জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি 'মরার ওপরে খাড়ার ঘা' : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১১ পিএম, ৬ আগস্ট,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:২৮ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি 'মরার ওপরে খাড়ার ঘা' উল্লেখ করে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে 'জেগে উঠা'র ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার (০৬ আগস্ট) সকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ছাত্র সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই আহবান জানান।
তিনি বলেন, ''জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি একটা ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে সমগ্র দেশের অর্থনীতির উপরে, এটা বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। আর সময় নেই। আমাদের সকলকে জেগে উঠতে হবে, জেগে উঠে এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন আমরা আজকে সেই লক্ষ্যে আরো দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি। ছাত্র দলের এই সমাবেশ থেকে আমি আহবান জানাতে চাই, সকল ছাত্রদেরকে, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে আপনারা ঐক্য গড়ে তুলুন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে আহবান জানাতে চাই, আসুন আজকে জাতির প্রয়োজনে, আমাদের ভবিষ্যতে প্রজন্মের প্রয়োজনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ, অগণতান্ত্রিক, দানবীয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগনের পার্লামেন্ট ও জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।"
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ''এই জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়, পরিবহন ভাড়া। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল-ডাল-আটা-তেল আবার দ্বিগুন থেকে দ্বিগুন হয়ে যাবে। মাঝ খান থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কে? ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের সাধারণ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়। এভাবে বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সোয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আজকে সকালেই দেখলাম, কাঁচা মরিচের কেজি তিন'শ টাকা। এই যে মানুষের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে, মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আজকে আমরা অন্যায়-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার, এই সরকার আজকে সবচেয়ে ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। তারা আজকে বাংলাদেশের সমস্ত অর্জনগুলোকে কেড়ে নিচ্ছে। সেজন্যই এদেরকে ক্ষমতায় থেকে সরিয়ে দেয়া-এটাই হচ্ছে একমাত্র দেশপ্রেমিকের কাজ।"
তিনি বলেন, ''সরকার আইএমএফ'এর (ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড) ঋণ চেয়েছে প্রায় ৪'শ কোটি ডলার। কারণ তারা এতো মিথ্যাচার করে এসেছে যে, রিজার্ভে এতো টাকা আছে, এতো ডলার জমা আছে তাদের কোনো চিন্তা কারণ নেই। আজকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির কাছে ডলার ঋণ চেয়েছে। আইএমএফের ডলার ঋনের শর্ত খুব শক্ত। তারা বলেছে যে, কোথাও কোন অধিক ব্যয় করা যাবে না.... তারা বলেছে, আজকে যেসব সমস্ত খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে সেই ভুর্তকিগুলো প্রত্যাহার করা হোক।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে তারা (সরকার) বলে যে, চক্রান্ত। চাক্রান্ত তো করেন আপনারা। বার বার বলেছি যে, কে চক্রান্ত করছে বলেন। আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জনগনের কাছে যাচ্ছি এবং তাদেরকে নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব। কারণ আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। আমরা সেই বাংলাদেশ ফিরে পেতে চাই যে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বপ্ন দেখেছিলাম এটা সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সেই বাংলাদেশে আমরা ফিরে যেতে চাই। সেজন্য আমাদের নেতা বলেছেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদেরকে সংগঠিত করে, জনগনকে সংগঠিত করে, সকল রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে আমরা সক্ষম হবো।"
তাহলেই 'নুরে আলম ও আবদুর রহিমের যে রক্ত সেই রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব' বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় ভোলায় পুলিশের গুলিতে জেলা সভাপতি নুরে আলমের মৃত্যুর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্র দলের উদ্যোগে ঢাকায় এই সমাবেশ হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দুইটার অধিক সময় পর্যন্ত এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশের ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মঞ্চের পাশের সড়কের সকালের দিকে কিছুক্ষন যান চলাচল করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
এতে ছাত্রদল মহানগর উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে সমবেত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় থেকে নয়া পল্টনে কার্যালয়ের সামনে ছাত্র দলের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ছাত্র সমাবেশটি সরব হয়ে উঠে। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে 'বুকে আমরা ভাই কবরে, খুনি কেনো বাইরে' এই বক্তব্য লেখা কাফনের কাপড় পড়ে তাদের প্রতিবাদ জানায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ''নুরে আলম ও আবদুল রহিম জীবন দিলো কেনো? জনগনের দাবি আদায় করতে গিয়ে। এই সরকারের আন্দোলনের সফল করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমার শেষ কথা, হঠাও হাসিনা, বাঁচাও দেশ। জনগনের বাংলাদেশ। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।"
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পরিচালনায় ছাত্র সমাবেশে বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম আলীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার হোসেন প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ উপলক্ষে ব্যাপক পুলিশ ও সাদা পোষাকের সদস্য মোতায়েন দেখা গেছে সমাবেশের দুই প্রান্তে।