েছে, অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। এই মিলাদ মাহফিল থেকে আমি দাবি করছি যে, জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আমরা জানি এই সরকার সহজে যাবে না। তাদের পায়ে তলে মাটি নেই, মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। সেজন্য আমরা জনগনকে সংগঠিত করে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা জনগনের সরকার নিয়ে আসতে চাই। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসার জন্য সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে সেই মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সঙ্গে সংসদ বিলপ্ত করতে হবে এবং নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের মাধ্যমে একটা জনগনের সরকার, জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।"
মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় দোয়া মাহফিল পূর্ব আলোচনায় ঢাকা দক্ষিন বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।
মিলাদ মাহফিলে বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল বারী ড্যানি, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল খালেক, সাইফুল আলম নিরব, মহানগরের ইশরাক হোসেন, মোহাম্মদ মোহন, ইউনুস মৃধা, আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ, এজিএম শামসুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ মহানগরের কয়েক'শ নেতা-কর্মী অংশ নেন।