ক্রয় মূল্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৭ পিএম, ৪ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪৪ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটি অফ-সাইট সুপারভিশন ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোম্পানির শেয়ার ধারণের বিষয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রয় মূল্যকেই ‘বাজারমূল্য’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর আগে গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণে ক্রয় মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
বর্তমান ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ এটা হবে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। শেয়ারের ধারণের মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। এখানেই দেখা দেয় বিপত্তি। ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে থেকে শেয়ার কিনলেও তার দাম বেড়ে গেলে বাজারমূল্যের ভিত্তিকে বিনিয়োগ গণনার কারণে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। ফলে দাম বাড়লেই ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে দরপতন হয়। এর কারণে শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি। তবে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি গভর্নরের দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৮ জুলাই বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজারদরের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেয়ার বিষয়ে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠির প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি দেয়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা জারি করার মাধ্যমে এ বিষয়ে সব জটিলতা নিরসন হলো।
এর আগে গত রোববার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানান, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব বাজার মূল্যের বদলে ক্রয় মূল্যে হচ্ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকের এক্সপোজারের হিসাব বাজার মূল্যের বদলে ক্রয় মূল্যে করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এ সংক্রান্ত বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন, আমি ছিলাম, গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। আমরা আলাপ আলোচনা করেই সব ঠিক করেছি। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা প্রসিডিউর। আমাদের আলোচনা হয়েছে, হয়ে যাবে। আমরা তিনজনই একমত।’
তিনি আরও বলেন, এই গভর্নর যখন সচিব ছিলেন, তখন ফাইলটা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ওনার সুপারিশ নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকে ফাইল যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরের লেভেল ঠিক ছিল। কারণ ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। কিন্তু ওখানে (বাংলাদেশ ব্যাংক) যাওয়ার পর জুনিয়র অফিসার কেউ হয় তো নেগেটিভ দিয়ে ফাইলটা এমনভাবে কারেছিলেন, যাতে গভর্নর করতে পারেননি। যাই হোক নতুন গভর্নর আসার দুদিন পরেই আমরা ওনার সঙ্গে দেখা করি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন জাস্ট এটা প্রসিডিউরে আছে।