নিশিরাতের লুটেরা সরকার দেশকে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৮ এএম, ১০ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই নিশিরাতের লুটেরা সরকার দেশকে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ভান্ডার এখন শূন্য প্রায়। সরকার রিজার্ভের ভুল তথ্য দিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। সরকার নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু নিয়ে লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ভিন্ন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যার ওপর বসে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন। তিনি ২৭ জুলাই বলেছিলেন, আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ছয় থেকে নয় মাসের জন্য খাবার আমদানি করতে পারবো। তার একদিন পরে ২৮ জুলাই বললেন, তিন মাসের রিজার্ভই যথেষ্ট। কিন্তু জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, "আমাদের তহবিল খালি হয়ে যাচ্ছে।" পরিকল্পনামন্ত্রী গতকাল বলেছেন, "আমরা এখন একটু অসুবিধায় পড়ে গিয়েছি। টাকার ঘাটতি পড়ে গেছে।" বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেছেন, অবশ্যই দেশের অর্থনীতি চাপে আছে।
আজ বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী ও গভর্নরের এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে পরিস্থিতি অতি ভয়াবহ। বিদগ্ধ অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, "দেশের ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভও এখন অবশিষ্ট নেই। সরকারের কাছে দেশ চালানোর মতো টাকাও নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভয়াবহভাবে বিপদের সম্মুখীন। প্রতিদিন তাদের সামনে হাজির হচ্ছে নিত্য নতুন সঙ্কট। এমনিতে দ্রব্যমূল্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পরিবহন, লোডশেডিং সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের স্মরণকালের সর্বোচ্চ সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি। এর প্রভাব পড়েছে সর্বক্ষেত্রে। জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। গরীব ও সীমিত আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা এতটা সঙ্গীন হয়ে পড়েছে যে, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কোনো একক উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা গণধিকৃত নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকার। সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। ফলে তারা হুমকী ধামকি থেকে শুরু করে প্রতিবাদী মানুষকে হত্যা করা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, গত সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুমকী দিয়ে বলেছেন, 'আসুন রাজপথে মোকাবেলা হবে, ফয়সালা হবে। 'আগুন নিয়ে খেলতে আসলে পরিণাম হবে ভয়াবহ। 'যতই বাধা আসুক সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা রাজপথের পুরাতন খেলোয়াড়। বিএনপি তো এই পথে নতুন।" তবে ওবায়দুল কাদের আর একটি কথা বলেননি, রাজপথে থেকে কথা দিয়ে কিভাবে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হয় সেটি বলেননি, সেই দৃষ্টান্তও তাদের আছে। বারবার তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমিতে তারা গণতন্ত্রের শেকড় গজাতে দেয়নি। বাকশাল, নিশিরাতের নির্বাচন, বিনা ভোটের নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ সেটিরই উদাহরণ। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথাবার্তায় মনে হয় দেশটা তাদের পৈতৃক তালুক আর জনগণ তাদের আর্দালী। এদের একমাত্র সাধনা-ক্ষমতা অর্জন এবং ক্ষমতা লাভের আগে বা পরে কোন সময়েই তারা ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করেনি।
জনাব কাদের সাহেব, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের চেতনায় রাঙিয়ে তাদের দিয়ে নুরে আলম ও আব্দুর রহিমসহ বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পাখির মতো গুলি করে মারছেন, তার ওপর আবার 'আঙ্গুল চোষার' কথা বলে বড়াই করছেন। স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের কারণেই স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। যখনই ক্ষমতায় এসেছেন তখনই গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। সেই কারণেই আপনাদের পতনের পর কেউই আপনাদের জন্য হা-হুতাশ করেনা। এবারও আপনাদের সরকারের আসন্ন পতনে মানুষ উল্লাস করবে। ওবায়দুল কাদের সাহেব'রা 'ননসেন্স বক্তৃতা'য় অত্যন্ত পারঙ্গম বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
রিজভী বলেন, গত ১৩ বছর ধরে গোয়েবলসীয় সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে রুপকথা সাজিয়ে ভারি গর্ব করে আসছে। তারা বলে আসছিল দেশ নাকি সিঙ্গাপুর কানাডা অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ মেগা লুটপাটের জন্য অবিশ্বাস্য ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, স্ফীত করে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছিল সরকারি উন্নয়নের গল্পে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি-বর্তমান বাংলাদেশে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শুন্য, দেশের বিকাশমান তৈরী পোশাক শিল্পের বিপর্যয়, দেশের বাইরের ক্রেতারা রপ্তানী আদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত করছেন, রেমিট্যান্সে বিশাল ঘাটতি, চলতি হিসাবে ভারসাম্যহীনতা, রাজস্ব আয় ধ্বসে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমতে কমতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিরাজ করছে এখন সর্বকালের নজীরবিহীন নৈরাজ্য।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রোল মডেলের হাতে এখন ভিক্ষার থালা। শেখ হাসিনা তার ভয়াবহ বিপদ বুঝতে পারছেন। সে জন্যেই মুখে নানারকম বড়াই করলেও, ঋণের জন্য অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আইএমএফ, এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের দুয়ারে দুয়ারে পাঠাচ্ছেন। জনগনকে এখন প্রতিদিন কৃচ্ছতা সাধনের বাণী শোনাচ্ছেন। বিদেশী পত্রিকায় প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে "চরম সঙ্কটে বাংলাদেশের অর্থনীতি", শ্রীলংকার পরিণতির দিকে এগুচ্ছে। আমদানি বৃদ্ধি পেলেও বাড়ছে না রফতানি এবং রফতানি আয়। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠালে প্রবাসীদের দূতাবাসের সেবা বন্ধের হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশ দুতাবাস সমুহের এই নোটিশে বলা হয়েছে, যথাযথ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে হবে। অন্যথায় পাসপোর্ট ও কনস্যুলার সেবা প্রাপ্তি বিলম্বিত করা হবে। ডলার সংকটের কারণে ডিজেল কেনা যাচ্ছে না। ডিজেলের অভাবে অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এখন তীব্র তাপদাহের সময়ে লোডশেডিং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ১ ঘন্টার কথা বলে এখন গড়ে সারাদেশে ৭/৮ ঘন্টার বেশী লোডশেডিং করা হচ্ছে। গ্রামের অবস্থা আরো শোচনীয়। ডলার সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এলপিজি গ্যাস নিয়মিত কেনা যাচ্ছেনা। বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। সংকট বাড়ছে সিলিন্ডার গ্যাসে। বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ হবার উপক্রম। লোড শেডিংয়ের জন্য ওয়াসার পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ডলার সংকটের জের ধরে ব্যাংকে ৯৫ টাকার ডলার খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১১৬ টাকায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি আইএমএফ প্রধানের বক্তব্যের সূত্র ধরে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির শিকার হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। এতে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্বৃতি দিয়ে বলা হয়, মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভের জন্ম দেয়, যে কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট পালিয়ে যান।
তিনি আরোও বলেন, এই নিশিরাতের সরকার দেশের অর্থনীতি শেষ করেছেন। এটি চোরের দেশ, ডাকাতের দেশ, গুম খুনের দেশ, ব্যাংক লুটের দেশ, ভোট চোরের দেশ, নারী ধর্ষণের দেশ হিসেবে এরা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পরিচয় দিতে চাচ্ছে। তাদের চৌর্যবৃত্তির কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে তারা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট করছেন। চুরিতন্ত্রই হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রদর্শণ। মিথ্যা বলাই আওয়ামী লীগের জীবিকা উপার্জনের একমাত্র পন্থা। লুটেরা সরকার আর তার দোসরদের অর্থ এবং ক্ষমতা লিপ্সার কারণে দেশ আজ এক গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যে দেশে অলিগার্কদের স্বার্থে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারিত কিংবা আইন প্রণীত হয়, সেখানে এটাই অনিবার্য পরিণতি। ঘরে ঘরে এখন শ্লোগান শোনা যাচ্ছে-"চারিদিকে উন্নতি, সন্ধ্যা হলেই মোমবাতি।"