‘জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বুমেরাং হবে’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৯ পিএম, ১১ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০০ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
হঠাৎ করেই দেশে জ্বালানির দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে এরই মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সব সেক্টরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পড়তে শুরু করেছে এর বিরূপ প্রভাব। সরকার বলছে, নিরুপায় হয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে আরও নিরুপায় করবে বলে অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যান্য শরিক দলের নেতারাও। তারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে জোটে থাকলেও এ সিদ্ধান্তের দায় নেবেন না তারা। কেউ কেউ আবার এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথাও বলছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার কাছে। রাশেদ খান মেনন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা জোটে আছি, সরকারে নেই। এ সিদ্ধান্তগুলো আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়া হয়নি। আমরা এই সিদ্ধান্তের অংশীদার না। সরকার একতরফাভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। জোটে থাকলেও এর দায়ভার আমাদের ওপর বর্তায় না।
তিনি বলেন, মানুষ যেভাবে ক্ষোভের প্রকাশ দেখাচ্ছে, তাতে সামনের নির্বাচনে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে এবং আওয়ামী লীগকে এর দায় নিতে হবে। একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি এবং আমি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছি। জ্বালানিখাতের ভর্তুকি অব্যাহত রাখার অনেক বিকল্প পথ আছে। সেই পথগুলো অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়া যেত।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকের যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার দায় আমাদের ওপরেও কিছুটা বর্তায়। কারণ সরকারের শরিক দল হিসেবে দায় এড়াতে পারি না। এই দায়ের জায়গা থেকেই আমরা সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছি। আমরা রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছি সরকারকে। কিন্তু জনজীবন নিয়ে কথা বলার অধিকার আমাদের আছে। আমরা এরই মধ্যে জ্বালানির বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। আমরা এ নিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনও গড়ে তুলবো। আপনাদের এই বিরোধিতায় জনগণ ভরসা পায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, জনগণ কতটুকু ভরসা পায়, সেটা জনগণের বিষয়। জনগণ সেটা বিচার করবে। এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। জনগণ কষ্টে আছে, এটি সরকারকে বুঝতে হবে। নিত্যপণ্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার পথ বের করতে হবে। মহাজোট সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। সাম্যবাদী দলের এই নেতাও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন।
বামপন্থি এই রাজনীতিক বলেন, জ্বালানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক প্রকার রিস্ক (ঝুঁকি) নিয়েছেন। এই রিস্ক নেয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি বলে আমি মনে করি। জ্বালানি নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হবে। কারণ জ্বালানি নিয়ে এত বড় রিস্ক অর্থনীতির জন্য ভালো খবর বয়ে আনবে না। সরকারে আপনারাও আছেন, দায় আপনাদেরও কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর দায় আমরা নেবো কেন? সরকার যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা আমাদের জানিয়ে নিচ্ছে না। আমাদের আলোচনায়ও রাখে না। একক সিদ্ধান্ত। তাহলে আমাদের ওপর এর দায় কেন পড়বে? শরিক দল বলেই সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। সঠিক উপায়ে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়নি। মানুষ বাজারে যেতে পারছে না। বেকার হয়ে যাচ্ছে। জ্বালানির দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে। পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এতে সংকট আরও ঘনীভূত। পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক থাকবে না। সরকারের উন্নয়নের যে অর্জন তা বুমেরাং হয়ে যাবে।